বিডিসংবাদ অনলাইন ডেস্কঃ
পুলিশের অনুমতি না থাকলেও ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যেতে অনড় বিএনপি। শনিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ শনিবার তাদের কর্মসূচি স্থগিত করলেও ঢাকা শহরজুড়ে ‘সতর্ক পাহারায়’ থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
শুক্রবার বিএনপি ঢাকার প্রবেশমুখে কর্মসূচি ঘোষণার পর একই জায়গায় পাল্টা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ।
রাজনৈতিক এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই পুলিশ জানিয়েছে কেউ শনিবার কোনো কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলে তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবে। পুলিশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়েছে।
রাতেই ডিএমপি জানিয়েছিল যে আইনশৃঙ্খলা অবনতির গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় শনিবারের সকল রাজনৈতিক দলের অবস্থান কর্মসূচি পালনে ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুমতি দেয়া হলো না।
এর আগে শুক্রবার নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার সব গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল।
বিএনপি ছাড়াও তাদের সাথে সরকার বিরোধী আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এই কর্মসূচি পালনের কথা।
জবাবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমিনবাজার, গাবতলী, টঙ্গী ও আব্দুল্লাপুরসহ কয়েকটি স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় যুবলীগ।
কিন্তু রাতেই ডিএমপি জানায় এসব কর্মসূচির জন্য তারা কাউকে কোনো অনুমতি দেয়নি। ফলে এ ধরণের কর্মসূচি কেউ পালনের চেষ্টা করলে তারা কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়।
এদিকে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই রাতে বেশ কিছু নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
উল্লেখ্য, সরকার পতনের এক দফা দাবি নিয়ে গত কিছুদিন ধরে সমমনা দল ও জোটগুলোকে নিয়ে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।
দলের নেতারা জানিয়েছেন, দাবি আদায়ে একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা আছে দলটির।
আবার গত কয়েকদিন ধরে বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দিক থেকেও। শুক্রবার দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জনগণের জানমাল ও সম্পদ রক্ষায় তারা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় থাকবেন’।
কোথায় থাকবে বিএনপি
পুলিশের অনুমতি না দেয়ার বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও বিএনপি নেতাদের কয়েকজন জানিয়েছেন চারটি স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্তে তারা কোনো পরিবর্তন আনেননি। ফলে গাবতলী, নয়াবাজার, শনির আখড়া ও উত্তরায় এ কর্মসূচি সফলের জন্য রাতভর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।
উত্তরায় দলীয় নেতা আব্দুল মঈন খান, গাবতলীতে নজরুল ইসলাম খান, নয়াবাজারে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দনিয়ায় মীর্জা আব্বাস বিএনপির কর্মসূচির নেতৃত্ব দিবেন বলে দল থেকে জানানো হয়েছে।
দলের নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এ কর্মসূচিকে সফল করার জন্যই শুক্রবারের মহাসমাবেশে ঢাকার বাইরে থেকে যারা এসেছে তাদের ঢাকায় থেকে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।
যদিও দলের কেউ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাস শুক্রবারের মহাসমাবেশেই বলেছিলেন যে তারা এখন থেকে আর কোনো কর্মসূচির জন্য পুলিশের অনুমতি চাইবেন না।
এর আগে গত ডিসেম্বরে ঢাকার গোলাপবাগের সমাবেশ থেকে দশ দফার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি।
এসব দাবির মধ্যে ছিল বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, ১৯৯৬ সালের সংবিধান সংশোধনের আলোকে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের সাজা বাতিল।
পরে গত ১২ জুলাই নয়াপল্টনেই এক সমাবেশ থেকে ‘সরকারের পদত্যাগের এক দফা’ দাবি ঘোষণা করে সমমনা দল ও জোটকে সাথে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি।
এরপর এ দাবিতে তারা গত ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা পালন করেছে।
দলটির নেতারা বলেছেন, সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে তারা ধারাবাহিকভাবে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
যুবলীগ কোথায় থাকবে
পুলিশের অনুমতি না থাকায় অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে এলেও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় সতর্ক পাহারায় থাকার কথা জানিয়েছেন যুবলীগের নেতারা।
বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিএনপি সমর্থকরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করবে তার আশেপাশেই সরকারি দলের সমর্থকদের অবস্থান নেয়ার পরিকল্পনার খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে শুক্রবার আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের শান্তি সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচির তীব্র সমালোচনা করেন ও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, ‘রাস্তা বন্ধ করতে আসবেন না। রাস্তা বন্ধ করলে আমরাও আপনাদের চলার রাস্তা বন্ধ করে দেবো।’
এসব কারণে আজ বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে সরকার দলীয় কর্মী ও নেতারা আজ ঢাকায় সক্রিয় থাকবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি
বিডিসংবাদ/এএইচএস