চার বছরেও অগ্রগতি নেই রবিউল হত্যা মামলার

রাবি প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রবিউল ইসলাম জামাত-শিবিরের হাতে হত্যার চার বছর অতিবাহিত হলেও মামলার অগ্রগতি হয়নি। রবিউলের পরিবারের দাবি বিচার না হওয়ায় উল্টো অপরাধীরা আমাদেরকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, তদন্তের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।

তদন্তের অগ্রগতি নেই অভিযোগ করে রবিউলের ভাই সোহেল বলেন, মামলার তদন্ত একের পর এক হাত বদলাচ্ছে। হাত বদলে গেলেই নতুন করে মামলার সাক্ষীদের তলব করা হচ্ছে। এভাবে তদন্ত এগোচ্ছে না আর অভিযোগপত্রও জমা দিচ্ছেনা পুলিশ। তার ভাষ্য তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউল গত মাসে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু চূড়ান্তভাবে কোন অভিযোগপত্র জমা দেননি তিনি। এখন আবার হাত বদলে তদন্তের ভার তদন্ত কর্মকর্তা রাশেদুলের উপর পড়েছে।

তিনি জানান, এনিয়ে ছয়বার মামলার হাত বদলেছে। প্রথম দায়িত্বভার পড়ে পুলিশ কর্মকর্তা এস.আই হাফিজ উদ্দিনের উপরে পরবর্তীতে ওমর শরীফের হাতে মামলার দায়িত্বভার পড়ে। কিছুটা উন্নতি পেয়ে ঘটনার এক বছর পর ২০১৪ সালের ৫ মে তিনি অভিযোগপত্র জমা দেন। তবে অভিযোগপত্র দাখিল হলেও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চারজনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। প্রদত্ত অভিযোগপত্র চারজনকে অব্যাহতি দেওয়ায় নারাজি থেকে পুনরায় তদন্তের জন্য আবেদন করে রবিউলের পরিবার। একই বছরের ১১ ডিসেম্বর বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে নতুন করে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানায় তারা।

এরপর ২৪ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে তদাকির জন্য মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। ডিবিতেও নিত্যপদ দাস থেকে আশিকুজ্জামান থেকে রেজাউস সাদিকের কাছে মামলাটি হাত বদল হয়। তবে তার অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ মামলার দায়িত্বভার তিনি রাশেদুল ইসলামকে দিয়েছেন।

প্রথম অভিযোগপত্র দাখিলের তিন বছর হতে গেলেও হেলায় হেলায় পুনরায় অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি পুলিশ  বলে দাবি করছে রবিউলের পরিবার।

বর্তমানে ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, মামলাটি কিছুদিন আগে পেয়েছেন। একবার তদন্ত হয়েছে, তবে বাদি নারাজি থাকায় আবার তদন্ত চলছে। মাঝপথে আছে এটি এবং তদন্তের ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট সময় সীমা বেধে দেওয়া আছে সে অনুযায়ী কাজ এগোচ্ছে।

এদিকে চার বছর হওয়ার উপক্রম তবে বিচার না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন রবিউলের পরিবার। তাছাড়া হত্যা মামলার আসামীরা জামিনে মুক্তি পেয়ে বিভিন্ন ভাবে তাদেরকে হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পরিবারের। ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে মামলার বাদি বড় ভাই শফিকুল ও পরিচালনাকারি সোহেল রানাকে। রবিউলের মা বলেন, তার ছেলেদেরকে হুমকি দিচ্ছে আসামিরা। বলছে একটাকে মারছি আরেকটাকে মারা লাগবে।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৪ ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা মাঠে স্থানীয় ছাত্রদল ও জামাত-শিবির ক্যাডাররা রবিউলকে গুরুতর আহত করে। পরে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় রবিউল। এ ঘটনার পরদিন ১৫ এপ্রিল রবিউলের বড় ভাই বিশ^বিদ্যালয় পার্শ¦বর্তী মেহেরচন্ডী এলাকার ছাত্রদল ও জামাত-শিবির সন্ত্রাসী খ্যাত হাসান হকারের ছেলে সেতু, বাবু কসাইয়ের ছেলে বাবলা, বাবলু ড্রাইভারের ছেলে সোহাগ, আব্দুল জলিলের ছেলে সাঈদ, নেজাম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল, এশরাম গার্ডের ছেলে নিটুল, আব্দুস সাত্তারের ছেলে রাজন, আবুল কালাম মুন্সির ছেলে সুমন, আব্দুল ওহাবের ছেলে জামিল, নূর মোহাম্মদ মোল্লার ছেলে কোয়েল, মুনসাদের ছেলে সুরুজ, মিঠু সহ ১২ জন ও অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে আসামী করে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন।