নরসিংদীতে একাত্তর পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ রোহিনী’র পরিবারের মানবেতর জীবন

নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীতে দীর্ঘ ৪৫ বছর পূর্বে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রারম্ভিকালীন বর্বর পাক-হানাদার বাহিনীর বন্দুকের গুলিতে নিহত রোহিনী বর্হ্মনের একমাত্র নাবালক পুত্র সন্তান রঞ্জিত বর্হ্মন পালের বিবর্তনে উপার্জনক্ষম হয়ে আজ ৭ জনের পরিবার-পরিজন নিয়ে অতীব মানবেতর জীবন নির্বাহ করার এক মর্মান্তিক সংবাদ পাওয়া গেছে। তৎকালীন ১৯৭১ সনে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধন ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ২৫ মার্চ তৎকালীন পাকবাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যাসহ জাতির জনকের গ্রেফতারের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানী সৈনিকরা দেশের সর্বত্র দখল করে নেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় দখলদারিত্বের নিমিত্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র দেশে ছড়িয়ে এদেশের মুক্তিকামী জনতার উপর নির্বিচারে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিকান্ডসহ ব্যাপক ধ্বংষাত্মক কার্যক্রম শুরু করে। এরই প্রেক্ষাপটে দেশের অন্যান্য এলাকার ন্যায় পাক হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সনের এপ্রিল মাসে নরসিংদী শহরসহ বিভিন্ন উপজেলাসমূহ ছড়িয়ে পরে।   পাকিস্তানী বর্বর সৈনিকরা ১৬ এপ্রিল সকাল ১০টায় নরসিংদী পৌরসভার তৎকালীন মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত নরসিংদী থানার মূল ফটকের সম্মুখে বটতলায় রোহিনী বর্হ্মন, বৌদ্ধনাথ নাগ, বাছির উদ্দীন, বাচ্চু মিয়াসহ ১০ জন মুক্তিকামী মানুষদেরকে সাড়িবদ্ধ লাইনে দাড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করে। বর্বর পাক হানাদার বাহিনীর নরপশুরা ঐদিন প্রথম ১০ জন নিরীহ মুক্তিকামী নাগরিককে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে নরসিংদীর সার্বিকে কলংকিত করেছিল।

নরসিংদী পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগীয় মৃত্যু সনদপত্রের সূত্রানুযায়ী এবং পাক হানাদারদের গুলিতে নিহত রোহিনী বর্হ্মনের একমাত্র পুত্র রঞ্জিত বর্হ্মনসহ মানবেতর জীবিকা নির্বাহ করে আর নিরীহ পরিবারের সদস্যরা মর্মান্তিক নিরীহ পরিবারের সদস্যরা মর্মান্তিক ঘটনার বিবরণ দিতে পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রারম্ভিকক্ষণে বর্বর হালদার বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে সর্বপ্রথম শহীদ মুক্তিকামী ১০ জনের পরিবারের সদস্যরা সরকারী-বেসরকারী সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আজ দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছে। নরসিংদী পৌরসভার টেকপাড়া মহল্লার রঞ্জিত বর্মনের পিতা শহীদ রোহীনি বর্হ্মনের মৃত্যুকালে তার বয়স (৫৮) বছর হয়েছিল। শহীদ রোহিনী বর্হ্মনের এতিম পুত্র রঞ্জিত বর্হ্মন কালের বিবর্তনে স্ত্রী, পুত্র কন্যাসহ ৭ জনের পরিবার-পরিজন নিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। ৪৫ বছর পূর্বে তৃতীয় শ্রেনীতে অধ্যায়নকালীন নাবালক একমাত্র শিশু পুত্র রঞ্জিত বর্হ্মনকে রেখে পাক হানাদারদের গুলিতে তার পিতা রোহিনী বর্হ্মনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

১৯৭১ সনের ১৬ এপ্রিল সকাল ১০টায় পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যদের অন্যতম শহীদ রোহীনি বর্হ্মনের এতিম সন্তান রঞ্জিত বর্হ্মনের পরিবার স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিত ৭ জনের সদস্য নিয়ে অতীব মানবেতরভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে। শহীদ রোহিনী বর্হ্মনের পুত্র উপার্জনক্ষম পুত্র রঞ্জিত কুমারসহ তার পরিবারের সদস্যরা কান্নাজড়িত কন্ঠে প্রতিবেদককে জানান, শিশুকাল থেকেই পিতা শহীদ হওয়ার পর আমি সর্বস্ব হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। চরম অবহেলা, অযত্নে পাক-বাহিনী ধ্বংসযজ্ঞসহ বহু চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে এখনও মরার মতো বেঁচে আছি। বর্তমানে ৭ জনের পরিবার নিয়ে অতীব বেহালদশায় মানবেতর উপায়ে জীবন যাপন করছি। শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে তৎকালীন জাতীয় জনক বঙ্গবন্ধু মাত্র ২ হাজার টাকা অনুদানের চেক দিয়েছিলেন। এরপর বিগত ৪৫/৪৬ বছরের মাঝে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা ভাগ্যে মেলেনি।

বেহাল দশায় পরিনত অসহায় রঞ্জিত বর্হ্মনের পরিবারের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য সরকার তথা স্থানীয় প্রশাসনসহ সকলকে এগিয়ে আসার জন্য তার পরিবার সদস্যরা আকুল আবেদন জানিয়েছে।