ক্রাইমিয়া সেতুতে ‘সন্ত্রাসী হামলার’ উপযুক্ত জবাব দেয়ার ঘোষণা পুতিনের

বিডিসংবাদ অনলাইন ডেস্কঃ

ক্রাইমিয়া সেতুর ওপর ‘সন্ত্রাসী’ আক্রমণের উপযুক্ত জবাব দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার দখল করে নেয়া ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের সাথে সংযোগকারী একমাত্র সেতুটির ওপর সোমবারের ওই হামলায় দু’জন নিহত হয়েছে।

এ ঘটনায় ইউক্রেনকে দায়ী করেছে মস্কো। কিন্তু কিয়েভ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দায়দায়িত্ব স্বীকার করেনি।

ইউক্রেনের একটি উপদ্বীপ ক্রাইমিয়াকে ২০১৪ সালে দখল করে সংযুক্ত করে নিয়েছিল রাশিয়া। এরপর ২০১৮ সালে রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার মধ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগ সম্বলিত কার্চ সেতুটি তৈরি করা হয়।

রাশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেতুটির সাপোর্ট ব্যবস্থা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

এখনো ওই ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে অসমর্থিত খবরে বলা হচ্ছে সোমবার সকালে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

ইউক্রেনকে দায়ী করে রাশিয়ার কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, আনম্যানড সার্ফেস ভ্যাসেল (ইউএসবি) ড্রোন, যা আকাশে নয় বরং পানির ওপর দিয়ে চলে- তা দিয়ে সেতুটির ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে।

কিন্তু এই দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ দেখতে পায়নি বিবিসি।

তবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র বিবিসি রাশিয়াকে জানিয়েছে, তারাই হামলা চালিয়েছে এবং পানিতে চলে, এমন ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় একটি টেলিভিশন ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘দায়িত্বহীন’ এবং ‘নিষ্ঠুর’ হামলা চালানোর অভিযোগ এনেছেন।

ওই হামলায় সেতুর ওপরের সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পাশেই যে রেললাইন রয়েছে, সেটির ক্ষতি হয়নি।

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য সেতুটি রাশিয়ার বাহিনীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে টেলিভিশনে এসে উপ-প্রধানমন্ত্রী মারাত খুসনুলিন বলেছেন, ১ নভেম্বরের মধ্যে সেতুটির মেরামত কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে। আর ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেতুর ওপরের সড়কের একদিকের চলাচল চালু হবে।

সোমবারের হামলার পর ক্রাইমিয়া থেকে বের হওয়ার অন্য সড়ক পথে ব্যাপক জ্যামের তৈরি হয় এবং অনেক রেল চলাচল বিলম্বিত হয়। সেতুর পাশাপাশি যে ফেরি চলাচল চালু রয়েছে, সেখানেও ব্যাপক জ্যামের তৈরি হয়।

ছুটি কাটাতে গিয়ে যারা ক্রাইমিয়ায় আটকে পড়েছে, তাদের ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের অন্য যেসব এলাকা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দখলে রয়েছে, সেদিন থেকে ফেরার জন্য পরামর্শ দিয়েছে রাশিয়ার কর্মকর্তারা। এজন্য কার্ফুর সময়সীমা কমিয়ে আনা হবে এবং সেনাবাহিনী পথঘাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ করবে।

ইউক্রেনের রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই ক্রাইমিয়ায় বাণিজ্যিক বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ক্রাইমিয়াতে রুশ প্রশাসনের প্রধান সের্গেই আকসিনভ টেলিগ্রামে দেয়া এক পোস্টে বলেছেন, ‘ক্রাইমিয়ার ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমি উপদ্বীপের বাসিন্দা ও অতিথিদের ক্রাইমিয়ার সেতু দিয়ে চলাচল করা থেকে বিরত থাকতে বলেছি। নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের নতুন অঞ্চলের ভেতর দিয়ে অন্য রুট ব্যবহার করতে বলা হয়েছে,’ বলছেন নাতালিয়া হুমেনিউক।

রাশিয়া গত বছর ইউক্রেনের কাছ থেকে যেসব এলাকা – খেরসন, জাপোরিশা, লুহান্সক এবং দনিয়েস্ক- দখল করে নিয়েছে সেসব অঞ্চলকে এভাবেই উল্লেখ করে থাকে।

বিবিসির রুশ বিভাগ বলছে, সেতুর সমান্তরালে যে ফেরি চলাচল করতো সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বিবিসি নিউজের সাংবাদিক জন ইনউড বলছেন অবৈধভাবে ক্রাইমিয়া দখল করে নেয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এই কার্চ ব্রিজ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর উদ্দেশ্য ক্রাইমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার ‘শারীরিক সংযোগ’ স্থাপন। ক্রাইমিয়া রাশিয়ারই অংশ- এটা বোঝাতে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।

নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর পুতিন নিজে এর উপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে যান।

জন ইনউড বলছেন, মস্কো এ সেতুটিকে যতটা ভালোবাসে, কিয়েভ ঠিক ততোটাই এটাকে ঘৃণা করে।

তিনি বলেন, গত বছরের অক্টোবর মাসে বিস্ফোরণে যখন সেতুর কিছু অংশ ধসে পড়ে, তখন ইউক্রেনের ডাক বিভাগ এই ঘটনার স্মরণে কিছু ডাকটিকিটও প্রকাশ করেছিল। ক্রাইমিয়ার সেতুতে এই বিস্ফোরণের ঘটনাকে ইউক্রেনের আনন্দের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

সূত্র : বিবিসি

বিডিসংবাদ/এএইচএস