প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জুুগিরথান মন্দির রক্ষায় সরকারি পৃষ্টপোষকতা জরুরি

পত্নীতলায় (নওগাঁ) সংবাদাতা: নওগাঁর পত্নীতলায়কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে ও অবহেলিত ভাবে পড়ে থাকায় বর্তমানে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জুুগিরথান মুন্দিরের স্থাপত্য শিল্প ধ্বসের দ্বারপ্রান্তে। সরকারি ভাবে পেলে এই প্রাচীন ও ঐতিহাসিক মুন্দির ও স্থাপত্যের ধ্বংস হতে রক্ষা পাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

সরেজমিন ঘুরে ও বিভিন্ন সুত্র মতে জানা যায়, উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নের পূর্ব-উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত এই মন্দিরটির। যা জুগিরথান, যুগির ঘোপ ও যুগির ঘোপা নামে পরিচিত। এ স্থাপত্য শিল্পের শিলালিপী, নির্মাণ কালের সময়সূচি বা কোন রাজা-বাদশার কালে নির্মিত তার কোন প্রকার চিহ্ন বা খোদাইকৃত লেখনী নেই। নিখুঁত ইটের গাঁথুনিতে নির্মিত করা এ মন্দির গুলো। একটি বড় ভবন দ্বিতল ও অন্যান্য গুলো এক তলা ভবন। এটি পত্নীতলায় উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর এই মন্দিরের পাশেই অবস্থিত ঘুখসির নামক বিল। এই মন্দিরসহ ঘুখসির বিলের মোট আয়তন প্রায় ৩শ ৬৫ বিঘা। এ বিলে বর্ষা মৌসুমে জেলেদের মাছ ধরার ধূম পড়ে যায়। আর প্রকৃতি প্রেমীদের আগমন ঘটে। বিলে ছোট ও মাঝারী ডিঙ্গি নৌকায় অনেকেই ঘুরে থাকেন। ভূমিদস্যদের মধ্যে এ বিশাল আয়তনের জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। এমতাবস্থায় এ স্থাপত্যে শিল্পকে রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি বলে মত দিয়েছেন সচেতন মহল।

বর্তমানে এ মন্দিরটির প্রধানত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন শেখাই নাথ ও সহযোগি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় মৃত- শ্রী কৃঞ্চের স্ত্রী গোলাপী জঘড় (৪৬) ও শ্রী নকূল চন্দ্র দাস (৭০)। তারা জানান, জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই সেচ্ছায় এ মন্দির দেখা-শুনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী শ্রী সত্য নারায়ণ (৮২) জানান, আমার জ্ঞান বুদ্ধির পর থেকেই দেখেছি এ মন্দিরটি। আগে বিভিন্ন ধরণের মহা মূল্যবান মূর্তি ছিল। যা চুরি হয়ে গেছে। বর্তমানে যা আছে তা রক্ষার জন্য ও এই প্রাচীন স্থাপত্য টিকে রাখতে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।

বর্তমানে এ স্থানে ছোট ও বড় ৫টি মন্দির রয়েছে। মন্দির গুলোতে যে সব মূর্তি রয়েছে-গোরখনাথ, বেমলা, দেবী, শীব, শ্মশ্বান কালী, ভৈরব কালী ও রক্ষাকালী।
ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় উৎসবের অংশ হিসেবে প্রতি বৎসর বঙ্গাব্দ বৈশাখ মাসের চাঁদের ১০ তারিখে ঢাক-ঢোল ও বাদ্রযন্ত্র বাজিয়ে গোরখনাথ পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

আমাইড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: ইসমাইল হোসেন জানান, এই প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জুুগিরথান মুন্দিরের স্থাপত্য বিল্ডিং রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। এটি একটি হিন্দু ধর্মীয়দের পবিত্র স্থান। যা দর্শনীয় স্থান হিসেবে দেশের বিভিন্ন এলাকার লোক আসে থাকেন। তবে, সরকারিভাবে রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও এলাকাটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে, এটি একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্রে গড়ে উঠতে পারে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও হবে।

পত্নীতলায় -ধামইরহাট এলাকার সাংসদ ও মহান জাতীয় সংসদের মাননীয় হুইপ মোঃ শহীদুজ্জামান সরকার (বাবলু) বলেন, আমি প্রথম ওই মন্দিরটি দেখি গত ১৬ মে তারিখে। আমাদের এলাকায় এত বড় ও প্রাচীন ও ঐতিহাসিক মুন্দিরের স্থাপত্য রয়েছে। যা আমি নিজে চোখে না দেখলে জানতাম না !  প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জুুগিরথান মুন্দিরের স্থাপত্য রক্ষা করা জরুরি।

আমি জেনেছি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষকরা জানায়, তাদের ধারণা মতে, এ জুুগিরথান মন্দিরটির স্থাপত্য নির্মাণ করা হয় নাথ সম্প্রদায়ের আমলে।