র‍্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে ‘অসামান্য উন্নতি’ দেখছে যুক্তরাষ্ট্র

বিডিসংবাদ অনলাইন ডেস্কঃ

গত বছর র‍্যাব এবং এর কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও এখন সংস্থাটি ভালো কাজ করছে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বলেছেন, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে র‍্যাবে বিশাল অগ্রগতি হয়েছে বলে তারা মনে করছেন।

রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড লু বলেছেন, ’র‍্যাব নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আপনারা যদি এই সপ্তাহের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি দেখে থাকেন, তারা মনে করছে, আমরা মনে করছি যে র‍্যাবের দ্বারা বিচারবর্হিভূত হত্যা বন্ধে অসামান্য উন্নতি হয়েছে। এটা খুবই ভালো কাজ হয়েছে।’

‘এটা প্রমাণ করছে, মানবাধিকার রক্ষা করেই সন্ত্রাস প্রতিরোধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো র‍্যাব করতে সক্ষম।‘

গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ ইউনিট- র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এদের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান পুলিশপ্রধানও রয়েছেন।

এরপর থেকেই সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে নানা চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশের সরকার।

এর আগেই বাংলাদেশের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ডোনাল্ড লু’র সফরে আলোচনায় এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ’র‍্যাবের কাজকর্মে তারা খুব খুশি। আমরা তাদের বলেছি, র‍্যাব এদেশে সন্ত্রাস বন্ধ করেছে। একসময় এই দেশে জিহাদি সন্ত্রাসের ভয়ে- আমাদের একজন জাজ মারা গেল, বিদেশী একজন হাইকমিশনার গেল, তার ওপর বোমা হামলা হলো, তিনি মারা যাননি, অন্য আরেকজন মারা গেল। …শেখ হাসিনার সমাবেশে বোমাবাজি হয়, গ্রেনেড হামলা হয়, ২৪ জন লোক মারা যায়, ৩৭০ জন গভীরভাবে আহত হয়।’

‘এখন সেই দিন নাই। এই র‍্যাব থাকায়, ইদানিং দে হ্যাভ ম্যানেজড..ইউ নো- আর ২০১৭ সালের পর দেশে কোনো বড় ধরনের সন্ত্রাসী আক্রমণ হয়নি। র‍্যাব ডান অ্যান এক্সিলেন্ট জব।‘

ডোনাল্ড লু বাংলায় বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি, আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে।‘

কোনো পরামর্শ আছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড লু বলেন, ’আমরা আমেরিকান, সবসময়েই আমাদের অনেক পরামর্শ থাকে। এর একটি বিষয়ে আলোচনা করে আমরা খুশি, সেটা হলো শ্রম অধিকারের মতো ইস্যু। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশী জনগণ এবং আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। শ্রম অধিকার ইস্যুতে আমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারবো এবং আমি নিশ্চিত, এই বছর আমরা অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবো।‘

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে জেনারালাইজ সিস্টেম অব প্রেফারেন্স বা জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশ আবার পাবে কিনা জানতে চাওয়া হলে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘কোন কোন দেশকে বাণিজ্য অগ্রাধিকার দেয়া হবে, সেটা মার্কিন কংগ্রেস ঠিক করে থাকে। আমরা সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। কংগ্রেস যদি এই সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তালিকার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সেই সুবিধা পাবে।’

ডোনাল্ড লু’র সফরের আগে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি টুইটবার্তায় বলা হয়েছিল, ‘তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করবেন।‘

র‍্যাবের ওপর থেকে কবে নাগাদ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হতে পারে, জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘এটা একটা প্রসেস, দে আর হ্যাপি, সো ফার দ্যা পারফরম্যান্স অব র‍্যাব (এটার একটা প্রক্রিয়া আছে, কিন্তু র‍্যাবের কর্মকাণ্ডে তারা খুশি হয়েছে)।‘

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ভালো পরামর্শ পেলে অবশ্যই আমরা সেটা মেনে নেবো। আমরাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আওয়ামী লীগ বুলেটে নয়, ব্যালটে বিশ্বাসী।’

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরকে অনেক বেশ গুরুত্বের সাথে দেখছেন।

এর একটি বড় কারণ হলো, একদিকে যখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশ্ন তুলছে, তখনই ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা নিয়েও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে সরকার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড লু সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করবে।

লু’র সফর শুরু হবার কয়েকদিন আগেই ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই সফরের সময় জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা করবেন লু।

সূত্র : বিবিসি

বিডিসংবাদ/এএইচএস