গাজীপুরে বাসে ধর্ষণ : আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

বিডিসংবাদ অনলাইন ডেস্কঃ

গাজীপুরে ডাকাতির পর তাকওয়া পরিবহনের একটি বাস থেকে স্বামীকে ফেলে দিয়ে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় চালক ও হেলপারসহ গ্রেফতারকৃতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।

রোববার বিকেলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান।

তিনি বলেন, গ্রেফতার পাঁচজনই রোববার বিকেলে গাজীপুরের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের মধ্যে সজীব ও শাহীন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইখলাস উদ্দিনের কাছে, রাকিব মোল্লাহ ও সুমন হাসান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইসরাত জেনিফার জেরিনের কাছে এবং সুমন খান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জুবাইদা নাসরিন বর্নার কাছে জবানবন্দি দেন।

অন্যদিকে ভিকটিম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত আরা সুলতানের আদালতে (২২ ধারায়) জবানবন্দি দিয়েছেন।

শনিবার ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূকে রাতে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ভর্তি করানো হয়। রোববার দুপুরে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হয় বলে জানান ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. এ এন এম আল মামুন। তিনি জানান, হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার সানজিদা হক ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।

হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মামুন জানান, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষায় ভিকটিমের শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়। তারপরও ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিকটিমের ডিএনএ পরীক্ষা জন্য আলামত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, নওগাঁয় আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ওই নারী তার স্বামীর সাথে বাসায় ফিরছিলেন। শনিবার ভোররাতে সোয়া ৩টার দিকে তারা গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস থেকে ময়মনসিংহের ভালুকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসে উঠেন। বাসটি রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তার মোড়ে সকল যাত্রীকে বাস থেকে নামিয়ে দেয় চালক ও হেলপার। এ সময় অপর একটি বাসের আরো তিন শ্রমিকসহ মোট ছয়জন ওই বাসে ছিলেন। পরে ওই নারী ও তার স্বামীকে নিয়ে বাসটি শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পথে হেলপার ও তার সহযোগীরা ওই নারী ও তার স্বামীর কাছ থেকে মোবাইল, নগদ সাড়ে ১০ হাজার টাকা, ব্যাগ ও খাবার সামগ্রীসহ মালামাল ছিনিয়ে নেয়।

পরে তারা গৃহবধূর স্বামীকে মারধর করে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে বাসটি সামনের দিকে যেতে থাকে। কিছু দূর গিয়ে বাসটি ইউ টার্ন নিয়ে পুনরায় চান্দনা চৌরাস্তার দিকে রওনা হয়। এ সময় গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর যাওয়া পর্যন্ত বাসে থাকা ছয়জনের মধ্যে চালক ও হেলাপারসহ পাঁচ ব্যক্তি ওই নারীকে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। বাসটি গাজীপুর মহানগরের রাজেন্দ্রপুর এলাকার ভাওয়ালগড়ের নির্জন জায়গায় পৌঁছালে ১০০ টাকা হাতে দিয়ে ওই নারীকে নামিয়ে বাসটি নিয়ে চান্দনা চৌরাস্তার দিকে চলে যায়।

এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারীর স্বামী আনোয়ার হোসেন শনিবার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে জেলা পুলিশের একাধিক টিম যৌথভাবে সড়কের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। ঘটনায় জড়িতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন।

বিডিসংবাদ/এএইচএস