বিডিসংবাদ অনলাইন ডেস্কঃ
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-২০ বিশ্বকাপের মূল পর্বের গ্রুপ-এ তে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার সাথে আছে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং আফগানিস্তান। পরে আরো দুটি দল কোয়ালিফায়ার খেলে যোগ দেবে এই গ্রুপে। আপাতত আফগানিস্তানের জন্য যথেষ্ট কঠিন এক গ্রুপই মনে হচ্ছে।
র্যাঙ্কিংয়ে আফগানিস্তানের অবস্থান ১০ নম্বরে।
আফগানিস্তানের জন্য আশার ব্যাপার হলো, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রায় নিয়মিত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেছেন এমন কিছু ক্রিকেটার আছেন, এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে বিশ্বকাপে।
রশিদ খান দলটির মধ্যমণি
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেরই অন্যতম সফল এই বোলার অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া লিগ বিগ ব্যাশেও তুমুল জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের একজন।
রশিদ খানও নিজের শক্তি সম্পর্কে সচেতন, এই বছর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপে দারুণ শুরুর পর তিনি বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টির সেরা লিগগুলোতে খেলার কারণে ভালো ক্রিকেটারদের থেকে শিখতে পারছেন তারা।
এটা দলটাকে সাহায্য করছে এবং সামনেও করবে।
ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর বিগ ব্যাশ টি-টোয়েন্টি লিগের সর্বকালের সেরা একাদশের একমাত্র- নন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন রশিদ খান। তিনি স্বভাবজাত উইকেট টেকার। স্পিনার হিসেবে বল খুব বেশি ঘোরান না কিন্তু বাতাসে তার বলের গতির কারণে গুগলি ছুঁড়ছেন নাকি লেগস্পিন এটা বোঝা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে যায়। তাই তার বলে রান নেয়াটাও ব্যাটসম্যানের জন্য মুশকিল হয়ে পড়ে।
বিগ ব্যাশে রশিদ খান ৬ দশমিক ৩৬ ইকোনমি রেটে বল করেছেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে (বিগ ব্যাশে) প্রচলিত টার্ম- এমভিপি- মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের মধ্যেও আছেন তিনি।
এটা পরিমাপ করা হয় ব্যাটিং ও বোলিং এ একজন ক্রিকেটার কী ধরনের প্রভাব রাখছেন ম্যাচে সেটা নির্ণয় করে।
রশিদ খান ব্যাট হাতে মাঠে নেমেও ২৫৩ রান তুলেছেন তিনি শেষের দিকে ব্যাট করতে নেমে, বেশ কয়টি ম্যাচ জেতা ইনিংসও আছে এখানে।
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে রশিদ এতটাই প্রভাব ফেলেছেন, এই বছর তার বিগ ব্যাশ দল অ্যাডেলেইড স্ট্রাইকার্সের কোচ জেসন গিলেস্পি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রশিদ খানকে দলে ধরে রাখতে সম্ভাব্য সবই করবেন তারা।
মূল শক্তি স্পিন
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ফাস্ট বোলিং ক্রিকেটে বেশ আলোচিত ও উপভোগ্য হলেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে স্পিনটা বেশ কার্যকর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের সেরা ১০ বোলারের তালিকায় নয়জনই স্পিনার।
আফগানিস্তানেরই আছেন দু’জন। রশিদ খানের সাথে আছেন, মুজিব উর রহমান।
সাথে অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী ও নবাগত স্পিনার কাইস আহমেদ আছেন এবারের দলে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন হলেও কাইস ১২৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে, ১৪৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি ৭.১০ ইকোনমি রেটে।
মুজিব উর রহমান আফগানিস্তানের আরেকজন বিশেষ স্পিনার যিনি পাওয়ারপ্লেতে বল করেন, রান দেন ওভার প্রতি ছয়ের মতো।
৩৩টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৪৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
প্রথা মেনে অফস্পিনের সাথে মুজিব লেগ স্পিন এবং গুগলিও করতে পারেন দক্ষতার সাথে।
ব্যাটিং দুর্বল কিন্তু এখন উন্নতির পথে
আফগানিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার রশিদ খান মনে করেন, ব্যাটসম্যানরা এখন উন্নতি করছে, বিশেষত তরুণ ব্যাটসম্যানরা বিস্ফোরক ইনিংস খেলতে পারেন বলে বিশ্বাস তার।
তবে আফগানিস্তান যেহেতু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় দলের সাথে খেলার খুব একটা সুযোগ পায় না, সেজন্য রশিদ খান মনে করেন টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের খেলানোর দরকার বেশি বেশি।
ওপেনিংয়ে রহমতউল্লাহ গুরবাজ, তিনি এই এশিয়া কাপে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী দেখিয়েছেন, হজরতউল্লাহ জাজাইও পরীক্ষিত ওপেনার।
গত এক বছরে আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান নাজিবুল্লাহ জাদরান। ছক্কা পেটানোতে পারদর্শী তিনি। শেষ ১৭ ম্যাচে ২২টি চারের বিপরীতে ২৬টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ১৪৬.৭৮।
তবে মিডল অর্ডারে মোহাম্মদ নবীর ফর্ম আফগানিস্তানের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়।
আরেকটা বড় ঘাটতির জায়গা আফগানিস্তানের ফাস্ট বোলিং। একমাত্র ফজল হক ফারুকী ছাড়া লাইনআপে বলার মতো ফাস্ট বোলার নেই।
নাভিন উল হক ওভার প্রতি সাড়ে নয়ের মতো রান দিয়ে আসছেন গত এক বছরে।
সব মিলিয়ে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে জিতে সেমিফাইনালে জায়গা পেতে আফগানিস্তানকে বিশেষ কিছু করে দেখাতে হবে।
সূত্র : বিবিসি
বিডিসংবাদ/এএইচএস