পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছে মার্কিন সেনাবহর

বৃহস্পতিবার ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছে মার্কিন সেনারা। আর এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। জার্মানি থেকে মার্কিন সমরযান রওনা হয়েছে পোল্যান্ডের যাগান শহরে। এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি। খবরে বলা হয়, যাগান শহরে এ সেনাদের ঘাঁটি থাকবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শনিবার এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেনাদের স্বাগত জানাবেন।

এপির খবরে বলা হয়, ১৯৮৯ সালে পোল্যান্ডে কমিউনিজমের পতনের পর রাশিয়ার উত্থাণ ঠেকাতে আমেরিকান সেনার উপস্থিতি নিয়ে অনেক নাগরিকের স্বপ্নই যেন এবার সত্যি হলো। মার্কিন সেনারা ট্যাংক ও অন্যান্য সমরযান নিয়ে পোল্যান্ডের সড়কে প্রবেশ করলে কিছু মানুষ মার্কিন পতাকা নিয়ে সমবেত হয়। ওয়ারশ’তে জার্মান মার্শাল ফান্ড নামে একটি থিংকট্যাংকের পরিচালক মাইকেল বারানোস্কি বলেন, ‘এটি একটি স্বপ্ন পূরণ। এটি স্রেফ একটি প্রতিকী উপস্থিতি নয়। যথেষ্ট শক্তিমত্তা নিয়েই এ সামরিক উপস্থিতি হয়েছে।’ ন্যাটো সামরিক জোটের পূর্বাঞ্চলীয় এই দেশটিতে গত কয়েক বছর বেশ কয়েকটি সামরিক মহড়া চালিয়েছে মার্কিন ও পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু মার্কিন সাড়ে ৩ হাজার সেনা মোতায়েনের এই ঘটনা পোল্যান্ডে দেশটির কোন ন্যাটো মিত্রের প্রথম ঘাঁটি গাঁড়ার ঘটনা।

২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলে নেওয়া ও ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনদানের পর এ অঞ্চলের অনেক দেশই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তখন এ অঞ্চলকে রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নতুন সৈন্য মোতায়েন ওই অঙ্গীকারেরই অংশ। তবে অনেকের আশঙ্কা, হবু প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ক্রেমলিনপন্থী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এই নিরাপত্তা শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হতে পারে।

পোল্যান্ড ও লিথুনিয়ার মধ্যখানে অবস্থিত রাশিয়ার ছিটমহল কালিনিনগ্রাদে দেশটি সম্প্রতি পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। এ নিয়েও পোল্যান্ড ও অন্যান্য বাল্টিক রাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তবে রাশিয়া বলছে, তারাই বরং হুমকিতে রয়েছে। বৃহ¯পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ¬াদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কোভ বলেন, ‘এই পদক্ষেপ আমাদের স্বার্থ ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি। বিশেষ করে, কোন ইউরোপিয়ান দেশও নয়, বরং একটি তৃতীয় পক্ষ আমাদের সীমান্তের পাশে এসে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করছে।’

তবে পোল্যান্ডের অনেকেই মার্কিন নতুন নিরাপত্তা অঙ্গীকারের স্থায়িত্ব নিয়ে চিন্তিত। এই উদ্বেগ নিহিত রয়েছে এক বিয়োগান্তক ইতিহাসে। পোল্যান্ড প্রায়ই বিশ্বশক্তিগুলোর চুক্তিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। নিজের প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পদক্ষেপ নেন ওবামা। ওই পদক্ষেপের আওতায় পোল্যান্ডে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের পরিকল্পনা ত্যাগ করেন তিনি। এর বদলে আরও কম শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও, সেটিও নেওয়া হয়নি।

ভিসেগ্রাড ইনসাইট নামে কেন্দ্রীয় ইউরোপের একটি বিশ্লেষণমুখী সাময়িকীর জ্যেষ্ঠ অ্যাসোসিয়েট মার্চিন জাবোরোস্কি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সকল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভেবেছেন এ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বুঝি অনেক দর কষাকষি করা যাবে। ট্রাম্পের চুক্তি করার এক ধরণের স্বাভাবিক প্রবণতা রয়েছে। এ কারণে মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলীয় ইউরোপের উদ্বেগের কারণ রয়েছে।’ পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইটোল্ড ওয়াসজিকোস্কি এ সপ্তাহে আশা ব্যক্ত করে বলেছেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার যেকোন নতুন চেষ্টা যাতে আমাদেরকে বিকিয়ে দিয়ে না হয়।