তিন দিনের ভারী বর্ষণে আবারো চকরিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : পানি বন্দি ৩ লাখ মানুষ

বশির আল মামুন,চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ  টানা তিন দিনের মুষলধারে বৃষ্টিতে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে চকরিয়া উপজেলার নিম্মাঞ্চল আবারো প্লাাবিত হয়েছে। চকরয়িা পৌরসভা সহ উপকূলীয় অনেক এলাকায় ঘর-বাড়িতে মাতামুহুরী নদীর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ও জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে।

ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গত রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা তিনদিন মুষলধারে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় চকরিয়ার আভন্তরীন অনেক সড়ক ভেংগে গিয়ে ও পানিতে ডুবে  যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এতে উপজেলা সদরের সাথে গ্রামাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চরম ঝুকির মধ্যে রয়েছে আরকান সড়কের মাতামহুরী নদীর পুরাতন ব্রীজ। নদীর তীব্রস্রোতের ধাক্কায় যে কোন মূহুর্তে ব্রীজটি ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান,গত রবিবার সকাল থেকে ভারী বর্ষণে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে অন্তত ১৫টি ইউনিয়নে বৃষ্টির পানি ও ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এরমেধ্যে বদরখালী, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, পশ্চিম বড়ভেওলা, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, চিরিঙ্গা, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, কাকারা ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের প্রায় এলাকা ঢলের পানিতে ঢুবে গেছে। এসব এলাকার অনেক ধর্মীয় ও একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্টান সহ প্রায় ৫ হাজার ঘর-বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। মাতামুহুরীর নদীর তীরবর্র্তী ঘুণিয়া এলাকায় ৬টি বাড়ী নদীর গর্তে বিলীন হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার ও সারাদিন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত তিনদিনে এসব এলাকার শ্রমজীবি মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ঠিকমতো যাতায়ত করতে পারছে না। পানি বৃদ্ধি পেয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় তিন লাখ মানুষ। অতি বর্ষণের ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক আভ্যন্তরিণ সড়ক ভেঙ্গে গেছে।

অনেক স্থানে পাহাড়ের মাটি ধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে বেতুয়াবাজার সড়ক, বহদ্দারকাটা সড়ক, মানিকপুর সড়ক, হারবাং, বরতইলীতে পাহাড় ধসে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। মঙ্গবাবার বিকাল নাগাদ দেখা গেছে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর দু’পাড়ে বসবাসরত মানুষকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে।

চকরিয়া পৌরশহরে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অতিবর্ষণের পানি সহজেই নিষ্কাশন হতে না পেরে পৌরসভার হালকাকারা, কাজীর পাড়া, চরপাড়া, বিমানবন্দরপাড়া, ফুলতলী, করাইয়াঘোনা, নামার চিরিঙ্গা, খোয়াজনগর এলাকায় জলবদ্ধতা সৃস্টি হয়ে মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ১, ২, ৩ ও ৮ নং ওর্য়াডের অনেক বাড়ি-ঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্টানে পানি ঢুকে পড়েছে।

তা ছাড়া ও মাতামহুরী নদী দিয়ে প্রবাহিত বন্যায় চকরিয়ার চিরিংগা- কৈয়ারবিল সড়ক, চিরিংগা- কাকারা সড়ক, চকরিয়া-মগনামা সড়ক ও চিরিংগা-বদরখালী সড়ক, ভাঙগারমূখ- দিগরপানখালী সড়ক  সহ আভন্তরীণ সড়কের একাদিক স্থানে পানিতে ডুবে গিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের খুটাখালী গ্রামীন ব্যাংক এলাকায় সড়কের উপরদিয়ে বানের পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।

এ ছাড়া উপজেলার চিরিংগা ইউনিয়নের চরন্দ্বীপ, শাহার বিলের রামপুর, পশ্চিম বড়ভেওলা, বদরখালী, খুটখালী এলাকার হাজার হাজার একর চিংড়ী ঘের জোয়ার ও বানের পানিতে একাকার হয়ে গেছে। এতে ঘের মালিক ও চিংড়ী চাষীদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাহেদুল ইসলাম জানান, অতিবর্ষণের কারণে মাতামুহুরী নদী দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বরইতলীর গোবিন্দপুর, কাকারার শাহওমরাদ এলাকায় বানের পানি ঢুকে পড়েছে। কাকারা সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনো পযন্ত কোন বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করেনি। এসমস্ত এলাকার তাৎক্ষণিক দূর্যোগ এড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খোলা রাখতে বলা হয়েছে।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, গত তিনদিন ধরে চকরিয়ায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ অবস্থার কারনে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমেছে পাহাড়ি ঢলের পানি। ফলে নদীর পানি আর বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে পৌরসভার একাধিক নিমাঞ্চল। মেয়র বলেন, গতকাল দুপুর থেকে পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর বাঁধ এলাকা অতিক্রম করে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে নদীর পানি। স্থানীয় মজিদিয়া মাদরাসাসহ আশপাশ এলাকার অন্তত শতাধিক পরিবারের বসতঘরে পানি ঢুকে পড়ার কারনে লোকজন দুর্ভোগে পড়েছে।
উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ভারী বর্ষণের কারনে মাতামুহুরী নদীতে বেড়ে চলছে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি। ইতোমধ্যে নদীর পানি ঢুকে তাঁর ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের বসতঘর প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে গতকাল সকাল থেকে পানি প্রবাহ বেড়েছে। এ অবস্থার কারনে নদীর শাখা খাল হয়ে তাঁর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদসহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। এলাকার দুর্গত জনসাধারণ বর্তমানে পানিবন্দি হয়ে পড়ার কারনে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার ও বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জাহাংগীর আলম বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে মাতামুহুরী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীর তীরবর্তী নীচু এলাকার লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে পানি। এ অবস্থার কারনে দুই ইউনিয়নের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন বলেন, দুইদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢলের প্রবাহ বেড়েছে। এ অবস্থার কারনে উপজেলার রামপুর

চরন্দ্বীপের  চিংড়িজোনের শত শত চিংড়ি প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে চিংড়ি প্রকল্প তলিয়ে গেলে মাছ ভেসে গিয়ে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হবে চিংড়িজোনের হাজারো চাষী।