রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির আত্মহত্যা প্ররোচণা মামলার চার্জশিটে জবানবন্দির নামে পুলিশ মিথ্য, অসত্য ও ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে বলে দাবী করেছেন বিভাগের শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার সময় গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবী করেন বিভাগের সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে।
লিখিত বক্তব্যে সভাপতি বলেন, ‘২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও আমাদের সহকর্মী জুবেরী ভবনে অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর পরের দিন তার ভাই বাদী হয়ে মতিহার থানায় একটি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা করে। বিভাগের সহকর্মী হিসেবে প্রথম থেকেই আমরা এই তদন্তের সুরহা হওয়ার জন্য তাগিদা দিয়ে আসছিলাম। এক বছর পরে হলেও খুব সম্প্রতি পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম ন্যায় বিচার পাবো। কিন্তু মামলার চার্জশিটে ৭ জন শিক্ষকের নামে ১৬১ ধারায় যে জবানবন্দি দাখিল করা হয়েছে তা সত্য নয়, নানা রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য সহযোগে তা উপস্থাপন করা হয়েছে। বন্তুত আমরা কেউ কোনো জবানবন্দি দেই নাই, পুলিশ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের কারো কারো সাথে কথা বলেছেন, কারো সাতে একেবারেই বলেননি। অথচ ৭জন শিক্ষকের নামে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি চার্জশিটের সাথে দায়ের করা হয়েছ। আমরা পুলিশের কাছে যা বলেনি বা দাবী করেনি এমন অনেক মনগড়া তথ্য দিয়ে এই জবানবন্দি সাজানো হয়েছে।
এসময় প্রদীপ কুমার পান্ডে বলেন, ‘পুলিশ চার্জশিটে মামলার সুষ্ঠ তদন্তের দিকে নজর না দিয়ে বরং মিথ্য জবানবন্দি দিয়ে আমাদের সহকর্মীদেরকে অসম্মানিত ও হেয় করেছেন। তাই আমরা এই ধরণের অনাকাঙ্খিত প্রচেষ্টার নিন্দা জানাই; একইসাথে পুলিশি অনুসন্ধানে প্রাপ্ত প্রকৃত সত্য উপস্থাপনের দাবী জানাই।’
সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মামলার বাদী-বিবাদীর এসব বিষয়ে নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না। আমরা এতটুকুই বলতে চাই যে, ১৬১ ধারায় পুলিশ আমাদের যে জাবানবন্দি চার্জশিটে উল্লেখ করেছে, তা সত্য নয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সহযোগী অধ্যাপক মশিহুর রহমান, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী অধ্যাপক কাজী মামুন হয়দার প্রমুখ।
আর আগে সকাল ১১টার দিকে আকতার জাহানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদ রিন্টুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে ও সহযোগী অধ্যপক মশিহুর রহমান। মানববন্ধনে বিভাগের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে বিভাগের ক্লাস রুমে আকতার জাহান জলিকে নিয়ে একটি স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ক্লাব জুবেরী ভবনে আকতার জাহান জলির নিজ কক্ষ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এঘটনার একদিন পরে জলির ছোট ভাই কামরুল হাসান রতন আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের নামে মামলা দায়ের করেন। এর ঠিক প্রায় বছর খানিক পরে গত ২৫ আগস্ট তারিখে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ব্রজগোপাল কর্মকার রাজশাহী মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। চার্জশিটে গনযোগাযোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আতিকুর রহমান রাজার বিরুদ্ধে জলির আত্মহত্যার প্ররোচনা দেবার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে।
এর আগে ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর জলির আত্মহত্যার ঘটনায় আতিকুর রহমানকে প্ররোচনার দায়ে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৫ নভেম্বর বিকালে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ‘আকতার জাহানের সঙ্গে আতিকুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আকতার জাহানের মৃত্যুর ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। আতিকুর রহমান চাইলেই তাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারতেন।’ গ্রেফতার থাকায় গত ২৯ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আতিকুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে গত ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে শুনানি শেষে আদালত তাকে জামিনের আদেশ দেন।