ওয়ানডে দলে নেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ‘বিশ্রাম’ নাকি ‘ক্যারিয়ার শেষের’ ইঙ্গিত?

বিডিসংবাদ অনলাইন ডেস্কঃ

প্রথমে টেস্ট থেকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অবসর, তারপর টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ, এবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে দলে নেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

দুই বছর ধরেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক্যারিয়ারের এমন একটা সময় কাটাচ্ছেন, যেখানে তাকে প্রমাণ করতে হয়েছে, বাংলাদেশের এই দলকে তিনি কী দিতে পারেন।

টেস্ট ক্রিকেটে মাহমুদুল্লাহ আট বছর কোনো সেঞ্চুরি না করেও দলে টিকেছিলেন।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে এর আগের মেয়াদে একাদশ থেকে সরিয়েছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহে।

শ্রীলঙ্কার মাটিতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের ১০০তম টেস্ট ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ একাদশ থেকে বাদ পড়েছিলেন।

ঠিক ছয় বছর পর আবারো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নাম নেই ওয়ানডে স্কোয়াডে, এবারো কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহে।

তবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ‘খারাপ সময়’ শুরু হয়েছে হাথুরুসিংহে বাংলাদেশে কোচ হিসেবে আসার বেশ আগে।

পরিসংখ্যান কী বলে?
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যারিয়ার গ্রাফ গত পাঁচ বছর ধরেই পড়তির দিকে। এটা পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট।
২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে রিয়াদ ৭০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন, এই সময়ে তিনি রান তুলেছেন ১৭৩২।

একই সময়ে সাকিব ৪৭টি ও লিটন দাস ৫১টি ম্যাচ খেলেও রিয়াদের চেয়ে বেশি রান পেয়েছেন।

একই সময় বাংলাদেশের সেরা পাঁচ রান সংগ্রাহকদের মধ্যে তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের স্ট্রাইক রেট ওয়ানডে ক্রিকেটে আশিরও নিচে।

এক সময় ম্যাচ উইনার হিসেবে খ্যাতি পাওয়া মাহমুদুল্লাহ ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে ধীরগতির ক্রিকেটার বনে যাচ্ছিলেন।

আধুনিক ক্রিকেটে লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করেন এমন ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট ৭৬ প্রায় অকল্পনীয়। শেষ দুই সিরিজে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের স্ট্রাইক রেট আরো কম, মাত্র ৬৯।

যদিও বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যর্থতার কথা বলা হয়ে থাকে নিচের দিকের ব্যাটসম্যানদের ধীরগতির বোলিংয়ের জন্য, কিন্তু এখানে স্ট্রাইক রোটেটের দিকে মনযোগী হওয়ার কথা বলেন বিশ্লেষকরা।

স্ট্রাইক রোটেট হচ্ছে নিয়মিত এক বা দুই রানের জন্য প্রান্ত বদল করার চেষ্টা করা, যাতে করে খুব বেশি ঝুঁকি না নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখা যায়।

কখনো কখনো একটি দু্টি বাউন্ডারি মারলেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দৌড়ে নিয়মিত রান নিতে সংগ্রাম করছেন সম্প্রতি।

শেষ দশ ওভারে বাংলাদেশের যতটা রান তোলার কথা সেটা আসলে হচ্ছে না। এখানেই বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট এমন কাউকে খুঁজছে যিনি নিয়মিত বিরতিতে বাউন্ডারির পাশাপাশি স্ট্রাইক রোটেট করতে পারেন।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ শেষ ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেছেন ২০১৭ সালে। শেষ সাতটি ওয়ানডে সিরিজে মাত্র দুটি ফিফটি তুলেছেন তিনি।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, এখন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের জায়গায় খেলতে পারে এমন ব্যাটসম্যানরা নিজেদের প্রমাণ করেছেন শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে।

যেমন তাওহীদ হৃদয় সম্প্রতি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেকেই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। আদিল রাশিদের মতো অভিজ্ঞ বোলারকে সামলেছেন এবং দলের জয়ে ভূমিকা রেখেছেন।

আফিফ হোসেন আগে থেকেই রিয়াদের জায়গায় খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। আফিফ হোসেন ওয়ানডে ক্রিকেটে ছয় বা সাত নম্বরে নেমে ম্যাচ জিতিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ইতি?
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন ২০২১ সালে। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড থেকেও বাদ পড়েন। আর ছ‘মাস পরেই ভারতের মাটিতে যখন বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তার আগে স্কোয়াড থেকে বাদ পড়লেন তিনি।

বাংলাদেশের নির্বাচক প্যানেলের সদস্য হাবিবুল বাশার সুমন সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেক সময় রিজার্ভ ক্রিকেটারদের যদি সুযোগ না দেন, তাহলে একাদশের ক্রিকেটাররা ইনজুরিতে পড়লে তারা বিপদে পড়ে যেতে পারে।’

রিয়াদকে আপাতত বিশ্রাম দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক।

‘ব্যাটসম্যানদের টপ অর্ডারে আমাদের পরীক্ষা করার সুযোগ নেই। তবে মিডল অর্ডারে যেহেতু জায়গা আছে তাই আমরা দেখছি।’

রিয়াদ আবার ফিরবেন কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘এখনই বলা কঠিন।’

এই নির্বাচকের মতে, ‘আয়ারল্যান্ড সিরিজ নতুনদের পরখ করে দেখার জায়গা, যে কোনো ক্রিকেটারের ইনজুরি হতে পারে।’

বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামির মতে, ‘রিয়াদকে বাদ দিয়ে একেবারে আনকোরা দল নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে। তাই এই ক্রিকেটারদের একবার ঝালিয়ে নেয়া হবে সামনের ম্যাচগুলোতে।’

তিনি যোগ করেন, ‘ভারতে বা ইংল্যান্ডে প্রমাণিত ক্রিকেটার আছেন। যেমন ভারত চাইলেই শুভমন গিল বা শ্রেয়াস আইয়ারকে বাদ দিয়ে দল গড়তে পারে। বাংলাদেশের এই সুবিধা নেই যেহেতু ক্রিকেটার কম।’

তাই নতুন ক্রিকেটারদের একটা সুযোগ দেয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি

বিডিসংবাদ/এএইচএস