মামলা-জটে অনিশ্চিত শশীর শপথ

এডিএমকে-র পাশাপাশি তামিলনাড়ু সরকারের রাশ হাতে নেওয়ার পথেও এগোচ্ছিলেন শশিকলা নটরাজন। কিন্তু আগামিকাল তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে দু’দশকের পুরনো দুর্নীতি মামলার জেরে।

বছর কুড়ি আগে জয়ললিতার সঙ্গেই তাঁর ছায়াসঙ্গী শশিকলার নাম একের পর এক দুর্নীতির মামলায় জড়াতে শুরু করে। জয়ললিতা চারটি মামলায় প্রাথমিক ভাবে দোষী সাব্যস্ত হয়েও শেষে বাঁধন কেটে বেরিয়ে যান। শুধু ৬৬.৬৫ কোটি টাকার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন মামলা থেকে মুক্তি পাননি। সেই মামলাই এখন খাঁড়ার মতো শশিকলার মাথার উপর ঝুলছে।

সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ ও বিচারপতি অমিতাভ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি শেষ হয়ে গিয়েছে। রায় ঘোষণা হয়নি। আজ আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে বিচারপতিদের এই বিষয়টি মনে করিয়ে দেন। দাভে ওই মামলায় কর্নাটক সরকারের হয়ে সওয়াল করেছিলেন। বিচারপতিরা এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে বলেন। যা থেকেই ইঙ্গিত মেলে, এক সপ্তাহের মধ্যেই রায় ঘোষণা হয়ে যাবে। এর পরেই শীর্ষ আদালতে জনস্বার্থ মামলা করে এক আবেদনকারী আর্জি জানান, দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত শশিকলার মুখ্যমন্ত্রীর গদি দখলের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হোক। মঙ্গলবারই আদালত এই জনস্বার্থ মামলা শুনতে পারে।

শুধু এই একটি মামলাই নয়। শশিকলার বিরুদ্ধে ইডি-র আরও তিনটি মামলা রয়েছে। তিনটিতেই তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ভেঙে মার্কিন ডলার সিন্দুকে ঢোকানোর অভিযোগ। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন শশিকলার আত্মীয়াও। বিশ বছরের পুরনো মামলা হলেও গত সপ্তাহেই মাদ্রাজ হাইকোর্ট শশিকলাকে নিষ্কৃতি দিতে রাজি হয়নি।

শশিকলার শপথ মাথায় রেখে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাগৃহ সাজানোও হয়েছিল। রাতে রাজভবন সূত্রে জানা যায়, আগামিকাল শপথ নাও হতে পারে। কারণ, রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাও শশীর বিরুদ্ধে মামলার গুরুত্ব খতিয়ে দেখছেন।

বিজেপি অবশ্য এই মামলাগুলিকে অস্ত্র করেই শশিকলা এবং এডিএমকে-কে পুরোপুরি নিজেদের পাশে রাখতে চাইছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন,

শশিকলা প্যাঁচে পড়লে তাঁদেরই সুবিধে। তাঁর স্বামী থেকে গোটা পরিবারই নানা দুর্নীতির মামলায় জড়িত। এই সব দুর্নীতির মামলাকে কাজে লাগিয়েই তাঁকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। কিন্তু রাজ্য বিজেপির নেতারা এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রী বদলের সমালোচনা করছেন। তাঁদের মতে, পনীরসেলভমের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা অনেক বেশি ছিল। যা শশিকলার নেই।

শশিকলাকে মানুষ কতখানি মেনে নেবেন, সেই প্রশ্ন উড়িয়ে দিতে পারছেন না অনেকেই। ৬২ বছর বয়সি শশিকলা কখনও কোনও ভোটে লড়েননি। শুধুমাত্র জয়ললিতার ছায়াসঙ্গী ও আস্থাভাজন হিসেবে থেকেই নিজেকে আম্মার প্রকৃত উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত দলের মধ্যে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে। আম্মার মৃত্যুর পরেই দলের সাধারণ সম্পাদকের গদি তাঁর দখলে চলে এসেছিল। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর পদে তাঁর উত্থানে এডিএমকে সিলমোহর বসিয়েছে। পরিষদীয় দলেরও নেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

শশিকলাকে আসন ছেড়ে দিতে  পনীরসেলভম ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেছেন। এর আগে জয়ললিতা জেলে যাওয়ায় দু’বার তাঁর জায়গায় মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আবার জয়ললিতা ফিরে আসতেই মুখ্যমন্ত্রীর আসন থেকে সরে দাঁড়ান। এ বার তিনি শশিকলার জন্য পদ ছাড়তেও আপত্তি তোলেননি। রাজনীতিকদের মধ্যে রসিকতা চলছে, পনীরসেলভমের দশা বাসের লেডিজ সিটে বসা পুরুষ যাত্রীর মতো। মহিলা এলেই যাঁকে সিট ছেড়ে দিতে হয়।

জয়ললিতার মৃত্যুর পরে অভিযোগ উঠেছিল, এর পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। কারণ হাসপাতালে শশিকলা আর কাউকে জয়ললিতার সঙ্গে দেখা করতে দেননি। আজ  ব্রিটেনের রিচার্ড বিয়েল-সহ তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করিয়েছে তামিলনাড়ু সরকার। এই তিন জন  জয়ললিতার চিকিৎসার জন্য গঠিত দলে ছিলেন। তাঁরা দাবি করেন, কোনও ষড়যন্ত্র হয়নি। জয়ললিতার মৃত্যু স্বাভাবিক। শশিকলার নির্দেশেই এই সাংবাদিক বৈঠক করা হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে।

তবে ঘরে না হলেও ঘরের বাইরে কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, শশিকলা কি তামিলনাড়ুর প্রকৃত জননেত্রী? কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের মন্তব্য, ‘‘তামিলনাড়ুর মানুষ যে দিকে চলছেন, এডিএমকে চলছে তার উল্টো দিকে। এডিএমকে-র বিধায়কদের অবশ্যই তাঁদের নেত্রী ঠিক করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু মানুষেরও প্রশ্ন করার অধিকার রয়েছে সেই নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য কি না।’’