প্রধানমন্ত্রী হাওরের দুর্গত মানুষগুলো মমত্বের ছায়া দিলেন বাধঁলেন সেতুবন্ধনে

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত কয়েকটি হাওড় এলাকা রবিবার পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি হাওড় এলাকার বন্যাদুর্গত জনগণের প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধ ও সমবেদনা জানান।’ পরিদর্শনকালীন সময়ে  প্রধানমন্ত্রী অসহায় দুর্গত মানুষকে নিজের বুকে আগলে নিয়ে সাহস জোগান।’ তিনি বলেন আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসাবে আপনাদের কথা দিচ্ছি আমি প্রধানমন্ত্রী থাকি আর নাই থাকি আজীবন আপনাদেও মেয়ে হয়ে আপনাদের পাশে থাকব। হাওরবাসীও সে সময় আবেগ জড়িত কন্ঠে কথা দিলৈও প্রধানমন্ত্রী আমরাও আপনার ডাকে যে কোন সময় আপনার পাশে থাকব আমরাও সর্বদাই প্রস্তুত আমাদেও মেয়ে হিসাবে সুদিনে -দুর্দিনে সাদরে বরণ করে নিতে। এ কথার মধ্য দিয়েই নতুন করে হাওরবাসীর মন জয় করে নিলেন সেতুবন্ধনের বাঁধনে বাঁধলেন হাওরবাসীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ’

রবিবার সকালে বোরো ফসলী ক্ষতিগ্রস্থ শাল্লা উপজেলা সদরের শাহেদ আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে ফসলহারা কৃষক পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শেষে প্রধানমন্ত্রী স্পিডবোটে করে কয়েকটি প্রত্যন্ত হাওড় গ্রামে গিয়ে কৃষক পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে তাদের দুর্ভোগের বিষয়ে খোঁজ খবর নেন।  ওই এলাকাসমূহ পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১শ’টি বন্যাদুর্গত পরিবারের মধ্যে তাঁর নিজস্ব তহবিল থেকে নগদ অর্থ ও চাল বিতরণ করেন। মানুষের দুর্গতি দেখে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন। অপরদিকে দুর্গত মানুষ গণমানুষের নেত্রী প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা পান।’

পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী সাধারন মানুষের সাথে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন। শেখ হাসিনা হাওড় এলাকার শিশুদের কাছে জানতে চান তারা বছরের প্রথমদিন পাঠ্যবই পেয়েছে কিনা, শিশুরা ইতিবাচক জবাব দিয়ে সমস্বরে এক সাথে বলে ‘আমরা বছরের প্রথমদিন পাঠ্যবই পেয়েছি।’ বর্ষাকালে স্কুলগামী শিশুদের চলাচলের সমস্যা অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওড় এলাকা এবং পার্বত্যাঞ্চলে আবাসিক বিদ্যালয় নির্মাণের লক্ষ্যে সরকার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

হাওড় এলাকার ফসলহারানো কৃষক পরিবারের দুর্দশা স্বচক্ষে দেখার জন্য শেখ হাসিনা রাবিবার সকাল ১০টায় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে  শাল্লায়  আসেন। শাল্লা উপজেলার শাহেদ আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হেলিকপ্টার অবতরণ করার আগে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার থেকেই অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বফসল হারানো  উপদ্রত এলাকার পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেন।’ ওই সময় হাওর তীরের কয়েক’শ গ্রামের লোকজন হাওরের উপর প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার দেখে হাত নেড়ে শুছেচ্ছা জানালৈ প্রধামন্ত্রীও লো – প্লাই কওে হেলিক্পটার থেকেই হাত নেড়ে হাওর বাসী শুভ্চ্ছো  জানান। ’

পরে প্রধানমন্ত্রী শাহেদ আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে এক সুধী সমাবেশে ভাষণ দেন। ভাষণে শেষে তিনি ১ হাজার মানুষের মধ্য ত্রাণ ও নগদ অর্থসহায়তা বিতরণ করেন। এদিকে ২০১০  আগাম বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার বোরো ফসলহানীর পর ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর তাহিরপুরের এক কৃষক সমাবেশে নিজে এসে প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের পুন:র্বাসনে ওই সময় ত্রাণ, নগদ অর্থ সহায়তা, কৃষি উপকরণ ও কৃষি কার্ড বিতরন করেছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোরো ফসল হারানো হাওড় অঞ্চল পরিদর্শনকালে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা প্রমুখ তাঁর সঙ্গে ছিলেন।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে চাল ও নগদ টাকা গ্রহণকারী ফসলহারা কৃষকেরা তাদের চরম দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনেকেই আবেগ-আপ্লুত হয়ে পেড়েন ওই সময় প্রধামন্ত্রী নিজের চোখ থেকে জলগড়াতে থাকতে কিন্তু  প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে প্রাপ্তির আনন্দে অর।প সময়ে মধ্যেই কৃষকরা ফসলহারানোর কষ্ট লুকিয়ে রাখতে গিয়ে তাদের অনেকেরই চোখে দেয়া যায় আনন্দঅশ্রু ও নতুসন কওে জেগে উঠার প্রত্যয়।

দুর্গতরা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তাদের ফসল সারা বছরের খোরপোষের একমাত্র এক ফষলী বোরো ধান অতিবৃষ্টি , পাহাড়ি ঢল ও পাউবোর অনিয়ে দুর্নীতির কারনে ঠিকাদার ও পিআইস গণ কোন কোন বেরিবাঁেদ কাজ না করার ও অধিকাংশ হাওরের বেরিবাঁধ নির্মাণের কাজ অসমাপ্ত রাখায় সাম্প্রতিক পানিতে তলিয়ে সম্পূর্ণভাবে বোরো ধান  বিনষ্ট হয়ে গেছে।’

আগাম আকস্মিক ঢলে  দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ হাওড় এলাকা পানিতে তলিয়ে গেলে এখানকার উঠতি বোরো ধান বিনষ্ট হয় এবং এতে এ অঞ্চলের  কয়েক লাখ কৃষক পরিবারের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।’

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার-এই ছয়টি জেলার ৬২টি উপজেলার ৫১৮টি ইউনিয়নের ৮ লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি পরিবার এই আকস্মিক ঢলের কারনে  ক্ষতিগ্রস্থ হয়।’ এর ফলে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির বোরো ধান সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয় এবং ১৮ হাজার ২০৫টি বসত ঘর আংশিক অথবা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য মোট ৫৮৭টি ত্রাণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের মানবিক সহায়তা প্রদানে এ পর্য্যন্ত ৪ হাজার ২২৪ মেট্রিক টন জিআর (বিনামূল্যের চাল) এবং ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জিআর চাল বিতরণ এখন শেষ পর্যায়ে। অপরদিকে ভিজিএফ কর্মসূচিও চালু হয়েছে।

আগামী জুলাই পর্য্যন্ত ভিজিএফ হিসাবে ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারের মধ্যে বিতরণের জন্য মোট ৩২ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামী মৌসুমে বোরো ফসল ওঠা পর্য্যন্ত এই ভিজিএফ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় ৯১ হাজার ৪৪৭ উপকারভোগীর মাঝে ৮২ কোটি ৭ লাখ ৬৮৯ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। উক্ত কর্মসূচির আওতায় ২৭২ কোটি ২৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৮৬ টাকার ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা যায়।##

হাবিব সরোয়ার আজাদ, সিলেট-০১.০৫.১৭