চীনে শিশুদের মুসলিম নাম বদলে বাধ্য করা হচ্ছে

চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম শিশুদের ‘ধর্মীয়’ বা ইসলামি নাম পরিবর্তনে বাধ্য করছে স্থানীয় প্রশাসন। ধর্মীয় নামের অজুহাতে মূলত আরবি নামের ওপরই নামছে খড়গ। এ ছাড়া সম্প্রতি স্থানীয় মুসলিমদের জোর করে নাস্তিক্যবাদী কমিউনিস্ট পার্টির মিছিলে নেয়ার খবর পাওয়া গেছে।

রেডিও ফ্রি এশিয়ার খবরে বলা হয়েছে, চলতি রমজান মাসে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের মুসলিম নাম পাল্টানোর আদেশ দিয়েছে চীনের কিছু এলাকার প্রশাসন। স্থানীয় পুলিশের বাছাইয়ে ‘অতি ধর্মীয়’ হিসেবে সাব্যস্ত এসব নাম পাল্টানোর আদেশ দেয়া হচ্ছে শিশুদের অভিভাবকদের।

এর আগে গত এপ্রিলে চীনে জিহাদ, ইমাম, সাদ্দাম, ইসলাম, মদিনা, আরাফাত, কুরআন, মক্কা, হজসহ ১৫টি নাম রাখার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কমিউনিস্ট পার্টির প্রশাসন।

কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এসব আরবি নাম ‘ধর্মীয়’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর নতুন এই আদেশে বলা হয়েছে, পুলিশ ১৬ বছরের নিচে যাদের নাম ধর্মীয় হিসেবে চিহ্নিত করবে তাদের অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার আগে তা পরিবর্তন করতে হবে।

১৬ বছর বয়স হলে চীনে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয়।

একই আদেশের মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির সমাবেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের উপস্থিত হতে বাধ্য করা হয়। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আনুগত্য প্রকাশের নিদর্শন হিসেবে জিনজিয়াং প্রদেশে ৫০ হাজার পৃথক সমাবেশ করেছে সরকার।

গত ২৯ মে জিনজিয়াংয়ের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের বেশি লোক এসব সমাবেশে একত্র হয়ে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে বলে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। আর অফিসিয়ালি নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী এই পার্টির প্রতি অনুগত হতেই চাপ প্রয়োগ করে মুসলিমদের উপস্থিত করা হয় এসব সমাবেশে।

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানকার মুসলিমরা বেশিরভাগই তুর্কীয় বংশোদ্ভূত উইঘুর জাতিগোষ্ঠীর। প্রায়ই অঞ্চলটিতে জাতিগত সহিংসতার শিকার হয় মুসলিমরা।

চীনের অভিযোগ, জিনজিয়াংয়ের মুসলিমদের মাঝে সক্রিয় রয়েছে আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী সংগঠন। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছে, জিনজিয়াংয়ে স্থানীয় আক্রোশের কারণেই মুসলিমদের ওপর একের পর এক জাতিগত হামলা হচ্ছে। কমিউনিস্ট পার্টির সমাবেশে প্রকাশিত বিভিন্ন ছবিতে সমাবেশের পাশে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে।

জিনজিয়াং বিষয়ক গবেষক ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর মাইকেল কার্ক বলেন, ‘এই সমাবেশগুলো ছিল ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য।
এতে উপস্থিত ছিল জিনজিয়াংয়ের হান মুসলিমরা। এটি মূলত রাষ্ট্রের ক্ষমতার প্রদর্শনী। কিন্তু এ ধরনের সমাবেশে উইঘুর মুসলিমরা উপস্থিত থাকবে তা ভাবা যায় না। তারা এর বিরোধিতা করবে এটিই ছিল নিয়ম’।

সূত্র : গার্ডিয়ান