নেটিজেনদের বিদ্রূপের শিকার হয়েও শান্তর ম্যাচ উইনার হয়ে ওঠার গল্প

বিডিসংবাদ অনলাইন ডেস্কঃ

নাজমুল হোসেন শান্ত এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারদের একজন। চলতি বছর দেশের হয়ে দু’টি সিরিজে ম্যান অফ দ্য সিরিজের পুরস্কার পেয়েছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল চলতি বছর দু’টি দলের সাথে সিরিজ খেলেছে, প্রথমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি, এরপর ঘরের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ফরম্যাটে সিরিজ এবং সর্বশেষ যুক্তরাজ্যে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ।

যার মধ্যে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ও সদ্য শেষ হওয়া আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ঘরে তুলেছেন শান্ত।

শান্তকে নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেই ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন বলেছিলেন, ‘শান্ত এখন বাংলাদেশের তারকা’

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লিটন দাস ও তামিম ইকবালেরর ছন্দে না থাকা একেবারেই বুঝতে দেননি শান্ত।

যাকে দলে নিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল নির্বাচক প্যানেলের, সেই শান্ত এখন নির্বাচকদের জন্য স্বস্তির কারণ।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেন, জাতীয় দলে যে ক্রিকেটার একবার সুযোগ পান, তাকে লম্বা সময়ের কথা বিবেচনা করেই নেয়া হয়। এমন না যে কিছু ম্যাচ খারাপ করলেই তাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া হবে।

নাজমুল হোসেন শান্ত বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। একজন তরুণ ব্যাটারকে পরীক্ষার মুখে ফেলার কারণে তখন টিম ম্যানেজমেন্টের সমালোচনা হয়েছিল।

শান্ত নিজেও খানিকটা সময় নিয়েছেন, কিন্তু ছয় বছরে শান্ত কি আসলেই অনেক ম্যাচ খেলেছেন? জানুয়ারি ২০১৭ তে শান্ত প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর গত ছয় বছরে বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচ খেলেছে ৪১টি। এর মধ্যে ২২টি টেস্টে শান্ত সুযোগ পেয়েছেন, যেখানে তার দুটি শতক রয়েছে।

শান্ত প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এশিয়া কাপের সেই ম্যাচসহ সদ্য সমাপ্ত আয়ারল্যান্ড সিরিজ পর্যন্ত বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলেছে ৬৮টি, যার মধ্যে নাজমুল হোসেন শান্ত সুযোগ পেয়েছেন ২৪টিতে।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও নাজমুল হোসেন শান্ত তার অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশের খেলা ৬৩টি ম্যাচের মধ্যে সুযোগ পেয়েছেন ২৩টি তে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২ এ বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানও তুলেছেন তিনিই। চলতি বছর নয় ম্যাচে ৫০ গড়ে ৮৮ স্ট্রাইক রেটে ৪০৫ রান তুলেছেন। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, অভিষেকের পর থেকে নাজমুল হোসেন শান্তর রান গড় এবং স্ট্রাইক রেট বেড়েছে।

গড় ও স্ট্রাইক রেটের দিক থেকে ২০২৩ সালে যেন শান্ত নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করেছেন এবং সবাইকে চেনাচ্ছেন।

বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটার ও বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি মনে করেন, ‘শান্তর প্রতি এই বিশ্বাসের জায়গাটা রাখার জন্য নির্বাচকদের একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য।’

‘সবসময়ই দেখেছি কোচরা শান্তকে খুব পছন্দ করেন, আমি দুই একজন কোচের সাথে কথা বলেছি ও তারা বলেছেন শান্ত অনুশীলনে যে শ্রমটা দেয় সেটা অনবদ্য, তাই তাকে হিসেবের খাতা থেকে কোনো কোচই বাতিল করেন দেননি,’ বলেন আবিদ হুসেইন।

এই বিশ্লেষকের মতে, মূলত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেই শান্ত নিজেকে বদলেছেন, উইকেটের সব দিকে মারার মতো দক্ষতা অর্জন করে নিয়েছেন।

শান্তকে নিয়ে প্রচুর সমালোচনা ও বিদ্রূপ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, এর প্রতিক্রিয়া একবারই দেখিয়েছেন তিনি গণমাধ্যমে। এই বছরের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, ‘মনে হয় দেশের সবাই আমাকে শত্রু মনে করেন’।

শান্ত এখন এসব ভুলে যেতে চান। তিনি সাম্প্রতিক সাফল্যের পর গণমাধ্যমে বলেছেন কোচিং স্টাফ ও নির্বাচকরা তাকে নিয়ে আলাদা করে কাজ করেছেন, যার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।

স্কুল ক্রিকেট থেকে উঠে আসা শান্ত ২০১৬ সালের যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বড় তারকা ছিলেন।

তবু শান্ত ফিরেছেন বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি ও শান্তি নিয়ে- বলছেন ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম।

আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে শান্তকে নিয়ে মিরপুরের গ্যালারিতে একটা প্ল্যাকার্ড দেখা গিয়েছিল যেখানে লেখা ছিল, ‘এভাবে ফিরে আসা যায়’।

সূত্র : বিবিসি

বিডিসংবাদ/এএইচএস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here