‘উপেক্ষিত’ ফরীদির মৃত্যুবার্ষিকী আজ

‘পদক তার সৃষ্টিকে কোনোভাবেই মূল্যায়নের মাপকাঠি হয়ে উঠবে না। হুমায়ুন ফরীদির মতো শক্তিমান অভিনেতা একুশে পদক পেলে, একুশে পদক নিজেই ধন্য হত।’

আজ কালজয়ী অভিনেতা ও মঞ্চ-টিভি এবং বড়পর্দার কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এই ধরনী থেকে চির বিদায় নেন তিনি।

এদিকে প্রয়াত এই অভিনেতার মৃত্যুবার্ষিকীর আজকের এই দিনে একুশে পদকের নামের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বরাবরের মতো এবারও উপেক্ষিত হলেন শক্তিমান এই অভিনেতা।

১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন ফরীদি। ছাত্রাবস্থাতেই ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এরপর ধীরে ধীরে নাটক ও ছবিতে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। ছিল এক বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবন। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও মঞ্চে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে তিনি দেশ-বিদেশের লাখো-কোটি ভক্তের মনে আসন করে নিয়েছিলেন। করেছিলেন মঞ্চ নাটক, টিভি ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন। ফরীদি তার কয়েক দশকের কর্মময় জীবনে অসংখ্য বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয়।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে, শ্যামল ছায়া, জয়যাত্রা, আহা!, হুলিয়া, একাত্তরের যিশু, দহন, সন্ত্রাস, ব্যাচেলর প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে সংশপ্তক, নীল নকশার সন্ধানে (১৯৮২), দূরবীন দিয়ে দেখুন (১৯৮২), ভাঙনের শব্দ শুনি (১৯৮৩), ভবের হাট (২০০৭), শৃঙ্খল (২০১০) প্রভৃতি।

কিন্তু এই ফরীদি একজন নিঃসঙ্গ সারথি। এক নীলকন্ঠী বীর মুক্তিযোদ্ধা। এখন শুধু কাগজ-কলমে, সেলুলয়েডে আর স্থির চিত্রে বন্দী তিনি। তবে তিনি যে ছোট দেশের কত বড় মাপের শিল্পী সেটা অনুধাবন করতে পারেনি রাষ্ট্র। নিঃসন্দেহে এটা ব্যর্থতার- এমনই আবেগ মাখা অভিমান রাষ্ট্রের প্রতি হুমায়ূন ফরীদির কাছের মানুষ ও ভক্তদের। শুধু তাই নয়, এবারে যেন ফরীদিকে একুশে পদক দিয়ে যথাযোগ্য সম্মান দেয়া হয় তাই দেশের নানা প্রান্তে থাকা ভক্তরা চালিয়েছেন গণস্বাক্ষর অভিযান। রাজধানীর টিএসসিসহ নানা স্থানে স্বাক্ষর কর্মসূচি হয়েছে।

তাইতো তাকে নিয়ে ‘মিতা’ শিরোনামে জাতীয় দৈনিকে একটি কলাম লিখেছিলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। সেখানে তিনি রাজনীতিবিদ হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, দৈনিক বাংলার সম্পাদক আহমেদ হুমায়ূন, অধ্যাপক ও কবি হুমায়ূন আজাদ, অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি এবং নিজেকেসহ পঞ্চ হুমায়ূনের গল্প শুনিয়েছিলেন। শেষের দিকে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, আচ্ছা, এই মানুষটি কি অভিনয়কলায় একটি একুশে পদক পেতে পারেন না? এই সম্মান কি তার প্রাপ্য না?

বাংলাদেশে যে পাঁচ হুমায়ুনের নাম রয়েছে এক অনন্য শিখরে তাদের মধ্যে ফরীদি অন্যতম। বাকী চাজন কিন্তু একুশে পদক পেয়েছেন শুধু পাননি ‘কান কাটা রমজান’ হুমায়ুন ফরীদি। তার জন্য এই পদকটি দেয়ার কোনো রকম প্রবণতা বা পরিকল্পনাও দেখা গেলনা রাষ্ট্রের কাছ থেকে। ফরিদী ভক্তরা দাবি করেন- ‘পদক তার সৃষ্টিকে কোনোভাবেই মূল্যায়নের মাপকাঠি হয়ে উঠবে না। হুমায়ুন ফরীদির মতো শক্তিমান অভিনেতা একুশে পদক পেলে, একুশে পদক নিজেই ধন্য হত।’

হুমায়ূন ফরীদির মতো সফল মানুষদের জীবন ও কর্মকে সবার কাছে স্মরণীয় করে রাখতে এবং অভিনয়ের আঙিনায় তার অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে তাকে এই সম্মান ও স্বীকৃতিতে ভূষিত করা যেতেই পারে। রাষ্ট্র বা একুশে পদক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কী সময় হবে সেইসব মানুষদের নিয়ে বিবেচনা করবার? মানুষ যাকে ভালোবেসেছে সেই সর্বজয়ী। সেই সমাজ ও দেশের অহংকার। সেক্ষেত্রে একজন হুমায়ুন ফরীদি কি বাংলাদেশের অহংকার নন?