নতুন অফিস বাজারে সাব ইজারাদারদের দৌরাত্ম : প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর নতুন অফিস বাজারে চলছে ইজারাদারের চরম নৈরাজ্য। বেড়েছে কথা কথা হাতাহাতি মারামারির মতো ঘটনা। বাজারের বনিক সমিতিও ইজারাদারের দৌরাত্ম থামাতে পারছে না। এমন কি খোদ ইউনিয়ন পরিষদও। বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা সাব ইজারাদারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। তাই ভুক্তভোগীরা ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, হাট বাজার সাব-লিজ বা হস্তান্তরযোগ্য না হলেও নতুন অফিস বাজার ইজারাদার ইসলামাবাদের পাহাশিয়াখালী এলাকার দিদার মেম্বার এক বছরের জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বাজারটি ইজারা নেন। সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের উত্তর নাপিতখালী রিজার্ভপাড়ার রফিক নামের এক জামায়াত নেতা বেশি লাভ দেয়ায় তার কাছে সাব-লিজ দিয়েছেন দিদার মেম্বার । ফলে জোর করে অতিরিক্ত টোল (হাসিল) আদায় করা হচ্ছে।

সরজমিন নতুন অফিস বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন অফিস বাজারটি সকাল সন্ধ্যা প্রতিদিন বাজার বসে। বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রেতা ও ক্রেতার সমাগম ঘটে। কিন্তু সেখানে টাঙ্গানো হয়নি টোল আদায়ের কোন মুল্য তালিকা।

ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর বাজারের টোল দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে। টোল আদায়ের কোন সাইনবোর্ড বা মুল্য তালিকাও বসানো হয়নি। ইচ্ছে মতো টোল আদায় করা হচ্ছে।
তরকারি-বিক্রেতা আব্বাস আলী জানান, গত বছর ২০ টাকা লাগতো এ বছর দিতে হচ্ছে ৪০/৫০ টাকা।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা দূর থেকে আসি তাই আমাদের বেশি দিতে হয়। না দিলে নাজেহাল করা হয়। বেশি বাড়াবাড়ি করলে সাব ইজারাদারের পুরো পরিবারের সদস্যরা বাজারে এসে তান্ডব চালায়।

পান-বিক্রেতা জয়নাল জানান, তরকারির বাজারে দোকান দেয়ায় আমার ২ রকমের টোল দিতে হচ্ছে। গত বছর যেখানে মাত্র ২০ টাকা দিলেই হতো সেখানে এ বছর দিতে হচ্ছে ৯০ টাকা। মাছ বিক্রেতাদের কাছ থেকেও টোলের নামে এক প্রকার জিম্মি করে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।

বাজারের বিভিন্ন ফার্মেসী ও মুর্দির দোকানে কাভার্ড ভ্যান বা পিকআপ, বিস্টুট ভর্তি জীপে করে মালামাল সরবরাহের জন্য গাড়ি বাজারে থামলেই দিতে হচ্ছে টোল বা হাসিল। গরুর মাংস কিংবা গরু-ছাগলের হাটেও অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাছ-বিক্রেতা, হকার, সহ শাক বিক্রি করতে আসা কৃষি-শ্রমিকদের কাছ থেকেও আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টোল। এতে করে বিক্রেতারা অতিরিক্ত দামে মালামাল বিক্রি ও ক্রেতাদেরকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

নতুন অফিস বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি মোঃ ফরিদ জানান, অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে এটা সত্যি। জোর করে হাসিল আদায় নিয়ে প্রতিদিন একটি/দুটি মারধর ও হামলার ঘটনা ঘটছে। অতিরিক্ত টোল আদায়ের ঘটনা নিয়ে হামলার শিকার অনেক ব্যক্তির অভিযোগ বণিক সমিতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদেবিচারাধীন রয়েছে।

বণিক সমিতির নেতারা আরো বলেন, কক্সবাজার শহরের এক প্রভাবশালী জামায়াত নেতার ইশারা এধরনের হয়রানী ও হামলার ঘটনা নিয়ে বিচার শালিস করতে বাজার কমিটি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ হিমছিম খাচ্ছে। তারা এব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম বন্ধে কার্যকর ও ফলপ্রসূ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে এ কাজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা দরকার। গুটি কয়েক চাঁদাবাজের চেয়ে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে পথে পথে চাঁদাবাজি ও ইজারাদারদের দৌরাত্ম বন্ধে সাঁড়াশি অভিযান সময়ের দাবি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপর এধরনের অত্যাচার কি সমাপ্তি হবে না। তাহলে এদেশ কি চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত! চাঁদাবাজরাই কি সব? তাদের দৌরাত্ম কি অবাধে চলবেই? তাদের দেখার মতো কেউ কি সরকার ও প্রশাসনে নেই? থাকলে সে দায় নিরপরাধ ক্রেতাদের বহন করতে হবে কেন? চাঁদাবাজরা কি সরকার ও প্রশাসনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী- এ প্রশ্ন ক্রেতা সাধারণের।

ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম জানান, নতুন অফিস বাজারে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। অনেক ব্যবসায়িকে সাব ইজারাদার কর্তৃক মারধরের অনেক বিচার ইতোপূর্বে করেছি। প্রতিদিনই ব্যবসায়ি ও ইজারাদারের মধ্যে টোল আদায় নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। আমি অভিযোগগুলো সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অবহিতও করেছি।