করের হার কমিয়ে কর দাতা বাড়ানো প্রয়োজনঃ সচিব মো. মোশাররফ হোসেন

বশির আলমামুন,চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ  জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও আভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতে অর্থমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। ‘ইতিমধ্যে অনেক ব্যাংক সুদের হার কমাতে কমাতে শুরু করেছে।আমদানি পণ্যের চেয়ে দেশে তৈরী সম্ভব এমন পণ্য তৈরির জন্য উচ্চ হার কমিয়ে কাঁচামাল আমদানিতে সুবিধা দেওয়া হবে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে, দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত হবে। তবে দেশি পণ্যের সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। জিডিপি যেভাবে বাড়ছে সেভাবে করদাতা বাড়ছে না। তাই বিনিয়োগ বান্ধব বাজেট উপহার দিতে চায় সরকার। এতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে। এক্ষেত্রে করদাতা বাড়ানোর জন্য করের হার কমানো প্রয়োজন। এ বারের বাজেটে প্রতিবন্ধী, নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধা সুবিদা বাড়ানোর চিন্ত ভাবনা করছে সরকার। 

তিনি ২১ এপ্রিল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদস্থ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) আয়োজিত প্রাক-বাজেট মতবিনিময় ও পরে চিটাগাং মেট্টোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কতৃক একই বিষয়ে আয়োজিত পৃথক মতবিনিময় সভায় চেম্বার নেতৃবৃন্দের সাথে এসব কথা বলেন।
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) আয়োজিত প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায়  এনবিআর চেয়ারম্যান আরো বলেন জীবনযাত্রার মান বাড়লে ও কর সীমা তেমন বাড়েনি।

সিসিসিআই এর সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বড় বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বেশী হয়। তবে ব্যবসায়ীরা যাতে ভাল ভাবে ব্যবসা করতে পারেন সে বিষয়ে সুবিদা দেয়া প্রয়োজন। করপোরেট করের সিলিং সামান্য কমালে ইফেক্ট পড়বে।’
তিনি আরো বলেন, যারা আয় করে তারা ভোক্তা হয়। বাজারে দেশি পণ্যের চাহিদা বাড়ে। তাই এবারের বাজেটে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে। বন্দরে জট সৃষ্টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাস্টম অফিসাররা দ্রুত কাজ না করাতে আমদানিকারকও অলস হয়ে পড়েন। বন্দরের পোর্ট ডেমারেজ অনেক। ব্যবসায়ীরা সচেতন হলে আমরা নিলাম প্রক্রিয়া দ্রুত করব। রিফান্ড এডজাস্ট স্লো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জুলাই থেকে যারা রিফান্ড পাবে সেটি দ্রুত ফেরত দেওয়া হবে। এতে সরকারের ওপর আস্থা বাড়বে।’ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের পণ্য চিহ্নিত করে সাপটা চুক্তির আওতায় আনার অনুরোধ জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। সিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় এনবিআর সদস্য ফিরোজ শাহ আলম,  কানন কুমার রায়, মো. রেজাউল হোসেন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এর পর ওই দিন দুপুরে সিএমসিসিআই সভাপতি খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে সিএমসিসিআই এর হল রুমে একই বিষয়ে পৃথক অপর একটি মত বিনিময় সভা অনুষ্টিত হয়।

এতে মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিটি জেটিতে একটি করে স্ক্যানার মেশিন বসালে সক্ষমতা দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। আয়কর ব্যবস্থায় কোনো সুনির্দিষ্ট অডিট নীতিমালা না থাকায় কোনো ব্যবসায়ী সুস্পষ্ট অ্যাসেসমেন্ট পাওয়ার পরও পুনরায় অডিটের আওতায় পড়ে গোড়া থেকে অ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়ার শিকার হন। তাই এনবিআরকে একটি সুনির্দিষ্ট অডিট নীতিমালা প্রনয়ন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমার মেয়াদে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভালো যোগসূত্র রেখে যেতে চাই। বিভিন্ন পণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণে পর্যালোচনা করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি মোবাইল স্ক্যানার উদ্বোধন করেছি। বছরখানেকের মধ্যে আরও স্ক্যানার মেশিন বসানো হবে। ওজনও স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাবে। নিলামসহ সব কাজে গতিশীলতা আনা হবে।

এ সময় সিএমসিসিআই সহ-সভাপতি এম মাহবুব চৌধুরী, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, প্রকৌশলী আলী আহমদ, বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মঈনুদ্দিন আহমদ মিন্টু, জিপিএইচ ইস্পাতের উপদেষ্টা ওসমান গণি চৌধুরী, রিহ্যাব সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী, বিকেএমইএর পরিচালক শওকত ওসমান, চট্টগ্রাম হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, বাফার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, বারভিডার সাবেক মহাসচিব মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবর, চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি, কক্সবাজার চেম্বার সভাপতি, রাঙামাটি চেম্বারের সভাপতি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।