বিস্মৃতির অন্ধকারে কমেডিয়ান খান জয়নুল!

আহমেদ তেপান্তর: দেশীয় চলচ্চিত্রে ষাট দশক থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত যে ক’জন কৌতুক অভিনেতা স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে আছেন তাদের অন্যতম অগ্রজ খান জয়নুল। দর্শকদের হৃদয়ে ওপার বাংলায় ভানু বন্দোপাধ্যায় যেমন কৌতুক অভিনয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র বাংলাদেশেও তেমনি জয়নুল। অথচ এমন সাফল্যধারায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্রকে যিনি সমৃদ্ধ করে গেছেন, সেই খান জয়নুলের মৃত্যুবার্ষিকী নিরবেই কেটে গেল। এমনকি গণমাধ্যমও তাকে ভুলেছে। আর নতুনরাতো এ নামটি প্রথম শুনেছেন বলে জিভ কেটেছেন।

এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের বিনোদন সাংবাদিকরা জানান, ‘আসলে টেলি সামাদ, দিলদার এদের নাম জানি কিন্তু এ নামে কেউ আছেন বলে শুনিনি। আমাদের বিভাগীয় প্রধানরাওতো বিষয়টি আমাদের জানাননি বলে পাল্টা অভিযোগ তাদের। তবে কেউ তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।

ভারষবর্ষ ভাগের শেষ সময় ‘মৃণাল কান্তি রায়’ নাম ধারণ করে কোলকাতার ছবিতে ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় করেছেন। দেশ ভাগ হলে চলে আসে ঢাকায়। এখানে এসে মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করার পাশাপাশি নাটক লেখালেখিও করেছেন। এরপর এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হলে দেশীয় কলাকুশলীদের নিয়ে সিনেমা তৈরির প্রথম সুযোগ সৃষ্টি হলে তাতে যুক্ত হন।

খ্যাতিমান পরিচালক আজিজুর রহমানের মতে, ছোটখাট গড়নের হওয়া খান জয়নুল নিজের অভিনয়ের মুন্সিয়ানা দেখাতে পেরেছেন অত্যন্ত সাবলীলভাবে। সে সঙ্গে বিশ্বস্ত চোখের উপর ভ্রু’র নাচন খান জয়নুলকে দিয়েছে বিশেষত্ব।তিনি কৌতুককে শিল্প পর্যায় উন্নীত করে এর স্বাতন্ত্র দান করেন।যা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে।’

তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এখনকার প্রজন্ম কৌতুক অভিনয় করেন কিন্তু খান জয়নুলদের মতো অন্তপ্রাণ শিল্পীদের চেননা। এটা খুবই দুঃখজনক।’

টেলি সামাদ বলেন, ‘খান জয়নুল মুখের অঙ্গভঙ্গি দিয়ে যে অভিনয় করে গেছেন তা রীতিমত বিস্ময় জাগায়। তিনি একজন জাত অভিনেতা ছিলেন। কৌতুককে অনন্য উচ্চাতায় নিয়ে গেছেন। অথচ আমরা তাকে মুল্যায়ন করিনি।’

চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, ‘খান জয়নুলকে বাদ দিয়ে এদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাস পূর্ণাঙ্গতা পাবে না। তার মতো কমেডিয়ান যুগে যুগে আসবে না। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিৎ তার ব্যাপারে ইতিবাচক মানসিকতা ধারণ করা।’

নায়ক রাজ্জাক অভিনীত ‘১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমার কাহিনীকার ছিলেন খান জয়নুল। পাশপাশি অভিনয়ও করেন। কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেন সাপ্তাহিক ‘পূবালী’ পত্রিকায়।

৪২ বছরের জীবনে খান জয়নুল অর্ধশত ছবিতে অভিনয় করেন। এরমধ্যে সুতরাং, কাঁচকাটা হীরে, সন্তান, পদ্মানদীর মাঝি, দর্পচুর্ণ, সপ্তডিঙ্গা, মিশর কুমারী, অন্তরঙ্গ, মাটির মায়া, অশান্ত ঢেউ, দিনের পর দিন, স্মৃতি তুমি বেদনা, ময়নামতি, সাইফুল মুলুক বদিউজ্জামান, গোপাল ভাঁড়, মধু মিলন, ডাক পিয়ন এবং ১৯৮০ সালে গাফ্ফার খান পরিচালিত ‘দিওয়ানা’ তার অভিনীত শেষ ছবি।

একাধারে অভিনেতা, নাট্যকার ও কাহিনীকার। জন্ম বিক্রমপুর জেলার লৌহজং’র রানাদিয়ায় ১৯৩৬ সালের ৪ জুলাই। মৃত্যু ১৯৭৮ সালের ১৫ জানুয়ারি এই দিনে।