খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর হাইকোর্টের স্থিতি আদেশ উপেক্ষা করে নিয়োগ কার্যক্রম সমাপ্তি অভিযোগ সংবাদ সম্মেলন করেছে খাগড়াছড়ি জেলা সুষম উন্নয়ন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি। খাগড়াছড়ি পৌর সম্মেলন ক্ষকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগের নানা অসংগতির বিষয় তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ ও সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য লিখিত পাঠ করেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি জেলা সুষম উন্নয়ন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক চঞ্চুমনি চাকমা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনটির সদস্য সচিব খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকুল আলম, সদস্য পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা, বর্মাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান হরিমন মোহন চাকমা প্রমূখ। লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ঘুষ বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং টাকার মাপকাঠিতে মেধাবীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। তাই দুর্নীতির অনিয়মের অভিযোগ এনে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ইং তারিখে হাইকোর্ট থেকে ১৩৩৬২ নং পিটিশন দাখিল করলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থিতি অবস্থা জারি করলেও তা মানছেনা প্রতিষ্ঠানটি।
কিন্তু সে স্থিতি আদেশ উপেক্ষা করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা নিয়োগ কমিটি ২১সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে রাতে গোপনে শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সরকারি বন্ধের দিন সকল নিয়ম অমান্য করে পরিষদ সভার নিয়মতান্ত্রিক অনুমোদন ছাড়া নিয়োগের চুড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ ও নিয়োগপত্র প্রদান করে আদালত অবমাননা করেছে বলে অভিযোগ তুলেন। এ সময় এক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের চাকরী নেওয়ারও অভিযোগ তুলেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার আশ্রফ নামক এক মুক্তিযোদ্ধা।
এছাড়াও তড়িঘড়ি করে সরকারি বন্ধের সময়ে দিনরাত কাজ করে তাদের মনোনিত প্রার্থীদের পাস করায় এবং অনয়িমের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন বলে অভিযোগ করা হয়। এ সময় অভিযোগ বলা হয়, নিয়ম থাকলেও সিভিল সার্জনের ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া নিয়োগকৃতদের কৌশলে যোগদান দেখানোর জন্য উক্ত কমিটির সংশ্লিষ্টদের আদেশে তারা কর্মস্থলে অবৈধ ভাবে যোগদান করেন। মুলত অবৈধ প্রক্রিয়ায় অবৈধ নিয়োগ বলে এ কার্যক্রমকে সম্পুন্ন অবৈধ বলে সংগঠনটি অভিযোগ তুলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম তদন্তে মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি এসে পৌছে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির তদন্ত কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে নেতৃবৃন্দরা জানান। এরপর সঠিক তদন্ত না হলে এবং এ নিয়োগ প্রক্রিয়া বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হবে বলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা হুশিয়ারী জানান। সংগঠনটির সদস্য সচিব খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকুল আলম বলেন, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ দলের নাম ভাঙ্গিয়ে দুর্নীতিবাজদের পর্ণবাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে আবারো ১৮৬ জনের নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকারা চেষ্টা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ নিয়োগে অযোগ্য ব্যাক্তিদের টাকার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নিয়োগে অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটির কাজ শুরু: খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাসহ নানা অনিয়মর অভিযোগে গঠিত তদন্তকমিটি কাজ শুরু করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কমিটির আহ্বায়ক মানিক লাল বণিকের নেতৃত্বে কমিটির অপর সদস্যরা বুধবার (৮ অক্টোবর) জেলা পরিষদে নিয়োগ কমিটির নিয়োগ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দেখেন। কমিটি অপর দুই সদস্য হলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব কাজী মো: আনোয়ারুল হাকিম ও সিনিয়র সহকারী সচিব মকিমা বেগম।
উল্লেখ যে, গত ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অভিযোগে জেলা সুষম উন্নয়ন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করে। এ কমিটি জেলা পরিষদ ঘেরাও ও হরতালসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগ তদন্তে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।