মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিলেন : হাওরবাসীদের উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ খালিয়াজুরী কৃষকদের অভয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনারা চিন্তা করবেন না। আগামী ফসল না উঠা পর্যন্ত সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। নেত্রকোনার একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না প্রতিটি মানুষের মাথা গুজার স্থান করে দিব।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হাওর আমাদের মূল্যবান সম্পদ। হাওরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। হাওরের প্রাকৃতিক অবস্থা বিবেচনা করে উন্নয়ন-অবকাঠামোসহ সব ধরনের কাজ করতে হবে। হাওরের একমাত্র ফসলের জন্য নদ-নদী খাল-বিল ও ভরাট হওয়া হাওর খনন করতে হবে।’

অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওর পরিদর্শনে গিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর  ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

তিনি সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে খালিয়াজুরী উপজেলা কলেজ মাঠে ফসলহারা কৃষকদের মাঝে নগদ অর্থসহ বিভিন্নসহায়তা তুলে দেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে করে খালিয়াজুরীতে পৌঁছেন। ১১টা ৬ মিনিট থেকে ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত তিনি হাওরের বিভিন্ন বিষয় ও দুর্গতদের সহায়তা নিয়ে কথা বলেন। প্রায় ৪৪ মিনিটের বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী হাওরে বাঁধ তৈরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টদের প্রতি। হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নানা সহায়তার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারি ব্যাংক কৃষকের ঋণের সুদ অর্ধেক মওকুফ করেছে। স্থগিত করেছে কৃষিঋণ আদায়। আমি শুনেছি এনজিওরা হাওরের দুর্গত কৃষকদের ঋণ আদায়ে চাপ দিচ্ছে। আমি এনজিও ব্যুরোকে নির্দেশ দিচ্ছি যাতে তারা আমার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছ থেকে ঋণ আদায় স্থগিত করে।’

হাওরবাসীর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ঐতিহ্য স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওরের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে যুদ্ধ করে টিকে আছে। প্রতিনিয়ত পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাওরের কৃষক। একমাত্র ফসল চলে গেলে তাদের মধ্যে দুশ্চিস্তা বাড়ে। তিনি বলেন, ‘আপনাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিলেন। আমিও ১৯৭৫ সালের এক রাতে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে এখন আপনাদের মুখে হাসি ফোটানোর কাজ করছি।’

হাওরের কৃষকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না। আগামী ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত আপনাদের সহায়তা অব্যাহত রাখব। আগামী ফসলের জন্য বিনা মূল্যে সার, বীজ ও কৃষি উপকরণ দেয়া হবে। অব্যাহত রাখা হবে অন্যান্য কৃষি ভর্তুকি।’ প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি ইউনিয়নে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি (ওএমএস) সুবিধা পৌঁছে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে যত খাবার নষ্ট হয়েছে তা সরবরাহের নির্দেশনা দেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী ৭০ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ৩০ কেজি চাল ও ১০০০ টাকা করে ত্রাণ দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

ত্রাণ বিতরণ শেষে প্রধানমন্ত্রী বল্লভপুর গ্রামে গিয়ে সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।

মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুর কাদের, দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন।

উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবা উদ্দিন সিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মদ হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মতিউর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক আশ্রাব আলী খান খসরু, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, যুব  ও মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল, আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের পংকজ দেবনাথ, আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল আলম লিটন, সফি আহম্মেদ প্রমুখ।