চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ ঘূর্ণিঝড় মোরা’র আঘাতে কক্সবাজার উপকূলের দুই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ও গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এতে চকরিয়ায় ২জন কক্সবাজারে ১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তাল রয়েছে সাগর।
নিহতদের মধ্যে দুজন গাছ চাপায় এবং একজন আতঙ্কে মারা গেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজি আবদুর রহমান এ তথ্য জানান।
গাছ চাপা পড়ে নিহত দুজন হলেন জেলার চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারার পূর্ব ডোমখালীর আব্দুল জব্বারের পুত্র রহমত উল্লাহ (৫০) এবং একই উপজেলার পূর্ব বড়ভেওলা ইউনিয়নের সিকদারপাড়ার সায়েরা খাতুন (৬০)। পূর্ব বড়ভেওলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আরিফ দুলাল জানালেন মোরার আঘাতে কয়েকশতাধিক ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর কক্সবাজার পৌরসভার নুনিয়াচটা আশ্রয়কেন্দ্রে আতঙ্কে মারা গেছেন মরিয়ম বেগম (৫৫)।
ঘূর্ণিঝড় মোরা ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতির বাতাস নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এটি কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর আহম্মদ বলেন, ভোর ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি সেন্টমার্টিনে আঘাত হানে। এতে এ ইউনিয়নে দেড় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আশপাশের অন্তত ৭০ ভাগ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি। অনেক জায়গায় গাছপালা উপড়ে গেছে। এখানে এখন প্রচন্ড ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সকাল ৮টা পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাননি বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হাবিবুর রহমান খান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ভোররাত ৪টার পর থেকে সেন্টমার্টিন আক্রান্ত হতে শুরু করে। ৬টার দিকে সেন্টমার্টিনের দুই শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এর মধ্যে বেশি রয়েছে কাঁচা ঘর। আধা পাকা ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশির ভাগ ঘরের চালা উড়ে গেছে। এছাড়া বহু গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্র, হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা সবাই খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তারা বলছেন, এর আগে তারা কখনো এমন ভয়াবহ ঝড় দেখেননি।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন এলাকায়ও বেশ কিছু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, উপড়ে গেছে কিছু গাছপালা। এছাড়া কিছু লোক আহত হয়েছে বলে শুনেছেন সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন। তবে তিনি আহতদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জয় জানান, এ জেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানায়, উপকূলীয় এলাকার দুই লক্ষাধিক মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। খুলে দেয়া হয়েছে জেলার ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। গঠন করা হয়েছে ৮৮টি মেডিকেল টিম। পস্তুুত রাখা হয়েছে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির আওতায় ৪১৪টি ইউনিটের ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্টের ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক।
আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের নিরাপত্তার পাশাপাশি নেয়া হয়েছে খাদ্য সরবরাহেরও ব্যবস্থা।