টেকনাফের ‘কুদুম গুহা’ পর্যটন সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের গেম রিজার্ভ বাংলাদেশের একমাত্র গেম রিজার্ভ বন। গেম রিজার্ভের অভ্যন্তরে রইক্ষ্যং এলাকায় কুদুমগুহার অবস্থান। এটি বাংলাদেশের একমাত্র বালু-মাটির পাহাড়ী গুহা। কুদুমগুহা প্রচুর বাদুড়দের আশ্রয়স্থল। তাই এটিকে বাদুড় গুহাও বলে। কুদুমগুহায় দুই প্রজাতির বাদুড় ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির শামুক, মাকড়সা এবং যখন পানি ওঠে তখন জলচর জোঁকসহ নানা প্রাণীদের বাস।

৩১ জুলাই সোমবার দুপুরে কুদুমগুহা পর্যটন কেন্দ্রের আনুষ্টানিক উদ্বোধন করেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ আলী কবির। পর্যটন কেন্দ্রের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলকে নিয়ে খুলে গেছে পর্যটন সম্ভাবনার দ্বার। কক্সবাজার শহর থেকে ৮৮ কিলোমিটার দক্ষিণে টেকনাফের দমদমিয়া এলাকায় মুছনী গ্রামে অবস্থিত গেম রিজার্ভ এর ভেতরে কুদুমগুহা। স্থানীয়রা বলে কুদুং। দুর্গম পাহাড় অতিক্রম করে এই গুহায় যেতে হয়। এখানকার রোমাঞ্চকর পথ ।

উদ্বোধন উপলক্ষে একসভা কুদুমগুহা এলাকায় হোয়াইক্যং সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলমগীর চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দক্ষিণ বনবিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আলী কবির, বিশেষ অতিথি কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রীজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা, দৈনিক প্রথম আলো কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানা, বেসরকারি সংস্থা ক্রেল এর কক্সবাজার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আলম খান, নিসর্গ নেটওয়ার্ক সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ। বক্তব্য দেন টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা তাপস কুমার দেব, হোয়াইক্যং বনবিট কর্মকর্তা গাজী ওমর আলী, ক্রেল প্রকল্পের অনুদান কর্মকর্তা এম এ হেলাল উদ্দিন, নিসর্গ নেটওয়ার্কের সদস্য সাইফুল্লাহ, সিএমসি ফাসিয়াখালী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এলমুন নাহার মুন্নি, সদস্য আকতার কামাল।

পাহাড়ের গাঁ ঘেষে দাড়িয়ে আছে কয়েক শতাব্দী পুরোনো “কুদুম গুহা”। প্রাকৃতিক ভাবে তৈরী পর্যটন সম্ভাবনাময় এই গুহা নিয়ে রয়েছে নানান কিংবদন্তী। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে একষট্টি কিলোমিটার দুরে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের গহীন অরণ্যের এই গুহা নিয়েই গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র।

হোয়াইক্যং ইউনিয়নের গহীন অরণ্যের হরিখোলা চাকমা পল্লী থেকে পায়ে হাটা আঁকা বাঁকা পাহাড়ী পথ। ঘন্টা খানেক পর দেখা মেলে গুহার। ভেতরে হীম শীতল জল কোথাও কোমর আবার কোথাও গলা সমান। চাকমা শব্দ কুদুং অ থেকে এর নাম হয় কুদুম গুহা। এ নিয়ে রয়েছে নানান জনশ্রুতি।

চাকমা পল্লীর বাসিন্দারা জানান, জনশ্রুতিতে আছে এখানে এক পরী বাস করতো। মিয়ানমারের (বার্মা) এক ওঝা এসে তাকে হত্যা করে। সেই থেকে এটি এভাবে পড়ে আছে।

স্থানীয়রা বলেন, একশো বিশ মিটার লম্বা আর আট ফুট প্রশস্থ গুহায় দেখা মেলে চামচিকা বাদুর,সাপসহ নানান প্রজাতির বন্যপ্রানীর। বৈচিত্রময় এই গুহা আকর্ষন বাড়াবে প্রকৃতি প্রেমীদের।

স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীদের সুবিধার্তে সংযোগ সড়ক নির্মানসহ গুহার উন্নয়নে নানান উদ্যোগের কথা জানালেন বন বিভাগীয় কর্মকর্তা।

বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মোঃ আলী কবির বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হওয়ার পর্যটকেরা কুদুমগুহায় যেতে পারেন না। তাই পায়ে হেঁটে গুহায় যাতায়াতের রাস্তা, বিশ্রামাগার, শৌচাগার, টিকিট কাউন্টার তৈরি করে এই পর্যটন কেন্দ্রকে আকর্ষণীয় করা হয়েছে। পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। কুদুমগুহা কেন্দ্র দর্শনার্থীদের টিকিটমুল্য শিক্ষর্থীদের জন্য পাঁচ টাকা ও প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০টাকা বলে জানান তিনি। সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানা বলেন, এক সময় টেকনাফের মাথিনেরকুপ ও নেটং পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহি বৃটিশ বাঙ্কারটিও অবহেলিত ছিল। সংস্কার ও উন্নয়নের মাধ্যমে দুটি কেন্দ্রকে আকর্ষনীয় করা হয়েছে। এখন প্রতিবছর ছয়-সাত লাখ পর্যটক মাথিনেরকুপ দর্শনে যান। পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে কুদুমগুহা পর্যটন কেন্দ্রেও লাখো মানুষের সমাগম ঘটবে। এছাড়া উন্নয়ন ঘটবে অবহেলিত এই এলাকার । টেকনাফ কুতুপালং এলাকার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, শুধু দর্শনীয় স্থানের ওপর ভিত্তি করেই পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠে না। পর্যটনের জন্য প্রয়োজন দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি অনুকূল সামাজিক পরিবেশ ও অবকাঠামোগত পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। পরিকল্পনামত মানুষের সৃজনশীলতায় সৃষ্ট স্থাপনা ও অবকাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় ঘটাতে হবে।

তিনি বলেন, সরকারকে এই সম্ভাবনাময় শিল্প ব্যবস্থাপনার কথা গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে। দেশীয় বিনিয়োগকারীদের অধিক সুবিধা দিয়ে এই শিল্পে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ দেশের প্রতিষ্ঠান বেশি হলে আমাদের লাভ বেশি হবে।

চেম্বার সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কুদুমগুহার আশপাশে বসবাসকারী চাকমা পল্লীতে পর্যটকদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা গেলে স্থানীয়রা লাভবান ও উপকৃত হবেন। এক্ষেত্রে কুদুমগুহার অবকাঠামোগত আরও উন্নয়ন ঘটাতে হবে। কুদুমগুহার তিন পাশে প্রবাহিত তিনটি পাহাড়ি ছড়াকে সংস্কার করে পর্যটকদের নৌকাভ্রমণের সুযোগ করে দিতে হবে।