আগের দুই আসরের ব্যর্থতা ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে চায় স্পেন

বিডিসংবাদ অনলাইন ডেস্কঃ

দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় কোস্টারিকার বিপক্ষে এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামছে স্পেন। সম্ভাব্য সেরা হিসেবেই এবারের বিশ্বকাপটা শুরু করতে চায় স্প্যানিশরা।

২০১০ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পর গত দুই আসরে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি লা রোজারা। কিন্তু ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে কোস্টারিকা। বিশ্বকাপে এটাই কোস্টারিকার সেরা সাফল্য।

অন্য দিকে ১২ বছর আগে প্রথমবারের মত বিশ্ব আসরের শিরোপা ঘরে তুলেছিল স্পেন। ওই সময় স্বর্ণালী সময়ের দলটি ২০০৮ ইউরো ছাড়াও ২০১২ সালেও ইউরোপীয়ান সর্বোচ্চ আসরের শিরোপা অক্ষুন্ন রেখেছিল। পরপর তিনটি বড় শিরোপা জয়ী স্পেনকে কোনোভাবেই আটকাতে পারেনি বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষ দলগুলো।

কিন্তু তারপর থেকে স্পেন তাদের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে শীর্ষ স্থান থেকে ক্রমেই দুরে সড়ে যায়। আট বছর আগে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়া স্প্যানিশ দলটি গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচের দুটিতেই পরাজিত হয়েছিল। গত আসরে অবশ্য শেষ ১৬’তে খেলেছিল স্পেন। সেখানে স্বাগতিক রাশিয়ার কাছে পেনাল্টি শ্যুট আউটে পরাজিত হয়ে বিদায় নিতে হয়। কিন্তু ইউরো ২০২০’এ আবারো নতুনভাবে ফিরে এসে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছিল। নিজেদের সেরাটা দিতে এবারো মুখিয়ে আছে লুইস এনরিকের দল। প্রস্তুতিটাও সেভাবেই সেড়ে নিয়ে এখন মাঠের নামার অপেক্ষা। বৃহস্পতিবার শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে জর্ডানকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে স্প্যানিশরা। সেপ্টেম্বরে উয়েফা নেশন্স লিগের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পর্তুগালকে ১-০ গোলে পরাজিত করেছিল। লিগ-এ’র গ্রুপ-২ থেকে শীর্ষস্থান দখল করে স্পেন নেশন্স লিগের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে। ইউরোপীয়ান বাছাইপর্বে গ্রুপ-বি’তেও সহজেই শীর্ষস্থান লাভ করে কাতারের টিকিট পেয়েছে। বাছাইপর্বে রেকর্ড ছয় জয়, একটি ড্র ও একটি পরাজয়সহ আট ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছিল এনরিকের দল।

এদিকে ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল কোস্টারিকা। ওই আসরে শেষ ১৬’তে পৌঁছানো কনকানাফ অঞ্চলের দলটি ২০০২ ও ২০০৬ সালে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল। চার বছর আগেও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়া দলটি ২০১৪ সালে বিস্ময়করভাবে শেষ আটে খেলেছিল। উরুগুয়ে, ইতালি ও ইংল্যান্ডের মত শীর্ষ সারির দলগুলোকে টপকে গ্রুপ-ডি’র শীর্ষ দল হিসেবে নক আউট পর্বে যায় কোস্টারিকা। নক আউট পর্বে প্রথম ম্যাচে পেনাল্টিতে গ্রীসকে পরাজিত করে শেষ আট নিশ্চিত করে। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডের সাথে অবশ্য আর পেরে উঠেনি। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হলেও পেনাল্টিতে ৪-৩ গোলে জয়ী হয়ে শেষ আটে পৌঁছায় ডাচরা।

বিশ্বকাপের শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে আফ্রিকান জায়ান্ট নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে পরাজিত করা আত্মবিশ্বাসী কোস্টারিকা মাঠে নামতে যাচ্ছে। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় শেষ ১৩টি ম্যাচের মাত্র একটিতে পরাজিত হওয়ার কারণেই স্পেনের বিপক্ষে বাড়তি অনুপ্রেরণা নিয়েই মাঠে নামবে কোস্টারিকানরা।

দলের প্রধান কোচ লুইস ফার্নান্দো সানচেজ এ নিয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপে কোচের ভূমিকায় ডাগ আউটে থাকবেন। এর আগে বিশ্বকাপে তার অধীনে ইকুয়েডর ও হন্ডুরাস কেলেছে। ৬২ বছর বয়সী কলম্বিয়ান এই কোচ গত জুনে ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্লে-অফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ের পরপরই নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এবারের বিশ্বকাপে সর্বশেষ দল হিসেবে কাতারের টিকিট পেয়েছে কোস্টারিকা। স্পেনের বিপক্ষে ইতিবাচক ফলাফল হলে আগামী ২৭ নভেম্বর জাপানের বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচে ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামবে সানচেজের শিষ্যরা।

স্পেন দল অবশ্য ইনজুরি নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ছিল। টুর্নামেন্টের ঠিক আগে ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে গেছেন হোসে গায়া। তার স্থানে নতুন করে দলভূক্ত হয়েছেন আলেহান্দ্রো বাল্ডে। যদিও সব পিছনে ফেলে পুরোপুরি ফিট একটি দল নিয়ে কোস্টারিকার বিপক্ষে মাঠে নামবে স্পেন। ফরোয়ার্ড লাইন নিয়ে এনরিকেকে কিছুটা হলেও দ্বিধায় থাকতে হচ্ছে। তরুণ ফরোয়ার্ড আনসু ফাতির সাথে ফেরান তোরেস ও আলভারো মোরাতাকেই হয়তো শেষ পর্যন্ত মূল একাদশে দেখা যাবে। ২৭ গোল করা মোরাতা দলের এই মুহূর্তে দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। মধ্যমাঠটা পুরোটাই বার্সেলোনাময়, গাভি, পেড্রির সাথে আরো রয়েছেন সার্জিও বাসকুয়েটস। রক্ষণভাগের কেন্দ্রে অমারিক লাপোর্তের সাথে থাকবেন প’ তোরেস। গোলবার সামলাবেন উনাই সিমন। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে ফুল-ব্যাক হিসেবে জায়গা ধরে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে দানি কারভাহাল ও জোর্দি আলবার।

কোস্টাররিকার জন্য কোচও ৪-৩-৩ ফর্মেশনই চিন্তা করেছেন। তবে বলের পজিশনে নিজেদের নিয়ন্ত্রনে না থাকলে ফর্মেশন পাল্টে ৪-৫-১ হয়ে যেতে পারে। কেইলর নাভাসের মত গোলরক্ষক নিয়ে নিঃসন্দেহে অনেকটা নিশ্চিত থাকতে পারে কোস্টারিকা। রক্ষণভাগের মাঝামাঝিতে অস্কার ডুয়ার্তের সাথে ফ্রান্সিসকো কালভোর থাকার সম্ভাবনাই বেশি। ফুল-ব্যাক এরিয়া কার্লোস মার্টিনেজ ও ব্রায়ান ওভিডিও খেলবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। জাতীয় দলের হয়ে এ পর্যন্ত ১৫৫ ম্যাচ খেলা ৩৪ বছর বয়সী অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার সেলসো বোরগেস ডানদিকের জায়গা পূরণ করবেন। আক্রমণভাগের নেতৃত্বে থাকবেন ১১৯ ম্যাচে ২৫ গোল করা আর্সেনালের সাবেক এ্যাটাকার জোয়েল ক্যাম্পবেল।

বিডিসংবাদ/এএইচএস