ওয়ানডেতে এগিয়ে কারা, শ্রীলঙ্কা নাকি ভারত?

বিডিসংবাদ ডেস্কঃ আগামী রোবাবার শুরু হতে যাচ্ছে ভারত- শ্রীলঙ্কার মধ্যকার পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। টেস্ট সিরিজে জয়ের পর সিমিত ওভারেও ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামবে ভারত। ওয়ানডে ক্রিকেটে এ পর্যন্ত ১৫০বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে ভারত জয় পেয়েছে ৮৩টিতে, শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৫৫টি ম্যাচ।

ভারত-শ্রীলঙ্কা দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজও খেলেছে বেশ কয়েকটি। এরমধ্যে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ৭ সিরিজে অংশ নিয়ে ভারত জিতেছে ৩টিতে। শ্রীলঙ্কার জয় ২টি। বাকী ২টি সিরিজ হয় ড্র। এসময় ৫৬ ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে ২৩টিতে ভারত ও ২৭টি ম্যাচে জয় পায় শ্রীলঙ্কা।

আর ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয় ৯টি ওয়ানডে সিরিজ। এখানেও জয়ের পাল্লা ভারী ভারতেরই। ৮টি সিরিজ জিতেছে তারা। ১টি হয়েছে ড্র। এরমধ্যে ৪৮ ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে ৩৪টি জিতে ভারত। আর ১১টি ম্যাচ জিতে শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কার মাটিতে ভারতের ওয়ানডে সিরিজগুলোর দিকে চোখ বুলানো যাক-

১৯৮৫ সাল : তিন ম্যাচের সিরিজ ১-১
১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মত শ্রীলঙ্কা সফরে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামে ভারত। এ সফরে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিলো ভারত। দু’বছর আগে কপিল দেবের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ওয়ানডে শিরোপা জিতেছিলো তারা। তাই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের তকমা গায়ে নিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামে টিম ইন্ডিয়া। শ্রীলঙ্কার নেতৃত্বে ছিলেন দুলীপ মেন্ডিস।

সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৬ উইকেটে ২৪১ রান করে শ্রীলঙ্কা। রয় ডায়েস ৮০ ও তরুন অর্জুনা রানাতুঙ্গা ৬৪ রান করেন। জবাবে ৪৫তম ওভারেই ২ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। বর্তমান দলের কোচ রবি শাস্ত্রী ৬৭ ও দিলিপ ভেঙ্গসরকার ৮৯ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে ২ উইকেটে জয় এনে দেন।

দ্বিতীয় ম্যাচে বাগড়া দেয় বৃষ্টি। তাই বাধ্য হয়েই ম্যাচটি নির্ধারিত হয় ২৮ ওভারে। প্রথমে ব্যাট করে রঞ্জন মাদুগালের ৩৯ বলে অপরাজিত ৫০ রানের সুবাদে ৫ উইকেটে ১৭১ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ৪ উইকেটে ১৫৭ রানের বেশি করতে পারেনি ভারত। প্রথম ওয়ানডের মত এবারও ব্যাট হাতে উজ্জল ছিলেন ভেঙ্গসরকার। তবে এবার আর ৫০ রান করে ভারতকে হারের লজ্জা থেকে রক্ষা করতে পারেননি তিনি। তাই ১৪ রানে ম্যাচ জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা।

তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতেও বৃষ্টির প্রভাব ছিল। তাই ৪০ ওভারের ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ভেঙ্গসরকারের ৫৫ রানের সুবাদে ৬ উইকেটে ১৯৪ রান করে ভারত। জবাবে বৃষ্টি আইনে ১৫ ওভারে ৭২ রানের টার্গেট পায় শ্রীলঙ্কা। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪ উইকেটে ৩২ রান তুলতে পারে স্বাগতিকরা। এরপর বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ফলে তিন ম্যাচের ওই সিরিজটি ১-১ সমতায় শেষ করে দুই দল।

১৯৯৩ সাল : তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে শ্রীলঙ্কা
১৯৯৩ সালে দ্বিতীয়বারের মত শ্রীলঙ্কার মাটিতে মুখোমুখি হয় ভারত। মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের নেতৃত্বে মাত্র ১ রানের জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করে ভারত। প্রথম ম্যাচে আজহারউদ্দিনের ৫৩ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২১২ রান করে ভারত। এরপর বাংলাদেশের বর্তমান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ৬৪ ও অরবিন্দ ডি সিলভার ৬২ রানের পরও হারের স্বাদ নেয় শ্রীলঙ্কা।

প্রথম ওয়ানডের মত দ্বিতীয় ম্যাচেও হাড্ডাহড্ডি লড়াই করে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত ৮ রানের জয় পায় শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার ৭ উইকেটে ২০৪ রানের জবাবে ১৯৬ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত। শ্রীলঙ্কার পক্ষে শুধুমাত্র ব্যাট হাতে রান পেয়েছেন অধিনায়ক রানাতুঙ্গা। ৫২ বলে ৫০ রান করেন তিনি। আর ভারতের পক্ষে ওপেনার হিসেবে মনোজ প্রভাকর ৮৬ ও অধিনায়ক আজহারউদ্দিন ৬২ রান করেন।

সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচে ওপেনার রোশন মহানামার ৯২ রানের কল্যাণে ৩ বল বাকী থাকতেই ৪ উইকেটে জয় পায় শ্রীলঙ্কা। ফলে প্রথমবারের মত দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয় করে লঙ্কাননরা।

১৯৯৭ সাল : তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় ভারত
১৯৯৬ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পর ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নেমে দুর্দান্ত সাফল্য পায় শ্রীলঙ্কা। তিন ম্যাচের সিরিজে টিম ইন্ডিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করে লঙ্কানরা।

কলম্বোতে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ওপেনার মারভান আত্তাপাত্তুর ১১৮ রানের উপর ভর করে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩০২ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ৬৪ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যায় ভারত। পঞ্চম উইকেটে ২২৩ রানের জুটি গড়ে ভারতকে নিশ্চিত জয়ের পথে নিয়ে যান আজহারউদ্দিন ও অজয় জাদেজা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ৩০০ করতে পারলে মাত্র ২ রানে ম্যাচ হারে ভারত। আজহার ১১১ রানে অপরাজিত থাকলেও, ১১৯ রানে আউট হন জাদেজা।

দ্বিতীয় ম্যাচে ওপেনার সৌরভ গাঙ্গুলীর ১১৩ রান ভারতকে ২৩৮ রানের সংগ্রহ এনে দেন। কিন্তু এই টার্গেট শ্রীলঙ্কার জন্য কঠিন কিছু ছিলো না। সনাথ জয়সুরিয়া ও রোশন মহানামার ৬৬ রানের সাথে ডি সিলভার ৫২ রান শ্রীলঙ্কার জয় সহজ করে।

তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে রবিন সিং-এর ১০০ রানে ৯ উইকেটে ২৯১ রানে সংগ্রহ পায় ভারত। জবাবে ১৩২ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের চিন্তা করে ফেলে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সেটি হতে দেয়নি বৃষ্টি। তাই বৃষ্টির কারনে পরিত্যক্ত হয়ে পরবর্তীতে আয়োজনের সিদ্বান্ত নেয়া হয়।

তাই তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ডি সিলভার ১০৪ রানের উপর ভর করে ৯ রানে ম্যাচ জিতে শ্রীলঙ্কা। স্বাগতিকদের ২৬৫ রানের টার্গেটে ৮ উইকেটে ২৫৫ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। ফলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় তৎকালীন বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

২০০৬ সাল : সিরিজ ড্র
২০০৬ সালে তিন ম্যাচের সিরিজ বৃষ্টির কারনে ভেস্তে যায়। পুরো সিরিজে মাত্র ২২ বল খেলা হয়েছে। সেটি ছিলো প্রথম ম্যাচে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে বৃষ্টির কারণে মাঠেই নামতে পারেননি দু’দলের খেলোয়াড়রা।

ভারত-শ্রীলঙ্কা, ২০০৮ সাল : পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-২ ব্যবধানে জিতে ভারত
প্রথমবারের মত শ্রীলঙ্কার মাটিতে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামে ভারত। আর সেবারই প্রথমবারের মত সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় টিম ইন্ডিয়া। সিরিজের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৮ উইকেটে হারে তারা। অজান্থা মেন্ডিস ও মুত্তিয়া মুরালিধরনের স্পিন বিষে কুপোকাত হয় ভারত। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে দারুনভাবে ঘুড়ে দাঁড়ায় সফরকারীরা। পেসার জহির খানের বোলিং তোপে হার মানে শ্রীলঙ্কা। অবশ্য লো-স্কোরিং ম্যাচে জয়ের পথ তৈরি করে ফেলেছিলো স্বাগতিকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে কষ্টার্জিত জয় পায় ভারত।

তৃতীয় ওয়ানডেতেও বোলারদের কল্যাণে ৩৩ রানের জয়ে সিরিজে লিড নেয় ভারত। অধিনায়ক ধোনির ৭৬ রান ভারতকে ৯ উইকেটে ২৩৭ রানের পুঁজি এনে দেয়। এরপর শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনের ৯৪ রানের পরও ২০৪ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ভারতের জহির ও মুনাফ প্যাটেল ৩টি করে উইকেট নেন।

সিরিজে ভালো অবস্থায় থেকে চতুর্থ ওয়ানডেতেও জয়ে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে ভারত। ৪৬ রানে ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেয় তারা। মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়নার ৭৬ ও অধিনায়ক ধোনির ৭১ রানের উপর ভর করে ২৫৮ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত। জবাবে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ২১২ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা।

সিরিজ জিতে যাওয়ায় পঞ্চম ম্যাচে হাল ছেড়ে দেয় ভারত। এজন্য ১১২ রানের বড় ব্যবধানে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে জয় পায় শ্রীলঙ্কা। তারপরও ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নেয় ভারত।

২০০৯ সাল : পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জিতে ভারত
২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথমবারের মত সিরিজ জয়ের স্বাদ নেয়ার পর ২০০৯ সালেও আধিপত্য বিস্তার করে খেলে ধোনির নেতৃত্বাধিন ভারত। দাপটের সাথে প্রথম চার ম্যাচ জিতে আগেভাগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলে তারা।

তৃতীয় ম্যাচে ওপেনার বিরেন্দার শেবাগ ও যুবরাজ সিং সেঞ্চুরি করেন। আর চতুর্থ ম্যাচে ওপেনার গৌতম গম্ভীর দেড়শ রানের ইনিংস খেলেন।

৬ উইকেটে জয়ে সিরিজ শুরুর পর, দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ ম্যাচ যথাক্রমে ১৫ রানে, ১৪৭ রানে ও ৬৭ রানে জিতে নেয় ভারত। আর পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ ৬৮ রানে জিতে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ায় শ্রীলঙ্কা।

২০১২ সাল : পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জিতে ভারত
সর্বশেষ ২০০৯ সালের পর ২০১২ সালেও ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় ধোনির ভারত। এবারের সিরিজে প্রথম ম্যাচ ২১ রানে জিতলেও, দ্বিতীয় ম্যাচ ৯ উইকেটে হেরে যায় শ্রীলঙ্কা। তবে পরের তিন ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মত ধোনির নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ভারত।