চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে আ’লীগ সমর্থিত রতন-হানিফকে বিজয়ী ঘোষণা

পুনঃগণনা ও নানান নাটকীয়তা শেষে পাল্টে গেল ফলাফল

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল। ৬ ভোটে এগিয়ে থাকা সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের নাজিম উদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা না করে পুনঃগণনার নামে একদিন পর মাত্র এক ভোটে বিজয় ঘোষণা করা হলো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের এডভোকেট মোহাম্মদ আবু হানিফকে।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) রাত ৯টায় নির্বাচন কমিশানার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের রতন কুমার রায় সভাপতি এবং এডভোকেট মোহাম্মদ আবু হানিফকে সাধারণ সম্পাদক বিজয় ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করেন।
এতে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৯ টি পদের মধ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১০টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এবং বাকি ৯টি পদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদকে বিজয় দেখানো হয়।

ঘোষিত ফলাফলে সভাপতি আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের অ্যাডভোকেট রতন রায় পেয়েছেন ১১৬৩ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের এ এস এম বদরুল আনোয়ার পেয়েছেন ১০৩৮ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে মাত্র ১ ভোটের ব্যবধানে জয় দেখানো হয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত অ্যাডভোকেট আবু হানিফকে। তিনি পেয়েছেন ১৩৮৩ ভোট। তার বিএনপি জামায়াত সমর্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্য পরিষদের নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। ১৩৮২ ভোট। অথচ নির্বাচন শেষে প্রথম গণনায় নাজিম উদ্দিন ৬ ভোট বেশি পেয়ে এগিয়ে ছিলেন।

জানাগেছে, রবিবার ভোট গ্রহন শেষে গভীর রাত পর্যন্ত গণনা চলে। সভাপতি পড়ে রতন কুমার রায়কে নির্বাচিত ঘোষণা করলেও সাধারণ সম্পাদক পদে ৬ ভোটে এগিয়ে থাকা নাজিম উদ্দিনের বিজয় মানতে নারাজ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এডভোকেট মোহাম্মদ আবু হানিফ। তিনি তার পদে ভোট পুনঃ গণনার দাবী জানালে বিরোধ বাধে। এনিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেননি নির্বাচন কমিশনার। পরে সোমবার দিনে পুণঃ গণনার সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু গণনার পরও সোমবার দিনভর কোন ফলাফল ঘোষণা দেয়নি নির্বাচন কমিশনার। আইনজীবিদের অভিযোগ এ নিয়ে নানান নাটক চলতে থাকে। এবং ক্ষোভ বাড়তে থাকে আইনজীবিদের মধ্যে। অবশেষে সোমবার দিবাগত রাত ৯টায় সাধারণ সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয় ঘোষণা করে ফলাফল ঘোষণা করে।
এনিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রিয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিষ্টার মীর হেলাল উদ্দিন বলেন, ২৪ ঘন্টার ভিতরেই বিজয়ীকে পুনঃগণনার নামে ১ ভোটে অন্যায়ভাবে পরাজিত করার এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমরা ভুলবো না ।

নির্বাচন কমিশনার আইনজীবী এনামুল হক জানান, রবিবার দিনভর উৎসব মুখর পরিবেশে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ভোট গ্রহন শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়। নির্বাচনে সমিতির ১০ জন নির্বাহী সদস্যসহ ১৯টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এবারের নির্বাচনে ৩ হাজার ৮০১ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেছেন ৩ হাজার ১০৪ জন ভোটার।
চুড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেছে, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে সমন্বয় পরিষদের কামরুন নাহার ও সমমনা পরিষদের মোহাম্মদ আলী সমান ভোট পাওয়ায় দুইজনই গঠনতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী ছয়মাস করে দায়িত্ব পালন করবেন। দুইজনই এক হাজার ১৯৯ ভোট করে পেয়েছেন।

নির্বাচনে ঐক্য পরিষদ থেকে বিজয়ীরা হলেন- সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক মহিউদ্দিন হক চৌধুরী, পাঠাগার সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম ভুইয়া, সদস্য পদে ইমতিয়াজ আহমেদ জিয়া, মাহমুদুল আলম চৌধুরী, মোস্তফা কামাল, মো. এরফানুর রহমান ও আলাউদ্দিন আল আজাদ।

সমন্বয় পরিষদের পক্ষে বিজয়ীরা হলেন- সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মো. ফয়েজ উদ্দিন চৌধুরী এবং পাঁচটি সদস্যে এম সালাউদ্দিন মনসুর চৌধুরী রিমু, অভিজিৎ আচার্য, খাইরুন্নেসা আক্তার নিশা, অসীম শর্মা ও মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী দোয়েল।

এবারের নির্বাচনেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থিত তিনটি প্যানেল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ এবং অন্যটি আওয়ামী লীগের একাংশ ও বাম সমর্থিত সমমনা আইনজীবী সংসদ। এছাড়া বাম সমর্থিত গণতান্ত্রিক আইনজীবী পরিষদও আলাদাভাবে দুটি পদে প্রার্থী দেন।