লেখক- মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন মকুল
পৃথিবীর সকল সৃষ্টি রহস্যের মূলেই হচ্ছে শ্রেষ্ঠত্ব। জ্বিন ও মানবের সকল কল্যাণ এবং চাহিদা পূরণের লক্ষেই সুন্দরতম ভাবে সৃষ্টিকর্তা অপরূপ মহিমাময় ধরনীকে সজ্জিত করেছেন সৃষ্টির মহত্ব দিয়ে। দৃষ্টির গোচরে ও অগোচর সর্ববৃহৎ থেকে অনু-পরমানু পর্যন্ত বিস্তৃত করেছেন স্ব-মহিমায়। সৃষ্টিকর্তা তার স্বত্বাকে বিলিয়ে দিয়েছেন মানব ও জ্বীনকে যে কোন জিনিস তৈরী, প্রস্তুত, প্রক্রিয়া ও গবেষনা করার ক্ষমতা দিয়ে। দিয়েছেন ধারণ, বাহন ও প্রয়োগ ক্ষমতা। এটি কোন লিঙ্গ ভেদে বৈষম্যের জন্য ক্ষমতা প্রদান করে নি। কোন সম্প্রদায় কেন্দ্রিক একক করে জ্ঞানালোক দেন নি। সুরা আর রাহমানের ৬০/৬১ নং আয়াতে আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন- হাল জা¦ যা উল ইহসানে ইল্লাল ইহসান, ফাবি আইয়্যে আলা ই রাব্বি কুমা তুকাজ্জিবান। অর্থ্যাৎ- হে জি¦ন ও মানব সম্প্রদায় তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন নেয়ামতকে অস্বিকার করবে, কল্যাণের বিনিময়ে কল্যাণ ছাড়া আর কি হতে পারে? এখানে এ কথার অর্থ হচ্ছে- উভয় সম্প্রদায়কে স্ব-ক্ষমতা দিয়েছেন ভালো-মন্দ করার।
বিবেককে সৎ ও সঠিক পথে পরিচালনার দৃঢ় ইচ্ছা শক্তিকে মহান দাতা ফেরেশতাদ্বয় দিয়ে সহযোগীতা করে থাকেন। আল্লাহর ইচ্ছার উপর নিজের ইচ্ছার আত্মসমর্পনকরী সফলকাম। শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে গেলে ইবলিশ শয়তান তার সহায়ক ভূমিকায় অবতির্ণ হয়। অতএব, কর্মফল ক-ুকমের্র দিকে অতিক্রান্ত হতে থাকে। কল্যাণময় কাজের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের নিয়ামত, সু-সংবাদ কোরআন মজিদে বার বার দিয়েছেন। সকল ধর্মাবলম্বীগন আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া (রঃ) দুইজন প্রথম মানব হিসাবে বিভিন্ন নামে আখ্যা দিয়ে স্বীকৃতি দেয়। সৃষ্টিকর্তা একজোড়া মানবকে কুদরতের নিয়ামতপূর্ণ বেহেশ্তে সুখে-শান্তিতে বসবাস করার ব্যবস্থাও করেন। মানব জাহানের আদি পিতা আদম (আঃ) ও মা হাওয়া (রঃ) কে আদেশ নিষেধ মান্য করে চলার জন্য দাতা দয়ালু মহান আল্লাহ তালা হুকুম করেন। আদম (আঃ) ও মা হাওয়া (রঃ) কে বেহেস্তের গন্ধম ফল না খাওয়ার ব্যাপারে কঠোর নিদের্শনা দেয়। ইবলিশ শয়তানের প্ররোচনায় মা হাওয়া (রঃ) ও আদম (আঃ) আল্লাহর নিষেধ ভুলে গিয়ে, ভুলক্রমে গন্ধম ফল সেবন করেন। বেহেস্ত থেকে বের করে আল্লাহর আদেশ অমান্য করার জন্য দু’জনকে দুনিয়ার বুকে প্রেরণ করেন। বহু বছর যাবত আল্লাহর আদেশ/ নিষেধ অমান্য করার জন্য শাস্তি ভোগ করেন দুনিয়ার উপর। মা হাওয়া ও বাবা আদম যখন প্ররোচিত হয়েছিল ইবলিশ শয়তান কর্তৃক তখন থেকে মাত্র একটি ভুলের জন্য বছরের পর বছর আল্লাহর নিকট ক্ষমা পাওয়ার জন্য ক্রন্দনরত ছিলেন ক্ষমা পাওয়া আগ মুহুর্ত পর্যন্ত। আল্লাহ তালা যাদের ক্ষমা করবেন ও আখিরাতে নেয়ামত বেহেস্ত প্রদান করবেন, উনাদেরকে দুনিয়াতে কঠিন পরীক্ষায় উত্তির্ণ কারার পর সুসংবাদ দিবেন। বহুবছরের প্রতিক্ষার সমাপ্তি ঘটে দু’জনের মিলনের মাধ্যমে। এমন মিলন ঘটেছে প্রথমে একে অপরকে চিনতে পর্যন্ত পারে নি। দু’জনের পবিত্র মিলনের মাধ্যমে মানব সন্তানদ্বয়ের আগমন ঘটেতে শুরু করে। তখন আল্লাহর নির্দেশে আদম (আঃ) এর পুত্র সন্তান ও কন্যা সন্তানদের মধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আদেশ আসে। পৃথিবীতে আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর লক্ষেই জোড়ায় জোড়ায় নারী পুরুষদ্বয়ের বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে বংশ বিস্তার শুরু করা হয়। পৃথিবীতে মানবের আগমনের শুরু থেকে ইবলিশ শয়তানের প্ররোচনায় বৈষম্য ঘটে আসছে। এবং পৃথিবী যখন ধ্বংস হয়ে যাবে, অর্থ্যাৎ কিয়ামত সংগটিত হওয়া আগ মুর্হুত পর্যন্ত মানব সৃষ্ট বৈষম্য থাকবে। আমাদের মধ্যে যারা ইবলিশ শয়তানের পথে চলবে, তারা অবশ্যই বৈষম্য সৃষ্টি করবে। আর তাদের জন্যই জাহান্নামে কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে। অতপর তাদের স্থান হবে জাহান্নামে। বৈষম্য সৃষ্টিকারীর পরিচয় হচ্ছে- অহংকারী, বদমেজাজী, পরনিন্দাকারী, অধৈর্য্যশীল ও নিজেকে মাত্রারিক্ত উপস্থাপনকারী। আদম (আঃ)-এর পুত্রদ্বয় হাবিল ও কাবিল বোনকে বিবাহ কেন্দ্রিক পিতার আদেশ অমান্য করে ইবলিশ শয়তানের প্ররোচনায় একে অপরের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হয়। ইউসুফ (আঃ)কে বিবি জুলেখা প্ররোচিত শয়তানের চক্রান্তে কামনা বাসনায় লিপ্ত করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে অনেক কষ্ট দিয়েছেন। ইউসুফ (আঃ) অনেক কষ্ট করেছেন ও ধৈর্য্য ধরেছেন, কিন্তু আল্লাহর রহমত থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেন নি। বিবি জুলেখা যখন তার ভূল বোঝতে পেরেছেন এবং তার ভুলের জন্য মহান ক্ষমাশীল আল্লাহর দরবারে অনুতপ্ত হয়েছেন তখনই আল্লাহ তার পবিত্র আকাংখার প্রতিফলন ঘটান। এমন অনেক মানব সৃষ্ট বৈষম্যের দৃষ্টান্ত আছে যাহা লিখে শেষ করা যাবে না। এটি সেই দৃষ্টান্ত যাহা পৃথিবীতে মানবের আগমন শুরু সময়ের। এই পর্যন্ত যত নবী, রাসুল, সাহাবী, ওলি, আওলিয়া ও আম্বিয়াসহ যত জনার আগমন ঘটেছে।
সকলের সময়ে বা আমলে নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে বৈষম্য ঘটেছিল পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যন্ত ক্ষমতার কর্তৃত্ব কেন্দ্রিক। সকল ধর্মকে আমি সম্মাণ করি। কোন ধর্ম গ্রন্থের কত নম্বর পৃষ্ঠায় কোন লাইনে লিখা আছে বৈষম্য সৃষ্টি করার বিষয়! ধর্মীয় গ্রন্থতে নারী-পুরুষ শুধু নয়, সংসার, সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যন্ত কোন নিয়মে চলবে তা উল্লেখ করা আছে। পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রে কম-বেশী সকল ধর্মাবলম্বী আছে। সংখ্যাঘরিষ্টতার বিবেচনায় রাষ্ট্র ধর্ম যে কোনোটি হোক, কিন্তু সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বী ধর্মীয় চেতনার ব্যাপরে সচেতন থাকা দরকার। নারী ও পুরুষ বৈষম্যের জন্য কিন্তু ধর্মীয় উগ্রবাদী মহল প্রাথমিক ভাবে দায়ী। উগ্রবাদীরা নারীদের এক রকম দিক্ষা দেয় আর পুরুষদের আরেক রকম দিক্ষা দেয়। আকাশ সংস্কৃতির ছোঁয়ায় বিশ্বের তথ্য ও প্রযুক্তির আধুনিকায়ন এর আওয়তায় সকল ক্ষেত্রে কম-বেশী ছোঁয়া লেগেছে। আকাশ সংস্কৃতির কারণে আমরা যেমন উপকৃত, তেমনী ক্ষতিগ্রস্থও। অপসংস্কৃতির ভয়াল থাবা মানব সভ্যতা ও সম্প্রীতিকে খাবলে খাচ্ছে। কিছু জ্ঞানপাপী ইবলিশের দলভূতরা সভ্যতার নামে অসভ্যতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। যত ধরনের বৈষম্য ও সহিংস ঘটনার জন্ম দিচ্ছে, যেসব নারী ও পুরুষ এরা উভয় লিঙ্গ সারা বিশে^ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এদেরকে এড়িয়ে চলার জন্য প্রকৃত ধর্মীয় অনুভূতির উপর আত্মবিশ্বাস আরো জোরালো করাই হবে সময়পোযোগী। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে মানবিক সংগঠন এনজিও আছে। বাংলাদেশে যে রকম হাজার হাজার এনজিও সংস্থা আছে পৃথিবীর কোথাও এত বেশী এনজিও সংস্থা নেই। এসব এনজিওতে ভালো কিছু কাজের পাশাপাশি নিজেদের মনগড়া কিছু বক্তব্য লিপলেট, পুস্তক, সভা ও সেমিনারের মাধ্যমে সকল ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে থাকে। এখানেও বৈষম্য দূরিকরণের কথা বলে বৈষম্য সৃষ্টি করে দিচ্ছে। সকল ধর্মীয় আচার-আচারন, পোশাক-পরিচ্ছেদ, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় নিয়ম- নীতি মেনে চলার বিধান সকল ধর্ম গ্রন্থেও সংরক্ষিত আছে। আমরা যদি ধর্মীয় গ্রন্থ এর উপর বিশ^াস করে সৃষ্টিকর্তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতাম তাহলে বিনিময়ে দুনিয়াতে এতো অশান্তির বিপরীতে শান্তি পেতাম। আমরা যদি বিবেককে মাত্র একটি বার প্রশ্ন করি, আমরা কি সৃষ্টিকর্তার না ইবলিশ শয়তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। আজ সারা বিশে^ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জেনা বা ধর্ষনে লিপ্ত। উভয় লিঙ্গের মধ্যে চলে, বলে কৌশলে বা কোন কিছুর বিনিময়ে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ঘটছে এমন জঘন্যতম ব্যভিচার ও অভিচার। নফস্কে নিয়ন্ত্রনের জন্য ও হেফাজত করার কথা সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা আছে। যিনি পরম দাতা দয়ালু আমাদের (মানুষকে) পৃথিবীর সকল সৃষ্টি সেরা হিসাবে তৈরী করেছেন। পৃথিবীর সকল সৃষ্টির নিদের্শন শ্রেষ্টত্ব প্রকাশ করেছে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, জোড়া, কেশরাজী, হাড়-গোড়, মুন্ড ও মুখ মন্ডলসহ সম্পূর্ণ দেহের আংশ বিশেষ এর মাধ্যমে। প্রকৃতি নির্দশন পাহাড়, নদী, বৃক্ষরাজী, চন্দ্র, ও সূর্যসহ সকল সৃষ্টির সাথে দেহের প্রত্যেক কিছুর মিল রয়েছে। সুরা………………….
মহান সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্টত্বকে গোটা পৃথিবীর নির্দশনকে কতো সুক্ষরূপে মানব দেহের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। তাইতো মানুষ সৃষ্টি কূলের মধ্যে শ্রেষ্ট। তারপর ও আমরা নাফরমানী করি, আদেশ নিষেধ অমান্য করি। আমাদের নাফরমানীর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জাহানে কষ্ট আজার/গজব আমাদের পাওনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাহা বলেছেন- তাহা সম্পূর্ন ভাবে বাস্তবায়ীত হবে। আমরা যার যার অবস্থানে থেকে যার যা করার হুকুম, তার ব্যতিক্রম ঘটালে পরিনাম কি তা পবিত্র ধর্মগন্থে উল্লেখ আছে। শুধু মানুষ ও জ¦ীনের বিষয় নয়! যদি গ্রহ, চন্দ্র,নক্ষত্র তারা আপন কক্ষপথ থেকে গতির সামান্যতম হের পের করে তাহলে এর পরিনাম হবে ভয়াবহ ধ্বংস যজ্ঞ। এতো দৃষ্টান্তের কারন হচ্ছে বিশে^র প্রত্যেকটি দেশে কম-বেশী নির্যাতন নামক ভয়ানক ব্যাধি আছে। নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে বৈষম্য তা মানব ও জ¦ীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সকল জীবের মধ্যেও আছে। এটি আল্লাহর সৃষ্টি প্রদত্ত বৈশিষ্ট্যর বৈষম্য। ইহা সৎকর্মশীল উভয় লিঙ্গের জন্য নিয়ামত স্বরূপ। আর আমরা যখন নিজের স্বার্থসীদ্ধির জন্য মনগড়া মানব সৃষ্ট বৈষম্য তৈরী করি, তখন ইবলিশ শয়তান খুব খুশি হয়। মহান আল্লাহ তখন অসন্তুষ্ট হয়। নির্যাতন নামক ভয়ানক ব্যধি ব্যক্তি, সংসার, সমাজ ও রাষ্ট্র কেন্দ্রিক উপস্থিত হয়। আল্লাহ বলেছেন —– যখন তোমরা আমার নিয়ামত খেয়ে তার শুকরিয়া আদায় না করবে এবং আমার সংবিধান থেকে দুরে থাকবে। তখন তোমাদেরকে সংসার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তর পর্যন্ত খুবই ভয়ানক ও কঠিন আজাব-গজব ও শাস্তি দেব। যাহা পাবে সমাজপতি ও রাষ্ট্রের শাসক কেন্দ্রিক। তারাই তোমাদের জুলুম অত্যাচারে জর্জরিত করবে, আমাকে দোষারোপ করা কোন পথ তোমরা পাবেনা। উপরোক্ত বর্ণনায় এটি স্পষ্ট যে আমাদের কৃতকর্মের জন্য আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় স্থানে ফল ভোগ করতে হবে। যে নির্যাতন নিয়ে বিশে^র সর্বত্রই প্রতিদিন প্রতিনিয়ত আলোচনা সমালোচনার ঝড়। প্রকৃত ভাবে কত ধরনের নির্যাতন এর স্বীকার প্রত্যেকটি প্রাণীকূল। এর কোনটির দ্বায় অস্বিকার করার মত কোন উপায় নেই। নির্যাতনের সংজ্ঞা হচ্ছে—- অক্ষম ও দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচারকে নির্যাতন বলে। যার ক্ষমতা আছে তার ক্ষমতার সৎ, সঠিক ও কল্যাণময় কাজে ব্যয় করলে তাহা হবে বৈধ প্রয়োগ। অবৈধ সকল ধরনের কার্য সম্পাদনে ক্ষমতা প্রয়োগের নামই হচ্ছে নির্যাতন। নির্যাতনের প্রকৃত পরিচিতি হচ্ছে- পুরুষ কর্তৃক নারী, নারী কর্তৃক পুরুষ।
এখানে বাবা দ্বারা মা, মা দ্বারা বাবা নির্যাতন, শ্বাশুড়ি কর্তৃক বৌ, বৌ কর্তৃক শ্বাশুড়ি, দেবর কর্তৃক ভাবী, ভাবী কর্তৃক দেবর, ননদ কর্তৃক ভাবী, ভাবী কর্তৃক ননদ নির্যাতন, শ্বশুর কর্তৃক মেয়ের জামাই, জামাই কর্তৃক শ্বশুর, শ্যালক কর্তৃক দুলাভাই, দুলাভাই কর্তৃক শ্যালক, দুলাভাই কর্তৃক শ্যালিকা, শ্যালিকা কর্তৃক দুলাভাই নির্যাতন, চাচা কর্তৃক ভাতিজা, ভাতিজা কর্তৃক চাচা, পিতা কর্তৃক পুত্র, পুত্র কর্তৃক পিতা নির্যাতন, প্রতিবেশি কর্তৃক প্রতিবেশি, সমাজপতি কর্তৃক অক্ষমব্যক্তি, রাষ্ট্র কর্তৃক জনগণ, জনগণ কর্তৃক রাষ্ট্র নির্যাতন, মালিক কর্তৃক শ্রমিক, শ্রমিক কর্তৃক মালিক নির্যাতন। এটি হচ্ছে মানব কূলের নির্যাতন। জ্বীন সম্প্রদায়ের মধ্যে আছে ক্ষমতা কেন্দ্রিক নির্যাতন। জ্বীনদের মধ্যেও আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ধর্ম-কর্ম, রাজা-প্রজা, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আছে। আমাদের ভেতর যেমন ভালো খারাপ আছে তাদের মধ্যেও ভালো খারাপ আছে। আমাদের যেমন মানবের বিপরীতে মানবী, জ্বীনদের মধ্যে দানব-দানবী, দৈত্য-দৈত্যপত্নি, ভূত- প্রেত্নী এমনি ভালো-মন্দ তাদের মাঝেও আছে । আমরা শুধু মানব ও জ্বীন কূলের নির্যাতনকে দেখি। মানব ও জ্বীনদের জন্য আল্লাহ পাক যে মাখলুক তৈরী করেছেন তাদের মধ্যেও শক্তি ও ক্ষমতা কেন্দ্রিক নির্যাতন হচ্ছে। হাজার হাজার মাখলুকের কথা বাদ দিয়ে শুধু আমাদের আশে-পাশে অল্প সংখ্যক কিছু প্রানির দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছি। গৃহপালিত গরু, ছাগল, ভেড়া, মোরগ, হাঁস। এদের ভেতর ষাড় ও গাভীর মধ্যে যে পরির্বতন লক্ষ্য করা যায় তা হল একটি ক্ষমতাধর ও শক্তিশালী ষাঁড় হলে দূর্বলের প্রতি সে অধিকাংশ সময় হিংস্র হয়ে উঠে, তেমনী একটি গাভী ষাড়ের মত ক্ষমতা ও শক্তি পেলে সে ও দূর্বলের প্রতি হিংস্রতার প্রকাশ ঘটায়। এমনি করে প্রত্যেকটি প্রানীই দূর্বলের প্রতি হিংস্র আচরণ করে, আর এটিই হচ্ছে নির্যাতন । নির্যাতনের ধরন বুঝে আমরা এর প্রতিকারে সচেষ্ট হই। কখনো আমরা প্রকৃত নির্যাতিতকে রক্ষা না করে নির্যাতনকারীর পক্ষ অবলম্বন করি। তখন আমাদের ন্যায়ের পাল্লা মুখ থুবড়ে পড়ে। জুলুমবাজ, ব্যভিচারীরা প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজ রাষ্ট্রের সর্বত্রই। এমন জঘন্য কাজে আমরা যারা নীরব রয়েছি ও সমর্থন দিয়েছি। পরর্বিতিতে এসব জুলুমবাজই আমাদের উপর চড়াও হয়েছে। পরিনামকে অপরিনামদর্শীর উপর তখন ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না। আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি বর্তমান কিছু সংখ্যক বা হাতে গোনা অর্থ্যাৎ শ দু’য়েক নাস্তিকের অপসংস্কৃতির দিকে আগ্রাসিত হতে যাচ্ছে। সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে আমাদের সামাজিক ও সংস্কৃতি যুগে যুগে সম্প্রীতির বন্ধনকে অটুট রেখেছে এবং থাকবে। আমি পৃথিবীর অনেক জাতের মানুষের সাথে চাকুরীর সুবাদে মিলেছি। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের সাথে পৃথিবীর কোন জাতীর মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এটিকে নষ্ট করার জন্য কতিপয় কু-বুদ্ধিজীবি নাস্তিক, নাস্তিক জাতির কাছ থেকে মোটা অংকের ফান্ড নিয়ে আমাদের সম্প্রীতির বন্ধন নষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অত্যন্ত কুট- কৌশলে যুব সমাজকে বদলে দেওয়ার নামে অসভ্য ও কুরুচিপূর্ন পোশাক পরিচ্ছিদ পরিধান উৎসহিত করছে। সিনিয়র জুনিয়রের ব্যবধান দিনে দিনে কমে আসছে। আদব-কায়দা, সম্মান শ্রদ্ধাবোধ নেই বললে চলে। নগ্নতাকে স্বাধীন চেতনা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। বিনোদনের নামে যৌন উত্তেজনা তৈরী করে যৌন অভিচারে লিপ্ত হচ্ছে। যারা কু-কৌশলে অতি সহজে চল-চাতুরীর মাধ্যমে যে কোন কিছুর বিনিময়ে যৌন আকাংখার প্রতিফলন ঘটায় এটি তারা বৈধ করে নেয়। কারণ তারা উভয় লিঙ্গের সম্মতিক্রমে এমন ঘৃন্য নিকৃষ্ঠ কাজটি সম্পাদন করেছে। এতে সমাজের নারী লোভী ও পুরুষ খেকো নারী উভয় নিশ্চুপ থাকে। এমন শ্রেনীর নগ্ন চরিত্রের কতিপয় লোক কুত্তার চেয়ে অধম। কারণ কুত্তাদেরকে আগে বর্তমানের নিলর্জ নারী ও পুরুষের মত রাস্তা-ঘাটে এমন অসভ্য কাজ করতে সবাই দেখতে পেত। এখন কুত্তা ভদ্র হয়ে গেছে, মানুয় নামের অমানুষদেরকে রাস্তায় এমন নিলর্জ্জ অবস্থায় দেখে কুত্তা লর্জ্জা পেয়ে নিজেদেরকে পর্দার আড়ালে নিয়ে গেছে। তাই আমি এখন কুত্তাকে কুকুর বলে সম্বোধন করি। কুত্তা গুলো ভদ্র হয়ে কুকুর আর মানুষগুলো সভ্যতার নামে অসভ্যতার কালিমা লেপে হচ্ছে অমানুষ। অতএব, অমানুষের চাইতে কুকুরগুলো উত্তম। এসব অমানুষের এমন চরিত্র দেখে কিছু নারীলোভী পুরুষ ও পুরুষ খেকো নারী তার যৌনচার কার্য সম্পাদন করতে গিয়ে চল-চাতুরী অংশ হিসেবে অমানুষগুলো যৌন অভিসারকে সমর্থন দিচ্ছে! যারা সংসার সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকে নোংরা ও অন্যায় কাজকে পশ্রয় দিচ্ছে এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন দিচ্ছে। তারা অন্যকে যেমন বিপদে পেলছে,নিজেকেও বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। একটি বাস্তবমুখী কাজ হচ্ছে যারা একবার নোংরা চরিত্রে নিজেকে বিসর্জন দেয়, সে পথ থেকে বিমূখ হওয়া সহজ কাজ নয়। ভালো হওয়ার জন্য হাজার রাতে সাধনা আর মন্ধ কাজের জন্য একটি নিকৃষ্ট কাজই যথেষ্ট। বিবেক একটি উৎকৃষ্ট পরিমাপক যন্ত্র যাহাতে গবেষনায় ফল অত্যন্ত সুক্ষ। কেউ যদি বিবেককে ভালো কাজে খাটিয় বিবেক তার ফল দেয়, আর যদি খারাপ কাজে খাটায় তাহলে ফল খারাপ হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের নির্যাতন বিষয়ে উল্লেখ না করে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষপটে যেসব নির্যাতন হচ্ছে তা সকল শ্রেনী-পেশার মানুষের জানাও স্বীকার। আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে কি না জানি না বর্তমানের প্রেক্ষাপটে যে সব নির্যাতন হচ্ছে। অত্যন্ত নারকীয় ও বর্বরচিত এই নির্যাতন সামাজিক অস্থিতিশিলতা দিন দিন ক্রমাশই বেড়ে চলেছে। অসহিঞ্চু হয়ে পড়েছে উভয় লিঙ্গেও মানুষগুলো । নির্যাতন নামক ব্যধিতে সকলে কম/বেশী আক্রন্ত। যাহা পূর্বের লিখনীর অংশে উল্লেখিত আছে। যদি সংবিধানের প্রথম বাক্য হয় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ এর অর্থ সম্মানীত সংবিধান বিশেষজ্ঞরা জ্ঞাত আছে। যদি এর অর্থ একটি বিশেষ মহলের জন্য প্রযোজ্য হয়, তাহলে বলবো এখানে সাংঘষিক মতপার্থক্য ও মতবিরোধের সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের সামাজিক সম্প্রীতি স্বীকৃতির মূল ভিত্তি হচ্ছে পরিবার কেন্দ্রিক। যে কোন একজন প্রধান দায়িত্বে থেকে পরিবারের সকল সদস্যের অধিকার বন্টন করে অত্যন্ত দক্ষ হতে পরিচালনা করে একটি শান্তি সুখ ও সমৃদ্ধিও যৌথ পরিবার। আবার যৌথ পরিবারে বনি বনা হয়না বা কেউ কাউকে ছাড় দেয়না তখন পরিবারে অশান্তি দেখা দেয়। অশান্তি থেকে নিষ্কৃতির জন্য দুই বা তিন জনের ছোট পরিবার গঠন করে। যৌথ হোক বা ছোট পরিবার হোক যখন অবিশ^াসের দানা বাঁধতে থাকে তখন অশান্তি শুরু হয়। পারিবারিক অশান্তি এক সময় ভয়াবহ নির্যাতন নামে উপস্থিত হয় একে অপরের উপর। পারিবারিক বিশৃংখলা থেকে সকল ধরনের অনিয়ম,অনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ড সংগঠিত হয়। যারাই নির্যাতন নামক জঘন্য অপরাধ করে তারা কোন না কোন পরিবারের সদস্য। অপরাধী যে হোক না কেন সে অবশ্যই এই ভূ-খন্ডের কোন না কোন সীমানার অধিবাসী। যত ধরনের অপরাধ হোক সবই কোন না কোন ভাবে নির্যাতন। আর সকল ধরনে নির্যাতন মানবাধিকার লংগন। মানবাধিকার লংগন ঠেকাতে পারিবারিক ভাবে সচেতন হতে হবে। পারিবারিক সচেতনতা উত্তোলন হলে সামাজিক প্রেক্ষাপটও বদলে যাবে। আর সামাজিক অবস্থার পরির্বতন ঘটলে পুরো রাষ্ট্রের পরির্বতন আপনা আপনি হবে। আমরা একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন “মানুষ পরির্বতনশীল’’ যখন একজন মানুষ পরির্বতন হয়, তাকে আশ-পাশের মানুষ অনুসরন করতে থাকে সেটা ভালো হোক বা মন্দ পরির্বতন হোক। একটি প্রবাদ আছে-“ দেখ্ দেখ্ত বান, শুন শুনতা গান”। এর অর্থ মানুষ দেখে দেখে রশি দিয়ে বাঁধ দেওয়া শিখে,আর শুনে শুনে গান গাইতে শিখে।
সারা বিশ্বের মধ্যে প্রচার ও অন্যকে অনুসরন বিশ^সী বাংলাদেশের মানুষের মত অন্য কোন দেশের মানুষ এত আগ্রহী নয়। এখানে আরেকাটা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি। হিন্দি সিরিয়ালে কিরণমালা নাটকের কিরণমালা গায়ের জামার মত ঈদ ও পূজায় বাজারে জামা ছেড়েছে। সে জামা কিনে না দেওয়ায় অভিমানে আত্মহত্যা করা কতটুকু যৌক্তিক। এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। এ ধরনের অনাকাংখিত ঘটনাগুলোর পূনরাবৃত্তি না ঘটার জন্য পারিবারিক দিক্ষা অপরিসিম। এদেশের রাষ্ট্রিয় নীতি নির্ধারকদের প্রতি দল, মত ও গোত্র নির্বিশেষে একটি অতি গুরুত্বপূর্ন বিষয় দৃষ্টিপাত করার আহ্বান জানাই। সেটি হচ্ছে- আমরা যারা এ ভূ-খন্ডের নাগরীক। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সকলের অধিকার সমভাবে দেওয়া। সেক্ষেত্রে নারী নির্যাতন আইন যেমন গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু তেমনী পুরুষ নির্যাতন আইন করা এটিও সময়ের দাবী ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। একটি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে উভয় লিঙ্গের সহ অবস্থানে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আনয়ন সম্ভব। একে অপরের সাথে বিরূপ ও বৈষম্যমূলক আচরন করা উচিত নয়। উভয় লিঙ্গের মধ্যে বৈষম্য তৈরী হচ্ছে সামাজিক অস্থিশিলতার প্রধান কারণ। নারী হোক বা পুরুষ নির্যাতিত হোক এরা কোন না কোন পরিবারের সদস্য। অতএব বৈষম্য তৈরী করে নির্যাতত এর অধিকার বঞ্চিত করা সম্পূর্ন অমানবীক! প্রকৃতভাবে যারা নির্যাতনের স্বীকার তাদের অধিকার রক্ষায় সকলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমস্যা উত্তোরণে মানবিক ভাবে কাজ করলেই নির্যাতন নামক ভয়ংকর ব্যধি থেকে সমাজ ও দেশ রক্ষা পাবে ইন্শাল্লাহ।