নরসিংদীতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইএনওসহ আদালতে মামলা দায়ের

নরসিংদী প্রতিনিধিঃ নরসিংদীতে সরকারী বিধি মালা  উপেক্ষা করে নিয়মবহির্ভুতভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ৫ জন পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের এক চাঞ্চল্যকর সংবাদ পাওয়া গেছে।  নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই চাঞ্চল্যকর মামলাটি করা হয়।  মনোহরদী বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালতে এক নিয়োগ প্রার্থী রাসেল তাইজ বাদী হয়ে মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ৫ জন পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। যার দেওয়ানী মোকদ্দমা নং-২৮/২০১৭ইং। দায়েরকৃত মামলার নথিপত্রানুযায়ী মনোহরদী সহকারী জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো: আব্বাস উদ্দিন মামলার বিবাদী মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহিদ উল্লাহ, কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রশিদ, প্রকৌশলী আবদুস শাকের ও উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ইমানুর রহমানের বিরুদ্ধে সমনের নির্দেশ প্রদান করেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার পরিষদে রাজস্ব খাতে সৃজিত ‘ সাট-মুদ্রাক্ষরিক-কাম কম্পিউটার অপারেটর’ পদে জনবল নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞপন প্রকাশ করে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চড়ান্ত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইএনও, কৃষি কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও সমাজসেবা কর্মকর্তার সম্বনয়ে বাছাই কমিটি গঠিত হয়। উপজেলা পরিষদের কোন সরকারী কর্মচারী নিয়োগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী স্থানীয় (যদি থাকে) একটি পত্রিকা এবং কমপক্ষে দু’টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার বিধান রয়েছে। বিধানানুযায়ী সংশ্লিষ্ট পদে যোগ্যতা, বেতন ও প্রচলিত ভাতাদিসহ প্রকাশ পূর্বক বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিকদের নিকট থেকে দরখাস্ত আহবান করতে হবে। এক্ষেত্রে ২ও ৫ নং বিবাদী হীন স্বার্থ-চরিতার্থ করতে  গ্রামীণ দর্পন নামক একটি স্থানীয় পত্রিকা ব্যতিরেখে বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক  সংবাদ পত্রে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ না করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরকারী বিধিমালা লংঘন করে প্রার্থীদের নিকট থেকে দরখাস্ত আহবান শেষে লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। ব্যবহারিক পরীক্ষায় কারিগরি কলেজের বিষয় ভিত্তিক একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক উপস্থিত রাখার নিয়ম থাকলেও তা রাখা হয়নি বলে মামলা উল্লেখ করা হয়েছে।

১২ এপ্রিল দায়েরকৃত মামলায় বিজ্ঞ বিচারক মো: আব্বাস উদ্দিন মামলার বিষয়টি আমলে নিয়ে ১৩ এপ্রিল বিবাদীদের বিরুদ্ধে সমন জারির নির্দেশ প্রদান করে। বিজ্ঞ বিচারক বিবাদীগণদের আগামী ৮ মে-২০১৭ তারিখে আইনজীবির মাধ্যমে আদালতে উপস্থিত হয়ে স্ব-পক্ষে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন উপস্থাপন করার নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলার বাদী মনোহরদী উপজেলার নলুয়া গ্রামের তাইজ উদ্দিনের ছেলে রাসেল তাইজ জানান, ইএনও এবং সমাজসেবা কর্মকর্তা নিজেদের পছন্দের লোক নিয়োগের করতে সরকারী নিয়মনীতি ভঙ্গ করে শুধু মাত্র একটি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপনটি প্রকাশ করার ফলে বহু সংখ্যক আগ্রহী যোগ্য প্রার্থীরাই বিষয়টি জানতে না পেরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। যার ফলে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীর উপস্থিতি কম হয় এবং অতি সহজেই তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার হীন স্বার্থ-চরিতার্থ করা ব্যর্থ চেষ্ঠা চালায়।

এব্যাপারে মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান মো: সাইফুল ইসলাম খান বীরু’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘নিয়োগ-বাছাই কমিটিতে আমি সদস্য নই। উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে উক্ত মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছে। আমি তিনটি পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কাগজে স্বাক্ষর করেছি।

মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নিয়োগ বাছাই কমিটির আহবায়ক মুহাম্মদ শহিদ উল্লাহ জানান, মামলায় বাদী যেসকল বিষয় উল্লেখ করেছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথ ভাবেই সম্পন্ন করা হয়েছে। দু’টি জাতীয় পত্রিকাসহ একটি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যবহারিক পরীক্ষায় একজন কারিগরি কলেজের বিষয় ভিত্তিক অভিজ্ঞ শিক্ষকও উপস্থিত ছিল।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ইমানুর রহমান জানায়, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি আমি অবগত। ইএনও স্যার আমাকে নিয়োগের বিষয়টি অবগত করেছেন। পরবর্তীতে ২ মাসের দাপ্তরিক ট্রেনিং থাকায় আমি স্টেশন লিভ করি, এরপর কি হয়েছে তা আমি জানিনা।