চট্টগ্রামে দুটি শ্রম আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে গতি নেই

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:চট্টগ্রামের দুটি শ্রম আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে গতি নেই। শ্রম আইন অনুযায়ী, মামলা দায়েরের পর থেকে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও মামলা নিস্পতি হচ্ছে না বলে দাবী ভুক্তভোগীদের। নগরীর কাতালগঞ্জের একটি পরিত্যক্ত ভবনে চলছে ১৫ জেলার দায়িত্বে থাকা দুটি আদালতের কার্যক্রম।

বিচারপ্রার্থীরা মালিকের হয়রানির প্রতিকার চাইতে গিয়ে শ্রম আদালতে চরম দুর্ভোগ ও হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।
চট্টগ্রামে দুটি শ্রম আদালতে সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে অন্তত ২ হাজার মামলা নিষ্পতির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রম আদালতে মামলা রয়েছে ৯২৪ মামলা। এ আদালতে চলতি ৩ মাসে মামলা নিষ্পতি হয়েছে ৫২টি। অন্যদিকে গত এক বছর ধরে দ্বিতীয় শ্রম আদালত বিচারক শূণ্য। বিচারক না থাকায় এ আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঠিকমতো অফিস করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে দ্বিতীয় শ্রম আদালতে কতটি মামলা রয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে আদালতের আইনজীবী সুখময় চক্রবর্তী জানান, দ্বিতীয় শ্রম আদালতে এক হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

১১ বছর আগে চট্টগ্রাম ওয়াসার মিটার পরিদর্শকের চাকরি থেকে বরখাস্ত হন রঞ্জন কান্তি পাল। বেআইনীভাবে চাকুরীচূত্যের অভিযোগে তিনি ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম প্রথম শ্রম আদালতে মামলা করেন। কিন্তু নানা কারণে এ মামলার বিচার এখনও শেষ হয়নি। শুধু মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে তা নয়; রায় ঘোষণা হলেও মাসের পর মাস সেটা কাগজে-কলমে লেখাও হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

৮ থেকে ১০ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি এ রকম বহু মামলা রয়েছে চট্টগ্রামের শ্রম আদালতে। আইনজীবীরা জানান, জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একটি আদালতে ছয় শ্রমিক ও ছয় মালিক প্রতিনিধি নিয়োগ দেয় সরকার। মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে শ্রম আদালতে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কিন্তু প্রায় সময়ই মামলার শুনানিতে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি উপস্থিত থাকে না। এতে দ্রত মামলা নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না।
আইনজীবীদের মতে, বিচারক, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি, বিচারক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংকট, সমন জারিতে বিলম্ব, জবাব দাখিলে সময় নেয়ার কারণে চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে প্রায় দুই হাজার মামলার বিচার ঝুলে আছে।

চট্টগ্রাম শ্রম আদালতের প্রবীণ আইনজীবী সুখময় চক্রবর্তী বলেন, শ্রম আদালত শ্রমিক নির্যাতন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এ আদালত দেখভাল করার কেউ নেই। বেশিরভাগ শুনানিতে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন না। দ্বিতীয় শ্রম আদালতে এক বছর ধরে বিচারক নেই। বিচারক না থাকায় মামলা নিষ্পত্তিতে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। এ অবস্থা দেখে মামলা করতে এসেও অনেকে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।