জন লুইসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব: ট্রাম্পের শপথ বর্জন করবেন ৩২ কংগ্রেস সদস্য

প্রখ্যাত নাগরিক অধিকার কর্মী ও  ডেমোক্রেট কংগ্রেসম্যান জন লুইসের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। এর ফলে সৃষ্ট উত্তেজনায় শুক্রবার ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না কমপক্ষে ৩২ কংগ্রেস সদস্য। এর মধ্যে রয়েছে ডেমোক্রেট দলের কমপক্ষে ৩০ জন ও ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকানের দু’জন।

উল্লেখ্য, নাগরিক অধিকার কর্মী জন লুইস যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক জনপ্রিয়। তিনি মার্টিন লুথার কিংয়ের সঙ্গে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনের একজন সহযোগী। মার্টিন লুথার কিংয়ের সঙ্গে একমঞ্চে বক্তব্য রেখেছেন। তাই তার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।

গত শুক্রবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পকে ‘অবৈধ প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রা¤প শুক্রবারই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে জন লুইসকে নিয়ে কঠিন সমালোচনা করেন। তিনি টুইটে বলেন, জন লুইস শুধু কথারই ভান্ডার। কোনো কাজে-কর্মে নেই।
তাকে নিয়ে এমন মন্তব্যের কারণে কমপক্ষে ৩২ কংগ্রেস সদস্য ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে তারা প্রকাশ্যে কথা বলছেন। সিএনএনের সরাসরি সম্প্রচারে বক্তব্য রাখছেন তার দল রিপাবলিকান কংগ্রেসওমেন বারবারা লি।

তিনি এ বিষয়ে নিজের টুইট একাউন্ডে কড়া এক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। বলেছেন,  অভিষেক অনুষ্ঠান হওয়া উচিত আনন্দের। কিন্তু ২০শে জানুয়ারি আমাদের উদযাপনের কিছুই নেই। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পরিবর্তে আমি সাংগঠনিক কাজ করবো। তার একাউন্টে ১৭ই জানুয়ারি পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কংগ্রেসওমেন বারবারা লি ঘোষণা করছেন যে, তিনি শুক্রবার ২০শে জানুয়ারি ডনাল্ড জে. ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না। ২০শে জানুয়ারি আমরা কিছুই উদযাপন করবো না। এমনকি সম্মানীত করবো না নতুন প্রেসিডেন্টকে। তিনি বর্ণবাদ, যৌনতা, বিদেশী সম্পর্কে অহেতুক ভীতি এবং একগুঁয়েমি নিয়ে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউজে। ডনাল্ড ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি বিভক্তি সৃষ্টিকারী হিসেবে প্রচারণা চালিয়েছেন। কুসংস্কার ছড়িয়েছেন আধুনিক ইতিহাসে। তিনি অবমাননা করেছেন মেক্সিকোর অভিবাসীদের। দেড় বছর তিনি বর্ণবাদের ভিত্তিতে সম্প্রদায়ের মধ্যে অবমাননাকর কথা বলেছেন। তিনি নারীদের বলেছেন ‘পিগ’। ইসলাম সম্পর্কে ভীতি ছড়িয়েছেন। ইরাক যুদ্ধে গিয়ে নিহত এক সেনা কর্মকর্তার পরিবার, যারা কিনা গোল্ডেন স্টার পরিবার হিসেবে পরিচিত তাদেরকে আক্রমণ করেছেন। তিনি একজন বিকলাঙ্গ সাংবাদিককে নিয়ে মস্করা করেছেন। সরকারে এমন বিভক্তি সৃষ্টিকারীর শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমার চেতনা আমাকে সায় দেয় না। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে জন লুইস একজন বীর হিসেবে সম্মানীত। ১৯৬৫ সালে সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকারের দাবিতে সেলমা-মন্টতগোমেরিতে যে আন্দোলন হয়েছিল তাতে যোগ দিয়েছিলেন জন লুইস। ওই সময় পুলিশের হাতে প্রহৃত হন তিনি। মার্টিন কিং দিবস পালনের দিনে প্রয়াত মার্টিন লুথার কিংয়ের সন্তানরা ট্রাম্প ও জন লুইসের মধ্যকার বিরোধ নিয়ে মুখ খুলেছেন। মার্টিন লুথার কিংয়ের বড়ছেলে তৃতীয় মার্টিন লুথার কিং নিউ ইয়র্কে ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন ট্রাম্প টাওয়ারে। ওই সাক্ষাতকে তিনি অত্যন্ত গঠনমুলক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এর মধ্য দিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা হ্রাস পাবে বলে অনেকে মনে করেন। তৃতীয় মার্টিন লুথার কিং বলেছেন, উত্তেজনাকর এই সময়ে অনেক বিষয় নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে তার বোন বার্নিস কিং আটলান্টায় একটি চার্চে বলেছেন, ঈশ্বরই ট্রাম্পের বিষয়টি দেখবেন। ট্রাম্পের ওপর সৃষ্টিকর্তাই বিজয়ী হবেন। ওদিকে যেসব কংগ্রেস সদস্য ট্রাম্পের শপথ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তার মধ্যে নিউ ইয়র্কেই রয়েছেন ৫ জন। এর একজন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ইয়েত্তি ক্লার্ক। তিনি বলেন, জন লুইসকে অপমান করার মানে হলো আমেরিকাকে অপমান করা। প্রতিনিধি পরিষদে ক্যালিফোর্নিয়া সদস্য টেড লিউ বলেছেন, আমার জন্যে ব্যক্তিগতভাবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার পেছনে কারণটি খুবই সহজ। আমি কি ডনাল্ড ট্রা¤পকে সমর্থন করি নাকি জন লুইসকে? অবশ্যই জন লুইসকে। শপথ বর্জনের পক্ষে গত ডিসেম্বরে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন ইলিনয়ের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য লুইস গিটারেজ। তিনি প্রতিনিধি পরিষদে বলেছেন, বিভিন্ন বক্তব্যে এবং টুইটে নারী, লাতিন, কালো চামড়ার মানুষ, মুসলিম এবং অন্য সব বিষয় নিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্প যা বলেছেন আমি যদি সব আমার স্মৃতি থেকে মুছে দিয়ে শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিই তাহলে নিজের সহধর্মিনী, মেয়ে বা নাতীদের চোখে চোখ রেখে আর কোনদিন কথা বলতে পারবো না। শপথ নেয়ার দিন ওয়াশিংটন ও লন্ডন সহ বিভিন্ন স্থানে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ করবেন হাজার হাজার নারী। শপথ অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে ওয়াশিংটনে এমনই এক বিক্ষোভ, সমাবেশে যোগ দেয়ার কথা জানিয়েছেন লুইস গিটারেজ। এর আগে এনবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জন লুইস বলেছিলেন, ট্রাম্প একজন অবৈধ প্রেসিডেন্ট। ওই শপথ অনুষ্ঠান তিনি বর্জন করবেন। মুলত তার এমন বক্তব্যের কারণেই ট্রাম্পের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। জন লুইস গত ৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সদস্য। এ সময়ের মধ্যে যতজন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় এসেছেন তাদের সবার শপথ অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষেত্রে ঘটবে তার ব্যতিক্রম।