‘দলের অনুগতরা কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে?’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দলের অনুগত লোক দিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কীভাবে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে?’

এই কমিটিতে ক্ষমতাসীন সরকারের ইচ্ছা পূরণে সহযোগিতা করে পুরস্কৃত এবং আওয়ামী পরিবারের বিশ্বস্ত সদসদের অন্তর্ভুক্তি শুধু বিতর্কিতই করেনি, এর মাধ্যমে জনমতকে অগ্রাহ্য করার আরেকটি অগণতান্ত্রিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। এই সার্চ কমিটি দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন হবে না।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শুক্রবার সকাল ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে সার্চ কমিটি নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করার জন্য গঠিত সার্চ কমিটি যথার্থই নির্দলীয় নিরপেক্ষ এবং কোনোভাবেই বিতর্কিত নন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত হবে- এমন যে স্বাভাবিক ও ন্যায্য প্রত্যাশা করেছিল- ঘোষিত সার্চ কমিটি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন মাননীয় বিচারপতিকে প্রধান করে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগের বার গঠিত অনুসন্ধান কমিটিরও প্রধান ছিলেন তিনি। সেই কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি গঠিত হয়। আগের অনুসন্ধান কমিটির প্রধানকে নতুন অনুসন্ধান কমিটির প্রধান করার অর্থ—সরকার আরেকটি অনুগত ইসি করতে চায়।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, অনুসন্ধান কমিটির আরেক সদস্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবী হিসেবে বহুল পরিচিত ছিলেন। তার বাবা আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা ছিলেন। তার ছোট ভাই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, অনুসন্ধান কমিটির আরেক সদস্য সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব ছিলেন। বিতর্কিত সেই নির্বাচনকে নিয়মসিদ্ধ করার পুরস্কার হিসেবে অবসরের পর তাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তিনি সরকারের ইচ্ছা পূরণে সচেষ্ট থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক।

অনুসন্ধান কমিটির একমাত্র নারী সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য শিরীণ আখতার। তার সম্পর্কে ফখরুল বলেন, ড. শিরীণ আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতা হিসেবে পরিচিত। তার বাবা কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। শিরীণ আখতার নিজেও কক্সবাজার মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী।

অনুসন্ধান কমিটির আরেক সদস্য বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মাসুদ আহমেদ সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক সরকারে অধীনস্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা তিনি। মাসুদ আহমেদ সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না। অর্থাৎ, সরকারের ইচ্ছা পূরণে তিনিও কোনো বাধা নয়।

সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ, নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, সহ সাংঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন প্রমুখ ছিলেন।