কক্সবাজার হোটেল পালংক্যিতে আ.লীগ নেতার আত্মহত্যা

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ কক্সবাজার শহরের লালদীঘির পূর্ব পাড়ের পালংক্যি হোটেল কক্ষ থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ।

রোববার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় তিনি ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা পুলিশের। গত শুক্রবার বিকেলে তিনি ওই হোটেল কক্ষে ওঠেন।

আত্মহননকারীর নাম ডাঃ ইসমাইল (৪৮)। তিনি বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের মসজিদঘোনা এলাকার মৃত গোলাম রসুল মোল্লার ছেলে।
ডাঃ ইসমাইল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পারিবারিক কলহের জেরে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয় একটি সূত্র। সম্প্রতি দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে তার পারিবারিক কলহ চলছিল বলে সূত্রটি দাবি করেছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসলাম হোসেন জানান, পালংক্যি হোটেল কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে বেলা ২টার দিকে এসআই দীপক কুমার সিংহ ও এএসআই আবু ছৈয়দ পুলিশ টিম নিয়ে পালংক্যি হোটেলে যান। ওই হোটেলের দ্বিতীয় তলার ১০৭ নম্বর কক্ষে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত ইসমাইলের মরদেহ পাওয়া যায়।
এসআই দীপক কুমার সিংহ জানান, দরজা ভেঙে কক্ষে ঢুকে দেখা যায়, রুমের ইন্টারকম টেলিফোনের তার খুলে তা দিয়েই ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস লাগান তিনি। রুমের সিঙ্গেল সোপার উপর বসার চেয়ার দিয়ে উপরে উঠে ফাঁস লাগিয়েছেন বলে অবস্থা দেখে মনে হয়েছে। এসময় রুমের টেলিভিশন ও তার মুঠোফোন চালু অবস্থায় ছিল।

পালংক্যি হোটেলের ম্যানেজার মীর কাশেম জানান, হোটেলের নিয়মিত বর্ডার ডাঃ ইসমাইল গত শুক্রবার বেলা ২টার দিকে হোটেলের ১০৭ নম্বর কক্ষে ওঠেন। শনিবার রাত ৮টার দিকে অভ্যর্থনা কক্ষে এসে রাতের রুম ভাড়াও পরিশোধ করেন তিনি। এরপর রুমে চলে যাওয়ার পর আর তাকে দেখা যায়নি। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফ্লোর পরিষ্কারে আসা হোটেল বয় ইসমাইলের কক্ষের ভেতরে অনবরত মোবাইলে রিং আসার শব্দ শুনতে পান। ফোনও ধরছেন না বা কক্ষের ভেতর কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ম্যানেজারকে অবহিত করেন ওয়ার্ড বয়। তারা এসে দরজায় নক করে তাকে অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশের উপস্থিতিতে লক ভেঙে দরজা খুলে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সদর ইউপির চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী তসলিম ইকবাল চৌধুরী জানান, শনিবার রাত ৯টার দিকে তার নেতা ডাঃ ইসমাইল তাকে কল করে ২৩ মে অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনের ভালোভাবে প্রস্তুতির নির্দেশনা দেন। আমাকে নিয়ে তার আকাঙ্খা অনেক জানিয়ে বলেন, আমার (ডাঃ ইসমাইল) সমর্থন সব সময় তোমার সঙ্গে আছে, এটি বলে লাইন কেটে দেন তিনি।

এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে পালংক্যি হোটেলে আসেন কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল কুদ্দুস। তার উপস্থিতিতে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে লাশ উদ্ধার

করে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ কওে পুলিশ। এসময় তার ব্যবহৃত ওয়ালেট, মোবাইলসহ অন্যান্য পণ্য জব্দ করে।
অপরদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে পরিবার ও স্বজন এবং দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে দেখতে বিকেলে জেলা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখানে এক হৃদয়বিধারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।