আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণ বন্ধের ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের আউটার ষ্টেডিয়ামের বিশাল খোলামাঠ দখল করে সুইমিংপুল কমপ্লেক্সের নামে ব্যবসা কেন্দ্র তৈরী বন্ধ এবং সিজেকেএস’র কাছ থেকে আউটার ষ্টেডিয়াম দখলমুক্ত করতে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

আজ রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে দেয়া এক স্বারকলিপিতে বলা হয়, আমরা চড়ান্ত আন্দোলনের মাঠে নামার আগে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের কোন প্রকার ছাড়পত্র না নিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে নির্মিত হতে যাওয়া এই সুইমিংপুল, গণশৌচাগার নির্মান কাজ বন্ধ করার জন্য ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দিতে চাই। আশা করব আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এই খোলা উদ্যানে সকল প্রকার নির্মান কাজ বন্ধ করতে আপনি কার্যকর ব্যবস্থা করবেন। অন্যতায় আপনার মাধ্যমে সিজেকেএস এর সংশ্লিষ্ট সকলকে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার দায়ভার নিতে হবে বলে চূড়ান্ত ভাবে হুঁশিয়ার করা হল।

জেলা প্রশাসকের পক্ষে ছাত্রলীগ নেতাদের কাছ থেকে স্বারকলিপি গ্রহণ করেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হাবিবুর রহমান।

আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণ বন্ধের ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটামস্বারকলিপিতে বলা হয়, যে বা যারা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য পূরনকল্পে আকরাম খান-নান্নু-নাফিস-তামিম-আফতাবদের স্মৃতিবিজডিত এই ঐতিহাসিক খেলার মাঠটি দখল করে বানিজ্যকায়ন করার সুযোগ নিচ্ছে তাদের আশা কোনভাবে সফল হতে দেওয়া হবেনা। অত্র মাঠে প্রতিদিন সকাল বিকাল বেলা বিভিন্ন এলাকার শ্রেনী পেশার শিশু কিশোর তরুন যুবক ও বয়স্ক নারী পুরুষ তাদের খেলাধুলা ও শরীর চর্চা করে আসছেন।মাঠটিতে বেশ কয়েকটি ক্রিকেট ও ফুটবল একাডেমি অনুশীলন করছে।বছরে নামী দামী কয়েকটি টূর্নামেন্ট এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সর্বোপরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দের স্থান হিসাবে বেশ কয়েকবার উক্ত মাঠে তার জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারা বাংলার আলোড়ন সৃষ্টি করা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার উৎপত্তি এই চট্টগ্রামে। বিগত কয়েক দশক এই মাঠকে ঘিরে অনুষ্টিত হচ্ছে ঐতিহাসিক মহান মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয় মেলা।

ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, সিজেকেএসের বর্তমান সাধারন সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন প্রথমবার সিজেকেএস সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনিসিয়ামের নিজস্ব জমিতে সুইমিংপুল নির্মানের ঘোষনা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে ঐ জমিতে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও হোটেল রেষ্টুরেন্টে ভাড়া দেয়া হয়।

আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন যুব ক্রীড়া মন্ত্রনালয় বছর দুয়েক আগে চট্টগ্রামের শারীরিক শিক্ষা কলেজে একটি সুইমিংপুল নির্মান করলেও পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভাবে তা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।জাতিসংঘ পার্কেও অনুরূপ এমন একটি সুইমিংপুল বিগত চসিক মেয়র এম মন্জুর আলম নির্মান করলেও তা বর্তমানে অকেজো অবস্থায় আছে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে সিজেকেএস আকস্মিকভাবে তার পরিকল্পনা পরিবর্তন করে চট্টগ্রামের খেলাধুলার তীর্থস্থান হিসাবে পরিচিত এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের আউটারের খোলা উদ্যানকে সুইমিংপুল, গাড়ির পার্কিং স্পেস,গনশোচাগার নির্মানের মতো অনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে।

আমরা এরি মধ্যে খবর পেয়েছি বিনা টেন্ডারে সম্পূর্ন সেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অত্র উদ্যানে স্কেবাটর দিয়ে মাটি খুঁড়ার কাজ শুরু করে দিয়েছে। বিষয়টি ক্রীড়ামোদী চট্টগ্রামের জনগনের অন্তরে রক্ত উৎক্ষেপন করার মত জগন্য, আবেগীয় ও চরম কষ্টের।

উল্লেখ্য বিগত সময়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিএনপি পন্থী সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন তার আমলে অত্র বিজয়মেলা বন্ধের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।জামাত বিএনপি ও স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্ষুশূলে পরিনত হওয়া তৎসময়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা অনুষ্টিত হতো অত্র মাঠের বিপরীত পাশে অবস্থিত বর্তমান কর্নফুলী শিশু পার্কের খোলা উদ্যানে। বিএনপি শাসনআমলে বর্তমান শিশু পার্কটি নির্মানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেনে বন্ধ করার অপপ্রয়াস চালানো হলেও তা সফল হয়নি। পরবর্তী তে উক্ত বিজয় মেলা বর্তমান এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের আউটারের খোলা উদ্যানে বিগত দুই দশকের বেশী সময় ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। উক্ত মেলায় পুরো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেন সারা দেশের স্বনামধন্য বিশিষ্টজনেরা।

জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ বলেন, আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, চট্টগ্রামের খেলার মাঠ বা খোলা উদ্যানের প্রচুর সংকট বর্তমানে পরিলক্ষিত হয়েছে। নগরীতে দুইটা স্টেডিয়াম থাকলেও আমাদের পাড়া মহল্লায় পর্যাপ্ত পরিমানে খোলা উদ্যান বা খেলার মাঠ নেই। বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ অত্র বিষয়টি সকলের সামনে উত্তাপন করে নগরীর ৪১ টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে একটি নির্দিষ্ট খেলার মাঠ ঘোষনার দাবী জানিয়ে আসছি।শিশু কিশোর তরুনদের সুস্থ দেহ ও মনন বিকাশে আমাদের এই পথচলার মধ্যে ইতিপূর্বে ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে বাস ও মাইক্রো স্ট্যান্ড নির্মানের প্রতিবাদ জানিয়ে তা উৎখাত করতে আমরা সফল হয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার সমাজের ঘুণে ধরা প্রতিটি বিষয় নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে কাজ করার সুযোগ আছে। আর ঠিক এই বিশ্বাসের নিমিত্তে আমরা আজ আপনার কাছে অভিযোগ প্রেরন করছি চট্টগ্রামের স্বনামধন্য ক্রীড়া ব্যাক্তিত্বদের হোম-গ্রাউন্ড হিসাবে পরিচিত চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামের খোলা উদ্যানকে দখল করে অনৈতিক ইচ্ছা ও বানিজ্যিকায়নের শখ পূরনকল্পে নির্মিত হতে যাওয়া সুইমিং কমপ্লেক্স, গনশোচাগার, গাড়ির স্পেস, ফুড কর্নার, জিমনিসিয়াম নির্মান কাজ বন্ধ করতে।
আমরা এরিমধ্যে বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে মাঠ রক্ষার দাবিতে ইতিমধ্যে মাঠের চতুপার্শে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ব্যানার ঝুলিয়েছিলাম।

কিন্তু অতীব দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে অত্র দাবী সম্বলিত ব্যানার রাতের আঁধারে সিজেকেএসের নৈশপ্রহরীগন খুলে নিয়ে নর্দমার মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ব্যানার নর্দমায় ছুড়ে ফেলার মত স্পর্ধা কোনভাবেই আমরা সহ্য করতে পারছিনা।
মহানগর ছাত্রলীগের পক্ষ স্বারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, সহ-সাধারণ সম্পাদক রোমেল বড়ুয়া রাহুল, নাঈম রনি, নোমান চৌধুরী, ওমর ফারুক।