জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে শপথ গ্রহণের আহ্বান : শোক দিবসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উদ্যোগে ১৫ আগস্ট,  সোমবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন উপলক্ষে বিকেলে খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল, প্রকৌশলী সন্তানদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন ও  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রচনা প্রতিযোগিতা এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মাননীয় মেয়র জনাব আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী  সাদেক মোহাম্মদ চৌধুরী’র সভাপতিত্বে কেন্দ্রের সম্মানী সম্পাদক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার শুরুতে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি কেন্দ্রের  চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যানদ্বয়, সম্মানী সম্পাদককে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি জনাব আ.জ.ম নাছির উদ্দীন তাঁর বক্তব্যে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ এখনও পশ্চিম পাকিস্তানীদের পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ থাকত হত। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কিশোর বয়স থেকে যে স্বাধীনচেতা মনোভাব লালন করতেন তা ধীরে ধীরে এক সময় তাঁকে পুরো বাঙালি জাতির ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ধাবিত করেছিল। অনেকবার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও অন্যায় ও অসত্যের কাছে বঙ্গবন্ধু কখনো মাথা নোয়াননি এবং আপোষ করেননি। প্রধান অতিথি বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তাঁর পঞ্চান্ন বছর জীবনের প্রায় তের বছর কারাগারের অন্ধ প্রকোস্টে কাটাতে হয়েছিল।

বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মৃত্যুকে তুচ্ছ করে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেছিলেন “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।  বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ঘোষনা, দিক নির্দেশনায় এবং তাঁরই নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। প্রধান অতিথি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরে যুদ্ধ বিধস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠন কাজে হাত দিয়েছিলেন পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছিছিলেন ঠিক তখনই একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতাকারী প্রতিক্রিয়াশীল এবং সা¤্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নীল নকশা আাঁকে। প্রধান অতিথি আরো বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও প্রতিক্রিয়াশীল এবং সা¤্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শ থেকে বাঙালি জাতিকে বিচ্যুত করতে পারেনি। প্রধান অতিথি জনাব আ.জ.ম নাছির উদ্দীন শুধু সরকার করে দেবে এধরনের মনোভাব পোষণ না করে একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নাগরিক দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে দেশকে উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হলে জাতির জনকের আত্মা শান্তি পাবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি জাতির জনকের অসমাপ্ত কর্মসূচি শোষনহীন, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মসূচি সফল করার লক্ষে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান। প্রধান অতিথি জাতির জনকের ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকীতে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে শপথ গ্রহণের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। আলোচনা সভায় বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, জাতির জনকের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিহত করতে হবে। বর্তমান প্রধান মন্ত্রী ও সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সভায় বক্তারা প্রতিটি নাগরিককে জাতির জনকের প্রতিটি কর্ম ও দেশের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরারও আহ্বান জানান। বক্তারা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক নেতা হিসেবে যেমন প্রতিটি কর্মসূচিতে নির্ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে বাঙালি জাতিকে ধীরে ধীরে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পথে নিয়ে গিয়েছিলেন ঠিক তেমনি স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেও রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতিটি কর্মকান্ডে সঠিক সিদ্ধান্ত ও দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রের ভাইস-চেয়ারম্যান (একা. এন্ড এইচআরডি) প্রকৌশলী এম.এ রশীদ এবং কেন্দ্রের ভাইস-চেয়ারম্যান (এডমিন. প্রফেশ. এন্ড এসডব্লিউ) প্রকৌশলী উদয় শেখর দত্ত,  কেন্দ্রের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এম. শাহজাহান, প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন, কাউন্সিল সদস্য প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, প্রকৌশলী মোঃ কামাল উদ্দিন, প্রকৌশলী মোঃ মাইনউদ্দিন জুয়েল এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এর পরিচালক জনাব মাহফুজুল হক শাহ চৌধুরী প্রমুখ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকী উদযাপনের কর্মসূচি হিসেবে ১৫ই আগস্ট বিকেলে খতমে কোরআন, বাদ আছর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও সন্ধ্যায় জাতির জনকের জীবন ভিত্তিক প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রকৌশলী পরিবারের ক্ষুদে শিল্পীদের চিত্রাঙ্কন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও উপস্থিত সবার মাঝে তবরুক বিতরণ করা হয়।