‘নেপোলিয়ন’ মুক্তি ২২ নভেম্বর, জেনে নিন আদ্যোপান্ত

বিতর্কিত টেক টাইকুন ইলন মাস্কের বায়োপিক নির্মাণে গুণী পরিচালক ড্যারেন অ্যারোনোফস্কি নিজেকে প্রস্তুত করছেন। এ২৪ স্টুডিও পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। খবর ডেইলি সুবাহ ও টেলিগ্রাফ।

আহমেদ তেপান্তর


উনবিংশ শতকে বিশ^ব্যাপী যখন রেনেসাঁর যুগ চলছে সেই সময়ে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত হন। তুমুল জনপ্রিয়তার সঙ্গে বিতর্কও তার নিত্যসঙ্গী। জীবদ্দশায় পুরো বিশে^ আলো ছড়িয়েছেন তিনি। তার চরিত্র অবলম্বনে মহাকাব্যিক এক সিনেমা নির্মাণ করা হয়েছে। অপেক্ষা মুক্তির। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন নন্দিত নির্মাতা রিডলি স্কট। একই সঙ্গে এর প্রযোজনার দায়িত্বেও তিনি রয়েছেন। আগামী ২২ নভেম্বর বিশ^ব্যাপী সিনেমাটি মুক্তি পাবে।
জানা গেছে, নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সত্য কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে সিনেমাটি নির্মিত। এতে প্রাথমিকভাবে ফরাসি নেতার ক্ষমতায় উত্থানের পাশাপাশি সম্রাজ্ঞী জোসেফাইনের সাথে তার সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েচে। ছবিতে নেপোলিয়নের চরিত্রে জোয়াকিন ফিনিক্স এবং জোসেফাইনের চরিত্রে ভেনেসা কিরবি অভিনয় করেছেন।
গত ১৪ নভেম্বর প্যারিসের সাল্লে প্লেয়েলে প্রিমিয়ার হয়েছিল। সব ঠিক থাকলে ২২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। সিনেমাটির পরিবেশনার দায়িত্বে রয়েছে যথাক্রমে সনি পিকচার্স রিলিজিং এবং অ্যাপল টিভি+।


নেপোলিয়নের মতো কিংবদন্তি জেনারেলের মহাকাব্যিক জীবনকে বড় পর্দায় আনার পিছনে দলটি তার মতোই কিংবদন্তি। ইঅঋঞঅ এবং গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার বিজয়ী রিডলি স্কট পরিচালিত এই ছবিতে নেপোলিয়নের চরিত্রে অস্কার বিজয়ী অভিনেতা জোয়াকিন ফিনিক্স এবং জোসেফাইন ডি বিউহারনাইসের চরিত্রে প্রতিভাবান অভিনেতা ভেনেসা কিরবি অভিনয় করেছেন, যার সাথে নেপোলিয়নের উত্তাল সম্পর্ক ছিল।


এমনকি অসংখ্য ক্যামেরা সহ বিশাল একর জমিতে তৈরি ভিড়ের যুদ্ধের দৃশ্যেও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে কাজ করা এবং চ্যালেঞ্জিং দৃশ্যগুলি সফলভাবে তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছেন তিনবারের অস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রোডাকশন ডিজাইনার আর্থার ম্যাক্স। সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্ব সামাল দিয়েছেন দারিউসজ ওলস্কি।
স্কটের ভাষ্য- নেপোলিয়নের মতো একজন সামরিক কমান্ডারকে চিত্রিত করার জন্য একজন জেনারেলের মতো কাজ করা প্রয়োজন। বলেন ‘যেমন একজন সামরিক কমান্ডার তার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধের পরিকল্পনা করার জন্য একত্রিত হয়, এই সিনেমায় আমরা একটি দল হিসাবে একসাথে কাজ করেছি। আমরা একজন সামরিক বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছি। যুদ্ধের দৃশ্য এবং অত্যাশ্চর্য সামরিক পোশাকের সাথে সেই যুগকে পুনরায় তৈরি করা হয়েছে যা একটি স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।’
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে রিয়েলিস্টিকভাবে তুলে ধরা বিশালযজ্ঞের কাজ। আর এ কাজটি বিশাল ক্যানভাসে সম্পাদনা করাটা আরো বড় যুদ্ধের। সেই কর্মআয়োজনের বিশালত্ব নিয়ে আজকের এই আয়োজন।


১১টি ক্যামেরা দিয়ে চিত্রগ্রহণ

জোয়াকিন ফিনিক্স ২০০০ সালে ‘গ্ল্যাডিয়েটর’ এর জন্য অস্কার জেতার পর আবার রিডলি স্কটের সেটে কাজ করার সুযোগ পেয়ে তার আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, এটি একজন অভিনেতার জন্য বড় সৌভাগ্যের। এ কারণে যে স্কট এমন একজন চৌকষ পরিচালক যিনি একইসঙ্গে ১১টি ক্যামেরায় কাজ করেছেন। যেন প্রতিটি চরিত্রের প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরায় ধরা পরে। হতে পারে সে দৃশ্যটি অপ্রত্যাশিত কিছু যা দর্শকের হৃদয় নাড়া দিতে সক্ষম। একজন অভিনেতা হিসাবে, এমন সুযোগ পাওয়া সত্যিই বিরল।’


ঐতিহাসিক বিছানা: যুক্তরাজ্যের নর্দাম্পটনশায়ারের কাউন্টিতে বাউটন হাউস ১৮ শতকে ফরাসি স্থাপত্যের এক অনন্য স্থাপনা যা ব্রিটিশ স্থপতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত প্রাসাদ। প্রাসাদটি নেপোলিয়নের বহুল ব্যবহৃত। এই সিনেমায় ভিক্টোরিয়া প্রাসাদ এবং অ্যালবার্ট মিউজিয়াম থেকে বিছানাও আনা হয়েছে যা ঐতিহাসিক সত্যের স্বাধ এনে দেবে। এছাড়াও ফন্টেইনব্লিউ এবং টুইলেরিস প্রাসাদে সম্রাট হিসেবে নেপোলিয়নের কক্ষ ছাড়াও, অক্সফোর্ডশায়ারের ব্লেনহেইম প্রাসাদেও দৃশ্যধারণ করা হয়েছে। সিনেমার অন্যান্য স্থানগুলির মধ্যে সারেতে বোর্ন উড, যা আগে স্কটের চলচ্চিত্র ‘গ্ল্যাডিয়েটর’ এবং মাল্টার রিকাসোলি ক্যাসেলে ব্যবহৃত হয়েছিল।
কর্সিকান গায়ক: ব্রিটিশ সুরকার মার্টিন ফিপস সঙ্গীতায়োজনে সিনেমাতে দৃশ্যের সঙ্গে আবহসঙ্গীতের চমকারিত্ব ফুটে উঠেছে। যেগুলি ঐতিহ্যগতভাবে রচনা করা হয়নি কিন্তু তার সুর দিয়ে যুগকে প্রতিফলিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে বলা যায়। সুরে নেপোলিয়নের একজন বিদেশী হওয়ার অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। জানা থাকা দরকার নেপোলিয়ান একজন কর্সিকান বংশোদ্ভুদ। সঙ্গীতে তাই কর্সিকান ভাবধারার ব্যবহার হয়েছে।


এ ব্যাপারে সুরকার মার্টিন ফিপসের বক্তব্য- ‘ঐতিহাসিকভাবে একজন কর্সিকান সবসময় লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। নিজেকে যুদ্ধবাজ হিসেবে মেলে ধরতে চান। এটা তার চিরায়ত বৈশিষ্ট। ভিনদেশি যুবকের এই জায়গাটি নির্দেশ করতে চাই কর্সিকান সঙ্গীতের আয়োজনে পেশাদার গায়কদের সুযোগ দেই যা রোমান্টিক মেলোডিয়াস মেশালে মৌলিকভাবে ধরা দেবে। আমরা কিছুটা কঠোর যন্ত্রের সাথে বাজানো থিমগুলিও ব্যবহার করেছি, খুব শাস্ত্রীয় যন্ত্রসঙ্গীত নির্ভর নয়, তবে একটু কঠিন। এটা কঠিন যন্ত্রগুলির মধ্যে একটি। নেপোলিয়নের একটি পিয়ানো ছিল, যা লন্ডনের একটি যাদুঘর থেকে ধার করা হয়েছিল; এটির সাথে ছিল অ্যাকর্ডিয়ন, প্রারম্ভিক স্ট্রিং যন্ত্র এবং এমনকি ল্যাটারনার মতো লোকযন্ত্রও।’


ফিপস আরো উল্লেখ করেন- নেপোলিয়নের সঙ্গে একমাত্র প্রেমিকা জোসেফাইনের প্রেমের উত্তালকে আবেগপূর্ণ সঙ্গীতে আনতেই এই আয়োজন করা হয়েছে।
নেপোলিয়নের চরিত্রে ফিনিক্স: পরিচালক স্কট ‘জোকার’- সিনেমায় জোয়াকিনের অভিনয়ে গুণমুগদ্ধ। ‘গ্ল্যাডিয়েটর’-এ তারা কীভাবে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন, যা নিখুঁত অভিনয়ের সাক্ষর বহন করে। এসব বিষয় মাথায় রেখে নেপোলিয়ান চরিত্রে একজন জাত অভিনেতা হিসেবে জোয়াকিনকেই তার মনে ধরে। এ ব্যাপারে তার বক্তব্য- “যখন আমি তাকে ‘গ্ল্যাডিয়েটর’-এ কমোডাসের চরিত্রে দেখি তখনই মনে মনে ভেবে নিয়েছিলাম ভবিষ্যতে ‘ইনি হবেন আমার নেপোলিয়ন’। কাকতলীয়ভাবে সে চরিত্রে জোয়াকিনই এখন দর্শকের সামনে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here