রোহিঙ্গা শিবির পরির্দশনে রাখাইনে বর্বর নির্যাতনের বর্ণনা শুনলেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থেকে সেনাদর নিযার্তনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন রোহিঙ্গারা। এসব রোহিঙ্গাদের মুখে নির্যাতনের বর্ণনার কথা শুনলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং হিলি।

গত শনিবার সকাল ৯টায় সময় গাড়ির বহর নিয়ে প্রথমে টেকনাফের দমদমিয়া নেচারপার্ক সংলগ্ন এলাকায় আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৩ শতাধিক পরিবারের মধ্যে থেকে ১০জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের সঙ্গে দেখা করেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার বিভিন্ন পদস্থ কর্তকর্তা ও টেকনাফে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ইনর্চাজ মো. সাইফুল ইসলাম।

নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে ইনর্চাজ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখেন ইয়াং হিলি। এখানে তিনি কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর বিকেল চারটার দিকে তিনি হোয়াইক্যং পুঠিবনিয়া রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি রোহিঙ্গা শিবিরের দল নেতা (মাঝি) ও ১৬জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি বিকেল সাড়ে চারটার দিকে গাড়ির বহর নিয়ে উখিয়ার দিকে চলে যান। তবে ইয়াং হিলি কোনো রোহিঙ্গা শিবিরে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলেননি।

নেচারর্পাকের রোহিঙ্গাদের মুখে মিয়ানমার সেনা ও রাখাইনদের চালানো নির্যাতনের বর্ণনা ধৈর্য্য সহকারে শোনেন ইয়াং হিলি। মিয়ানমারের মংডু শহরের মংনিপাড়ার বাসিন্দা খলিলুর রহমান ও সুধাপাড়ার গৃহিনী জোবেদা খাতুন বলেন, প্রথমে তিনি আমরা কেমন আছি জানতে চান। উত্তরে বলি, মিয়ানমারের চাইতে হাজারোগুন ভালো আছি। কারণ, দেশের সেনারা আমাদের বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন, হত্যা ও নারীদের ধর্ষণ করেছে। কিন্তু এদেশের সেনা সদস্যরা আমাদের খাবার থেকে শুরু করে যাবতীয় সমস্যা-সমাধানে চেষ্টা করে যাচ্ছে। ওই দেশের সঙ্গে এদেশে কোনো ভাবে তুলনা করা যায় না।

মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের পালানোর জন্য সব ধরনের নিযার্তন করেছে। আর, সে দেশের সরকার প্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয় দিয়েছেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্টি জীবন কোনো ভাবে নিরাপদ নয়। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করলে ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তা করা যাবে। তা না হলে রোহিঙ্গাদের যদি ফেরত পাঠাতে হয় এ দেশে গুলি করে মেরে ফেলেন তাতে রোহিঙ্গাদের কোনো ধরনের বিপত্তি থাকবে না। আমরা মরে যেতে চাই কিন্তু আবারো সেদেশে গিয়ে নিযার্তনের মুখে পড়তে চাই না।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াং হিলি বুধবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান এবং গত শুক্রবার দুপুরে তিনি বিশেষ উড়োজাহাজে করে কক্সবাজার আসেন। চলতি মাসে তার মিয়ানমার সফরের কথা থাকলেও সেদেশের নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের পরিবর্তে বাংলাদেশে সফরে আসেন। পাঁচদিন বাংলাদেশে থেকে ২৪ জানুয়ারি তিনি থাইল্যান্ডে সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার ঢল নামেন। রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা অভিযানের কথা বলে সেদেশের সেনাবাহিনী ধরপাকড় চালায়। এ সময় তারা নির্যাতন, বাড়িঘরে আগুন ও গণধর্ষণ চালালে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেন।

সর্বশেষ তথ্য অনুয়ায়ী, গত ২৫ আগস্টের পরে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৯৫০ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এদের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিবিরে রাখা হয়েছে। আগেও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ছিল। সব মিলে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে গত ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতার স্মারক সই হয়। তবে এর মধ্যেই টেকনাফ সীমাস্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।