বিএনপির আপিল খারিজ ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে জেলা বিএনপি অফিসের ভবন

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত জেলা ও নগর বিএনপির কার্যালয় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাথে মামলার রায়ের আপিল খারিজ করে দিয়েছে আদালত। ফলে এ মামলায় আপাতত দৃষ্টিতে জিতে গেল সিটি করপোরেশন। ৩১ জানুয়ারী মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। মামলায় হেরে যাওয়ার কারণে অচিরেই ভাঙা হবে বিএনপির কার্যালয়টি।

৩০ জানুয়ারী সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা যুগ্ম জজ আদালত এ মামলার রায় ঘোষণার ধার্য্য তারিখ ছিল। সেদিন বিকেলে আদালত বিএনপির আপিল খারিজ করে দেন নিশ্চিত করেছেন সিটি করপোরেশনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন। যদিও ওই সময়ে বিএনপি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বোরহানউদ্দিন সরকার জানিয়েছিলেন, মামলার রায়ের তারিখ পেছানো হয়েছে।

সেদিন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, হাজারো টেনশনের মধ্যে এ মামলার রায় নিয়ে মহাটেনশনে রয়েছি। আমরা বিলুপ্ত পৌরসভা থেকে বিএনপি কার্যালয়ের জন্য ভবনের দ্বিতীয় তলা ইজারা নিয়েছি। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন বিএনপি কার্যালয় উচ্ছেদের জন্য যে চিঠি দিয়েছে সেই চিঠিটাই অবৈধ। বেআইনিভাবে আমাদের উচ্ছেদের চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা এ বিষয়টি আদালতকে বলেছি। এছাড়াও আমরা আমাদের কাগজ পত্র সহ বক্তব্য আদালতে সুস্পষ্টভাবে আদালতে তুলে ধরেছি। আমাদের দাবি ছিল সিটি কর্পোরেশন যদি এখানে ভবন তৈরি করে তাহলে করতে পারে তবে আমাদের সাথে বসে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমার স্থান বুুঝিয়ে দিতে হবে এবং আমরা কোন ধরনের খরচ বহন করব না। এ ভবনটিতে আমাদের কোন লাভ নেই। আমরা এখনও রাজী আছি সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে বসে বিষয়টির সমাধানে।

আরো জানা গেছে, গত ২৬জুলাই নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জজ আদালতে বিএনপির মামলাটির শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ২ঘন্টা শুনানি হয়। বিএনপির আইনজীবীরা আদালতে দাবি করেছেন, ভবনটি নতুন করে করা হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিএনপিকে বুঝিয়ে দিতে হবে। আর নতুন ভবন করার পর কোন চার্জ বিএনপি দিবে না। বিএনপিকে উচ্ছেদ করার আগে সিটি কর্পোরেশন বিএনপির সাথে মিটিং করতে হবে। এছাড়াও বেশকয়েকটি দাবি আদালতে উত্থাপন করেছেন বিএনপির আইনজীবীরা। ওই শুনানিতে তৈমূর আলমসহ অর্ধশত বিএনপির আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন যেখানে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক আইনজীবীরা শুনানিতে ছিলেন না। এমনকি জেলা বিএনপি ও নগর বিএনপির শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন না আদালতে।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয় ভেঙ্গে বহুতল ভবন নির্মাণ করা নিয়ে বিপাকে পড়েছে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। নেতারা বলছেন, কার্যালয়টি ভেঙ্গে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণের পর তাদের পুন:স্থাপনের সময়ের মাঝখানের সময়টুকুতে বিপাকে পড়তে হবে বিএনপিকে। কারণ এ সময়টাতে বেশী সক্রিয় হতে হবে আন্দোলন সংগ্রামে। সামনে আসছে জাতীয় নির্বাচন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এর মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেছিলেন, আরো আগে থেকেই কাজ শুরু হলে এখন অনেক খানি কাজ শেষ হয়ে যেত। কিন্তু বিএনপি অহেতুক মামলা করে কালক্ষেপন করেছে।

জানা গেছে, আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগার সংলগ্ন জেলা বিএনপির কার্যালয়ের ভবন ভেঙ্গে সেখানে নয়তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া নেয় নাসিক। আরো আগে থেকেই নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরুর পরিকল্পনা থাকলেও জেলা বিএনপির দায়ের করা একটি মামলার কারণে সেটা বিলম্ভ হয়।

তবে এর আগে আদালত ওই মামলাটি খারিজ করে দেওয়ার পর ৪৮ঘণ্টার মধ্যে দোকান মালিকদের সরে যাওয়ার জন্য সিটি করপোরেশন হতে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। জেলা বিএনপি কার্যালয় যে ভবনটির দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত তার নিচতলায় ৭টি দোকান রয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, তাদের দলীয় কার্যালয়ের পাশে আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগার নির্মাণেই অনেক সময় লেগে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে দলীয় কার্যালয়ের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, ২০১৩ সালের মার্চে জেলা বিএনপির কার্যালয় ও এর নিচ তলাতে অবস্থিত দোকান মালিকদের অনেক আগেই বলা হয়েছে সেখানে ৯তলা বিশিষ্ট মার্কেট ভবন করা হবে। এর মধ্যে এখানকার ভবনে নিচ তলায় যেসব দোকান মালিকেরা রয়েছেন তাদেরকে নতুন ভবনের নিচ তলাতে অনুরূপ আকৃতির দোকান দেওয়া হবে। এছাড়া দ্বিতীয় তলায় থাকা জেলা বিএনপির কার্যালয়টিও অনুরূপ আকৃতির করে দেওয়া হবে। কারণ বিএনপি কার্যালয় ও দোকান মালিকেরা আগেই পজিশন কিনে নিয়েছে। এ কারণেই তাদের ক্রয়কৃত পজিশনের আকৃতি অনুযায়ী নতুন ভবনে জায়গা দেওয়া হবে। ৪ তলার পর করা হবে আবাসিক ফ্ল্যাট বাসা।