তীব্র গরম এবং সীমাহীন লোডশেডিং-এ অতিষ্ঠ চট্টগ্রাম নগরবাসী

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: একদিকে প্রচন্ড গরম অন্য দিকে সীমাহীন লোডশেডিং চট্টগ্রামের জনজীবনকে অস্থির করে তুলেছে। তীব্র গরমের মাঝে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জীবনযাত্রা। গ্যাসের অভাবে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদনে ধস নামা এবং জাতীয় গ্রীড থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় লোডশেডিং বেড়ে গেছে বলে জানান পিডিবি।

চট্টগ্রামে এখন গড়ে ২শ’ থেকে আড়াইশ মেগাওয়াট লোডশেডিং চলছে। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে তা বিদ্যুৎ বিভাগও বলতে পারছে না।
পিডিবির দাবী গ্যাস সংকটে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামের বেশিরভাগ সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

এর ফলে গ্রীষ্মের দাবদাহে বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে জাতীয় গ্রিড ও বেসরকারি কেন্দ্র নির্ভরতায় ঝুঁকছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সরকারি কেন্দ্রে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না হলে রমজানে লোডশেডিংয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানাগেছে, প্রতিদিন চট্টগ্রামে যে পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে তার অর্ধেক যোগান দিতে পারছে সা পিডিবি। ফলে লোড শেডিং এর মাত্রা বেড়ে গেছে।
সূত্র মতে, গতকাল ২৩ মে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯৩৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে চট্টগ্রামের কেন্দ্রগুলো থেকে (সরকারি-বেসরকারি) পাওয়া গেছে ৫০৯ মেগাওয়াট। বাকি ৪২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হয়; কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ না পাওয়ায় ওই দিন চট্টগ্রামে অনেক শিল্পকারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়। পর্যাপ্ত সরবরাহের অভাবে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রায় প্রতিদিনই কয়েক ঘণ্টা বিদুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখছে পিডিবি।

পিডিবি’র মতে চট্টগ্রামে সরকারি ও বেসরকারি ১৪টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। দৈনিক ৬০০ থেকে ৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। জাতীয় গ্রীড থেকে পাওয়া হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট।

গ্যাসের অভাবে বর্তমানে চট্টগ্রামের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউনিট-১ ও একই উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট ২-এর উৎপাদন একমাস ধরে বন্ধ রয়েছে। প্রায় একই সময় ধরে পটিয়া শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬০ মেগাওয়াট ইউনিটটিও বন্ধ রয়েছে। হ্রদের পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে দুটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন শিকলবাহা ডুয়েল ফুলিং ইউনিট ও ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন শিকলবাহা পিকিং ইউনিট থেকে স্বল্প পরিসরে বিদুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এ ছাড়া কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট থেকে সামান্য পরিমাণে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।

চট্টগ্রামে বিদ্যুতের এই দুরবস্থার জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না পাওয়াকে দায়ী করেছেন পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী (উৎপাদন রাউজান) বিমল কুমার হালদার। তিনি বলেন, গ্যাসের অভাবে রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিট ছাড়া চট্টগ্রামের অন্যসব প্রধান বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। কিন্তু গ্যাসের অভাবে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারছে না। গতকাল এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য গ্যাস পাওয়া গেছে মাত্র ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই গ্যাস দিয়ে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। কিছু দিন আগেও এ ইউনিটে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় এখন উৎপাদন কমে গেছে।

এ প্রসঙ্গে পিডিবি চট্টগ্রাম কার্যালয়ের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রামের বড় বিদুৎকেন্দ্রগুলো গ্যাসনির্ভর। গ্যাস সরবরাহ পাওয়া না গেলে উৎপাদনেও এর প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি পটিয়ার শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রি-কমিশনিং শুরু হওয়ায় গ্যাসের সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এই কেন্দ্রটি পুরোদমে উৎপাদনে গেলে আগের তুলনায় কম গ্যাসে বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তখন আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ বিদুৎ সরবরাহও করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এলএমজি আমদানি শুরু হলে ২০১৮ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গতিশীল হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল চট্টগ্রামের সবোর্চ্চ ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়েছে। সে কারণে এখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী ৩/৪ দিনে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম, তাই গরমে কষ্ট পেতে হবে আরো কয়েক দিন। অনেকেই গরম থেকে বাঁচতে ডাব, শরবতসহ বিভিন্ন পানীয় পান করছেন। এদিকে গরমে পেটের পীড়া, জ্বরসহ ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রিকে মৃদু, ৩৮- এর বেশি থেকে ৪০ ডিগ্রি পযন্ত মাঝারি ও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।