সিলেটে বিধ্বংসী ব্যবস্থা নিয়ে জঙ্গিদের অবস্থান

সিলেটে বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে জঙ্গিরা অবস্থান করছেন। আতিয়া মহলে প্রবেশের  প্রতিটি গেটে শক্তিশালী বিস্ফোরক লাগিয়ে রেখেছে জঙ্গিরা। এ থেকেই বোঝা যায়, সিলেটে জঙ্গিদের শক্তিশালী গোছানো অবস্থান রয়েছে। আতিয়া মহলের পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় অবস্থান করছে জঙ্গিরা। ভবনের নিচে বাঙ্কারে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ নিয়ে তারা অবস্থান করছে।

এতে করে ভবনের ভিতরে ঢুকতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। জঙ্গিরা এখন পর্যন্ত ১০টি গ্রেনেড ও ৫ থেকে ৬টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এছাড়া সিলেটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর  অভিযান প্রতিহত করতে জঙ্গিরা ভয়াবহ কৌশল নিয়েছে। একদল জঙ্গি আস্তানায়, আরেকদল বাইরে অবস্থান নিয়েছে। ইতোমধ্যে উত্সুক জনতার মধ্যে ঢুকে দুই দফা হামলা চালিয়েছে। এতে ৩ জন নিহত ও দুই র‌্যাব সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

পুরো ভবন সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ঘিরে রেখেছে। অন্যদিকে ভবনের চারপাশ এলাকায় আরেক স্তরে সেনাবাহিনী ঘিরে রেখেছে। আতিয়া মহল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে এলাকাটি ঘিরে রেখেছে র‌্যাব-পুলিশ। এর মধ্যদিয়ে অনেক দূরে অবস্থান নেওয়া উত্সুক জনতার মাঝে রাত সাড়ে ৮টা দিকে আরেক দফা আত্মঘাতী হামলা হয়েছে। জঙ্গিদের পরিকল্পনা ছিল সোয়াতসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আক্রমণ করলে তারা বাইরে থেকে আক্রমণ করত। এই এলাকার আশপাশে আরো জঙ্গিদের অবস্থান রয়েছে বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত হয়েছে।

এদিকে সিলেট মহানগরের শিববাড়ির ‘আতিয়া মহল’-এর জঙ্গি আস্তানায় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোর চালানো অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ অব্যাহত রয়েছে। কখন এ অভিযান শেষ হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে এর আগেই ভবন থেকে সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল ৭৮ জন বেসামরিক লোককে উদ্ধার করে। ভবনের সঙ্গে মই বেঁধে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন নারী ও ২১ শিশু রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিরা ওই ভবনে বসবাসরত বাসিন্দাদের জিম্মি করে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নিতে চেয়েছিল। কিন্তু কমান্ডোদের ত্বরিত হস্তক্ষেপের কারণে তারা সেই সুযোগ পায়নি।

লোকালয়ে জঙ্গিদের এমন শক্তিশালী অবস্থান ভাবিয়ে তুলেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। জঙ্গিদের মাইকে আত্মসমর্পণের আহবান জানালেও তারা আত্মসমর্পণ করেনি। ৫ তলা বিশিষ্ট আতিয়া মহলে ৩০টি ফ্ল্যাটে ১৫০টি কক্ষ রয়েছে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশিদুল হাসান জানান, ভবনটির বিভিন্ন ফ্ল্যাটে বসবাসকারী ৭৮ জন বেসামরিক লোককে নিরাপদে উদ্ধার করে আনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সেনা কমাণ্ডোরা চেষ্টা করছেন জঙ্গিদের জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করতে।

জঙ্গিরা বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ জমা করেছিল। তারা বিস্ফোরক দিয়ে কমান্ডোদের প্রবেশে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। এজন্য অপারেশনটি অনেক সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হচ্ছে। জঙ্গিদের জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তাই অনেক সময় লাগছে। ধারণা করা হচ্ছে আতিয়া মহলের নিচতলার বাঙ্কারে ৫/৭ জন জঙ্গি থাকতে পারে। অভিযানে অংশ নেওয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

হঠাত্ করেই আবার আগ্রাসী হয়ে উঠেছে জঙ্গিরা। গত জুলাইয়ে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্টুরেন্টে হামলার পর দেশব্যাপী জঙ্গি বিরোধী কঠোর অভিযানে নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। মিরপুরের রূপনগর কল্যাণপুর, আজিমপুর এবং নারায়ণগঞ্জের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট একের পর এক জঙ্গি আস্তানায় হানা দিয়ে জঙ্গিদের গ্রেফতার করে। ওই অভিযানে নিহত হয় শীর্ষস্থানীয় বহু জঙ্গি। এতকিছুর পরও জঙ্গিদের তত্পরতা থেমে নেই। সমপ্রতি যেসব হামলা হয়েছে তার বেশিরভাগ হামলাই হয়েছে পুলিশের উপর।

সমপ্রতি কুমিল্লায় বাস থেকে নেমে দুই জঙ্গি পুলিশের উপর বোমা হামলা শুরু করে। এর আগে টঙ্গিতে মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নিতে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালানো হয়। তার আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর গোদাগাড়িতে পুলিশ কনস্টেবলদের ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে জঙ্গিরা।