নরসিংদীতে আসামীকে ভিন্ন মামলায় আদালতে প্রেরণ

নরসিংদী প্রতিনিধিঃ  নরসিংদী’তে সদর মডেল থানায় কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয়’র বিরুদ্ধে অভিযুক্ত মামলায় আসামী না দেখিয়ে প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার এক চাঞ্চল্যকর সংবাদ পাওয়া গেছে। সদর উপজেলার শীলমান্দী ইউনিয়নের মধ্য শীলমান্দী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোঃ মোস্তফা মিয়া (৬৫) প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ চুরি’র ঘটনায় একই এলাকার লিয়াকত আলীর ছেলে মনা মিয়া (২৫) সহ অজ্ঞাত ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। এরই প্রেক্ষিতে ২২ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার গভীর রাতে সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক মোঃ মোজাফ্ফর হোসেনসহ এস. আই খালেদ’র নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স এলাকায় পৌঁছে অভিযুক্ত আসামী মনা মিয়াকে গ্রেফতার করে।

সদর মডেল থানা পুলিশ কর্তৃক মাছ চুরির অভিযোগে ধৃত আসামীকে রহস্যজনক কারণে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই আসামী মনা মিয়াকে ভিন্ন মামলায় আদালতে প্রেরণ করার এক বিশ্ময়কর কান্ড ঘটিয়েছে।

অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, সদর উপজেলার শীলমান্দী ইউনিয়নের মধ্য-শীলমান্দী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোঃ মোস্তফা মিয়া’র ছেলে মাসুম মিয়া তাদের ৩টি পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষাবাদের উদ্দেশ্যে বেসিক ব্যাংক, নরসিংদী শাখা থেকে ৬০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ সাপেক্ষে মাছের চাষাবাদ শুরু করে আসছিল। ১৬ নভেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একই এলাকার লিয়াকত আলীর পুত্র মনা মিয়াসহ অজ্ঞাত ৫/৬ জন সঙ্গী নিয়ে পূর্ব-পরিকল্পিত উপায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোঃ মোস্তফা মিয়া’র পুকুর থেকে মাছ চুরিকালে আশেপাশের লোকজন ঘটনা প্রত্যক্ষ করে। পরবর্তীতে আশ-পাশের লোকজনের নিকট থেকে মাছ চুরির ঘটনাটি পুকুরের মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোঃ মোস্তফা মিয়া ও তার পুত্র মাসুম মিয়া জানতে পারে। অভিযুক্ত মনা মিয়া’র নেতৃত্বে তার সহযোগীরা মোস্তফা মিয়ার পুকুর হইতে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ চুরি করেছে। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা মনা মিয়া ও তার সহযোগীদের বিচার করে।

২১ নভেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা’র পুত্র মাসুম মিয়া চাষাবাদকৃত মাছের পুকুর পাড়ে পৌঁছে অভিযুক্ত আসামী মনা মিয়াকে ১ ব্যাগ মাছসহ ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। এ সময় আসামী মনা মিয়ার পরিবারের সদস্যরা সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুকুরের মালিক ৭১’র স্বাধীনতাকামী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মিয়া’র পুত্র মাসুম মিয়াকে এলোপাথারী কিল-ঘুষিসহ প্রচন্ড মার-ধোর করে অভিযুক্ত মনা মিয়াকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে একই দিন দুপুর ১২টায় প্রমাণ হিসেবে চুরিকৃত ১ ব্যাগ মাছসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মিয়া সদর মডেল থানায় হাজির হয়ে পুলিশ পরিদর্শক মোজাফফর হোসেন এর নিকট উপরোক্ত ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

পরবর্তীতে ২২ নভেম্বর ২০১৭ ইং তারিখ রাতে পুলিশ পরিদর্শক মোজাফফর হোসেন রাত ১২টায় মোঃ মোস্তফা মিয়ার সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে কথা বলে এস. আই. খালিদসহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযুক্ত মনা মিয়ার বাড়িতে যেয়ে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। পরদিন সকাল ১০টায় স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সৈনিক মোস্তফা মিয়া সদর মডেল থানায় পৌছলে পুলিশ পরিদর্শক মোজাফফর হোসেন ও এস.আই খালিদ অভিযুক্ত আসামী মনা মিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ উঠিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকার চাপ সৃষ্টিসহ হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মিয়া তাদের ওই প্রস্তাবে রাজি না হলে ২৫শে নভেম্বর ২০১৭ থানা পুলিশ রহস্যজনকভাবে প্রকৃত ঘটনাটি আড়াল করতে অভিযুক্ত আসামীকে ভিন্ন মামলায় আদালতে প্রেরণ করে। যার মামলা নং- ৫৬, ধারা- ৪৫৭/৩৮০।

বিশ্ময়কর এ ঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মিয়া আইনের রক্ষক জনগণের সেবায় নিয়োজিত পুলিশ পরিদর্শক মোজাফ্ফরের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার যা ইচ্ছে আমি তা-ই করিয়াছি, আপনি এতে নাক গলাবেন না।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মিয়া পুলিশের বিশ্ময়কর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা আইনের লোকদের শ্রদ্ধা করি। আইনের লোকেরা যদি এমন ব্যবহার করে তাহলে এ দেশে আমরা আর সঠিক বিচার কোথায় পাবো?

স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সৈনিক মোস্তফা মিয়া’র অভিযোগে জানা যায়, সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মোজাফফর হোসেন ও এস.আই খালিদ’র বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন।
অপরদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে আনীত এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মোজাফ্ফর হোসেন ও এস. আই খালেদ এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে তারা কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।

এদিকে আইনের রক্ষক জনগণের সেবায় নিয়োজিত পুলিশ’র বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের ভয়ে ৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সৈনিক মোস্তফা মিয়াসহ তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীণতায় ভোগছে।