চট্টগ্রামে আইনজীবী বাপ্পী হত্যা: কুমিল্লা থেকে সাবেক স্ত্রী সহ ৬ জন গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ  চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া বড় মিয়া মসজিদ এলাকায় তরুণ আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনার সাথে  জড়িত থাকার সন্দেহে তার কথিত সাবেক স্ত্রী রাশেদা বেগমসহ ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আজ সোমাবার সকালে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম শহর থেকে তাদের আটক করা হয় বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমা জানান , সোমবার সকালে রাশেদা ও হুমায়ন নামে দুজনকে কুমিল্লা থেকে আটক করা হয়েছে। এরপর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুপুরে নগরীর ইপিজেড এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরো চারজনকে আটক করা হয়েছে, যারা হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত।
উল্লেখ্য গত শনিবার সকালে আইনজীবি মো. ওমর ফারুক বাপ্পীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ নগরীর বাকলিয়ার বড় মিয়া মসজিদের সামনে একটি ভবনের নীচ তলা থেকে। তার হাত-পা ও মুখ বাধাছিল। এবং পুরুষাঙ্গ কাটা ছিল। পুলিশের ধারণা বাপ্পীকে নির্যাতন চালিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় শনিবার রাতে এই ঘটনায় বাপ্পীর বাবা বাদি হয়ে নগরীর চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে গ্রেপ্তারকৃত কথিত স্ত্রী রাশেদার শিকারোক্তি দিয়েছেন স্বীকৃতি না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে আইনজীবী বাপ্পীকে খুন করেন।

জানাগেছে মাদক মামলার আসামি দেলোয়ার হোসেন ছিলেন আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীর মক্কেল।  দেলোয়ার জেলে যাবার পর তার জামিন নিতে গিয়ে স্ত্রী রাশেদা যোগাযোগ করেন বাপ্পীর সঙ্গে।  সেই সম্পর্কের সূত্রে বাপ্পী গোপনে বিয়ে করেন রাশেদাকে, কিন্তু স্বীকৃতি দেননি।  সম্প্রতি বাপ্পীকে বিয়ে দেওয়ার জন্য তার পরিবার মেয়ে খুঁজছিল।  বিষয়টি শুনে রাশেদা সামাজিক ও পারিবারিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন।

বারবার চেষ্টা করেও বাপ্পীর কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায় করতে না পেরে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেন রাশেদা।  কাবিননামার টাকা বাড়িয়ে বাপ্পীকে বাধ্য করার কৌশল নেন।  সেই কৌশল বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বন্ধু হুমায়ূনকে নিয়ে বাপ্পীকে খুন করে ফেলেন রাশেদা, সঙ্গে ছিলেন আরো চারজন।
বাপ্পী খুনের ঘটনায় রাশেদা বেগমসহ (২৭) ছয়জনকে আটকের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুনের কারণ সম্পর্কে বলেছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মেট্রো) মো.মঈন উদ্দিন।

আটক হওয়া বাকি পাঁচজন হলেন, হুমায়ূন রশীদ (২৮), আল-আমিন (২৮), মো.পারভেজ প্রকাশ আলী (২৪), আকবর হোসেন প্রকাশ রুবেল (২৩) এবং জাকির হোসেন প্রকাশ মোল্লা জাকির (৩৫)। পিবিআই এই হত্যাকান্ডকে পূর্বপরিকল্পিত বলে জানালেও রাশেদা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন,বাপ্পীকে খুনের কোন পরিকল্পনা তার ছিল না।  বন্ধু হুমায়ূনের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে ভয় দেখিয়ে কাবিননামার টাকা ২ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা করার পরিকল্পনা তারা করেছিল।
‘হুমায়ূন তিন বছর ধরে আমার বন্ধু।  আমি তাকে বলেছি, বাপ্পীর জন্য তো মেয়ে খুঁজছে, আমি এখন কি করব ? তখন হুমায়ূন আমাকে পরামর্শ দিয়েছে কাবিননামার টাকা বাড়িয়ে নিতে পারলে বাপ্পী আমাকে মেনে নেবে।  তখন আমরা বাপ্পীকে ভয় দেখানোর পরিকল্পনা করি। ’ বলেন রাশেদা।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন বলেন, বাপ্পী গোপনে বিয়ে করে রাশেদাকে স্বীকৃতি দেননি।  তিনি রাশেদার সঙ্গে সংসার করতে চান না।
আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীর খুনিদের বিচার দাবিতে সোমবার চট্টগ্রাম আদালতে কর্মবিরতি দিয়ে মৌন মিছিল করে তার সহকর্মীরা।