চট্টগ্রামে ট্রেন ও বাসের অগ্রিম টিকেটের জন্য যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়

ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের দূর্ভোগ লাগবে চট্টগ্রাম রেলের চলছে ৯০টি বগি সংস্কার কাজ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে ঘরমূখো যাত্রীদের বিড়ম্বনা এড়াতে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানায় তোড়জোড় চলছে ৯০টি অতিরিক্ত বগি সংস্কার ও মেরামতের কাজ।

এ গুলোর মেরামত কাজ সম্পন্ন হওয়া ৬০টি বগি গতকাল পরিবহন বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৩০টি কোচ আগামী ১২ ও ১৩ জুনের মধ্যে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানান কারখানার তত্ত্বাবধায়ক।

রেলওয়ে সূত্র জানায় ঈদকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন অতিরিক্ত কোচ এবং স্পেশাল সার্ভিস গুলোতে ২০ হাজারের মতো যাত্রী পরিবহন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

রেলওয়ের পাহাড়তলী কারখানার তত্ত্বাবধায়ক মোঃ মহিউদ্দিন জানান, মানুষ বছরে একবার নাড়ির টানে ঘরমূখো হতে চায়। সে সময় আসে ঈদের ছুটিতে। তাই ঈদে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যায় সে লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও আমাদের কারখানার শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করছেন। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সব কোচ মেরামতের কাজ শেষ করছেন। ইতোমধ্যে আমরা ৬০ বগি মেরামত করে পরিবহন বিভাগকে বুঝিয়ে দিয়েছি। আর ৩০টি কোচ ১২ এবং ১৩ তারিখের মধ্যে বুঝিয়ে দেব। ৯০টি কোচের মধ্যে ৫৫টি কোচ অন্ত:নগর ট্রেনে যুক্ত হবে। অপর ৩৫টি কোচ মেইল ট্রেনে যুক্ত হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম রেলওয়েষ্টশনের প্লাটফর্মে গতকাল সকালে টিকেট কাউন্টারে গিয়ে দেখাগেছে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়াভীড়। দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে যাত্রীদের টিকেট সংগ্রাহ করতে দেখাগেছে। মোমেন হোসেন নামে এক যাত্রী জানান সারারাত জেগে থেকে সাকালে সোনার হরিণ’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার ট্রেনের ঈদযাত্রার টিকিট পেলাম। রাতজাগায় ক্লান্ত ও উদ্বিগ্ন তবে তার মুখে যুদ্ধজয়ের হাসি।

এর আগের রাত দুইটা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন মুশফিকা কুমকুম। কুমিল্লার চারটি টিকিট পেয়ে বাঁধভাঙা হাসি তার মুখে। বললেন, গরমে বাচ্চাদের আরামের কথা ভেবে ট্রেনের টিকিটের জন্য যুদ্ধ করেছি রাতভর। আশাকরি ঈদযাত্রায় স্বস্থি পাবো।
গতকাল রাত তিনটায় পাহাড়তলী থেকে আমেনা বেগম। টিকিট হাতে তিনি বলেন, টিকেট পেয়ে আমি অনেক খুশি। দেশে নিরাপদ বাহন বলতে গেলে ট্রেনই। সড়কে এবার যানজট বেশি। আশাকরি স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবো।

মো. আবদুল মালেক বায়েজিদ থেকে স্টেশনে আসেন সেহেরি খেয়ে, চারটায়। চাঁদপুরের টিকিট পেয়ে বললেন, ভেবেছিলাম দেরি করে ফেলেছি। অনেক দুশ্চিন্তা ছিল এতক্ষণ।

ইপিজেডে কোম্পানিতে কাজ করেন পারবেজ। মাইরের মাতা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় বন্ধু তাকে পৌঁছে দেন স্টেশনে। সকাল সাড়ে আটটায় চারটি টিকিট হাতে পান তিনি। বললেন, আমার স্ত্রীসহ আরও দুই বন্ধু যাবো ঈদ করতে।
স্টেশন ম্যানেজার মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, গতকাল চট্টগ্রামে নয়টি আন্তঃনগর ও একটি এক্সপ্রেস ট্রেনের ৭ হাজার ৭৪০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে কাউন্টারে বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৭৭৪টি। বাকিগুলো অনলাইনে এবং কোটায়।এসব ট্রেনে ১৬টি এক্সট্রা বগি থাকবে।

তিনি জানান, শুক্র ও শনিবার ৭৫ শতাংশ ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছিল। স্টেশনে যাত্রীদের টিকিট সংগ্রহের সুবিধার্থে আটটি কাউন্টারে অগ্রিম ও দুইটি কাউন্টারে নিয়মিত ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, জিআরপি থানা পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য স্টেশন ও আশপাশের এলাকায় কাজ করছেন।

স্টেশন ম্যানেজার বলেন, আজ সোমবার থেকে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে বিশেষ ট্রেনের টিকিট দেওয়া হবে। ১৩, ১৪ ও ১৫ জুন সকাল সাড়ে ১১টা ও বিকেল তিনটা ২০ মিনিটে বিশেষ ট্রেন চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।

অপরদিকে আন্ত:জেলা বাস মালিক সমিতির মহাসচিব প্রফেসর কফিল উদ্দিন আহমেদ জানান চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন রুটে ৫শ’ বাস যাতায়াত করবে। এসব যাত্রীবাহি বাসে দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে।

তিনি জানান, ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রির প্রথমদিনে শুক্রবার এবং দ্বিতীয় দিন শনিবার ব্যাপক ভিড় ছিল। শনিবারও ভোর থেকে চট্টগ্রামের বাস কাউন্টার গুলোতে প্রচন্ড ভিড় লেগে যায়। বিশেষ করে সাতক্ষীরা, বেনাপোল, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, ঈশ্বরদী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, বৃহত্তর বরিশাল, মাগুরা, যশোর, খুলনা, বরগুনার রুটের বাসের চাহিদা ছিল বেশি।

এই ব্যাপারে সৌদিয়া কোচ সার্ভিসের জেনারেল ম্যানেজার মোঃ খোরশেদ আলম জানান, প্রথমদিনের মতো গত শনিবার দ্বিতীয় দিনেও প্রচুর ভিড় ছিল। বিশেষ করে ১২ জুন, ১৩ জুন, ১৪ ও ১৫ জুনের টিকেটের চাহিদা বেশি। জানা গেছে, সকাল ৬টা থেকে প্রতিটি বাস কাউন্টারে টিকেট বিক্রি শুরু হলেও দুপুর হতেই টিকেট শেষ হয়ে যায়। অনেককেই টিকেট না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে।

বিডিসংবাদ/এএইচএস