রাবিতে দাম বেড়েছে খাবারের : সেই তুলনায় বাড়েনি মান

রাবি প্রতিনিধি: চাউলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ডাইনিংয়ে খাবারের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে ডাইনিংয়ে মূল্যবৃদ্ধির এই নতুন নিয়ম চালু করা হয়। দুপুরে খেতে গিয়ে হঠাৎ খাবারের মূল্য বৃদ্ধি করার ক্ষোভে ফেটে পড়েন অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু খাবারের দাম বাড়লেও বাড়েনি সেই তুলনায় মান বলেও অভিযোগ অধিকাংশ  শিক্ষার্থীদের ।

জানা যায়, দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হলে চাউলের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এতে ডাইনিং এ লোকসান হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাধ্যক্ষ কাউন্সিল বরাবর খাবার মূল্যবৃদ্ধির দাবি জানায় ভোজনালয় শ্রমিক ইউনিয়ন। এর প্রেক্ষিতে গত ১২ জুন প্রাধ্যক্ষ কাউন্সিলের আহ্বায়ক ও নবাব আব্দুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বিপুল কুমার বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে গত সোমবার খাবার মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত  গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাধ্যক্ষ কাউন্সিল। হল প্রশাসনের এই হঠকারী সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক  পরিস্থিতি সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাউলের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে ২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রাধ্যক্ষ কাউন্সিলের সভায় ডাইনিং এ দুপুরের খাবার ১৬ থেকে ২০ টাকা এবং রাতের খাবার ১৩ থেকে ১৬ টাকায় বৃদ্ধি করে। ওই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনা প্রকার আলোচনা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন। এবারও একইভাবে খাবার মূল্য বৃদ্ধি করেছে তারা। এতে ডাইনিং থেকে  শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবু বকর অন্তু বলেন, গরুর খাবারের আবার মান কী? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তো আমাদের গরুই মনে করে। তা না হলে বারবার আবাসিক হলগুলোর ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বাড়ালেও মান যে আগের চাইতে বহুগুণ কমেছে সেদিকে কেউ ভ্রƒক্ষেপ করছে না। ডাইনিং এ সবচেয়ে নিম্নমানের চাউল সরবরাহ করা হয়। আর রাজশাহীতে সবজীর দামও বেশি নয়।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান সুমন বলেন, ‘খাবারের মান এতই খারাপ যে জেলখানর কয়েদিরাও এর চাইতে ভালো খাবার পায়। আমাদের টাকায় আমাদের খাবারের ব্যবস্থা হলেও সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে পুষ্টিহীন খাবার খাচ্ছি।’ এর সাথে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী খাবারের মান ও দাম নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ করেন।

খাবারের মান ছাত্রী হলগুলোতে আরও নিম্ন বলে অভিযোগ আবাসিক ছাত্রীদের। মুন্নজান হলের তাসনিম সুপ্তি বলেন, ‘ছাত্র হলের ডাইনিংয়ের তুলনায় আমাদের ডাইনিংয়ের অবস্থা আরও করুণ। যত দিন যাচ্ছে মেয়েদের জন্য খাবার সমস্যা ততই প্রকট আকার ধারণ করছে। ছেলেরা যেখানে-সেখানে খাবার খেতে পারে কিন্তু আমাদের সে সুযোগ না থাকায় ডাইনিংয়েই চোখ বুজে খেতে হয় নতুবা না খেয়ে থাকতে হয়। এখন আবার খাবার মান না বাড়িয়ে মূল্য বৃদ্ধি করেছে প্রশাসন।’ আবাসিক হলগুলোর খাবার মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান বলেন, খাবারের মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ভোজনালয় শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে আলোচনা করে প্রাধ্যক্ষ কাউন্সিল সিদ্ধান্ত  নিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক ভালো বলতে পারবেন।’ এটা প্রভোস্ট কাউন্সিলের একক সিদ্ধান্ত কিনা জানাতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে  মন্তব্য করেন নি।

প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক ও নবাব আব্দুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বিপুল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এতো কমদামে খাবার কোথাও আছে! গত ২০১০ সালে ২৫% ও ২০% হারে দুপুর ও রাতের খাবার মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা ১২% ও ১৫% হারে বাড়িয়ে খাবার মূল্য নির্ধারণ করেছি। যে হারে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য এটাই তো বড় পাওয়া।