নরসিংদীতে চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্র হাসিবুল হাসান চয়ন হত্যার ঘাতক ইমরান গ্রেফতার

নরসিংদী প্রতিনিধি
নরসিংদীতে চাঞ্চল্যকর হাসিবুল হাসান চয়ন হত্যার ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামী ইমরানকে (২০) ঘটনার ৩ বছর পালিয়ে থাকার পর  অবশেষে নরসিংদীর পুলিশ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাদ্খোলার মোড়ে ইসরাত স্পিনিং মিলের অভ্যন্তরে এক বিশেষ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। নরসিংদী সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মোঃ আরকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে গাজীপুরের শ্রীপুর থানা পুলিশের যৌথ অভিযান চালিয়ে শ্রীপুরের মাওনা তুলা গবেষনা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন মাষ্টার বাড়ী এলাকার ইসরাত স্পিনিং মিল অভ্যন্তরে এক বিশেষ অভিযান চালিয়ে ফাঁসীর পলাতক ফেরারী আসামী ইমরানকে গ্রেফতার করে।

২০১৩ সনের ২৬ জুন  নরসিংদী  জেলা শহরের ব্রাহ্মন্দী কে,কে,এম, সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেনীর ছাত্র ও ভেলানগর  মহল্লার ভাড়াটিয়া বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ সোহরাব হোসেন এর শিশু পুত্র হাসিবুল হাসান চয়নকে একদল অপহরণকারীচক্র মুক্তিপণ আদায়ের নামে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে। ঘাতকচক্র হাসিবুল হাসান চয়নকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে নিহত স্কুল ছাত্রের পিতা মোঃ সোহরাব হোসেন এর নিকট মোবাইল ফোনে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে আসছিল। এদিকে ঘাতকচক্র হাসিবুল হাসান চয়নকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে একই দিন গভীর রাতে নিহত শিশুর লাশ ট্রলিব্যাগে ঢুকিয়ে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনযোগে কালীগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ঘোড়াশাল ব্রীজে পৌছে ট্রেনের ছাদ থেকে লাশ বহনকারী ট্রলি ব্যাগটি নরসিংদীর শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিয়ে যায়। এর পর ঘাতকচক্র কালীগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে যেয়ে ট্রেন থেকে নেমে পালিয়ে যায়।
অপরদিকে ঘাতকচক্রটি নিহত শিশু স্কুল ছাত্রের পিতার নিকট অব্যাহতভাবে মোবাইল ফোনে  ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে আসছিল। নরসিংদী সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের ৫ অপহরকারীচক্র জেলা শহরের ব্রাহ্মন্দী কে, কে, এম, সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেনীর ছাত্র ও ভেলানগর  মহল্লার ভাড়াটিয়া বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ সোহরাব হোসেন এর শিশু পুত্র হাসিবুল হাসান চয়নকে বিকেলে খেলার সময় বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে অপহরণ ও পরবর্তীতে নির্মমভাবে হত্যা শেষে মুক্তিপণ চেয়ে আসছিল। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানা পুলিশ শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে শিশু হাসিবুল হাসান চয়ন এর ট্রলিব্যাগে বহন কারী লাশটির সন্ধান পেয়ে নরসিংদী মডেল থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে নিহত স্কুল ছাত্রের ট্রলিব্যাগসহ তার লাশ উদ্ধার করে।

ঘটনার পরদিন ২৭ জুন নরসিংদী মডেল থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ঘাতকচক্রের মুক্তিপণের ২ লক্ষ টাকা দেয়ার শর্তে নিহতের পিতা সোহরাব হোসেন সম্মতি জানালে তাদের দেয় ঠিকানামতে ঢাকা -সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা বাসষ্ট্যান্ড এলাকার একটি বিকাশ এজেন্ট’র দোকানের সামনে থেকে ঘাতক ৫ জনের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। অপর ঘাতক বদরপুর গ্রামের হযরত আলীর পুত্র মোঃ ইমরান পালিয়ে যায়। নরসিংদীতে চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্র হাসিবুল হাসান চয়ন হত্যার ঘটনায় নিহতের পিতা সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে ঘাতক ৫ জনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং ৭৩(৫)১৩ ইং । আসামীরা হচ্ছে সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বদর পুর গ্রামের ইয়ামিন খানের পুত্র সজিব খান , খোরশেদ আলম (স্বপন)পুত্র শাখিল খান, আফতাব উদ্দিনের পুত্র শামিম উসমান, রুহুল আমিন মিয়ার পুত্র রুবেল মিয়া ও হযরত আলীর পুত্র ইমরান মিয়া।  পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই  নরসিংদী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জেলা জজ আদালতে উক্ত মামলাটি দীঘ প্রায় ৩ বছর বিচারাধীন কালে নরসিংদী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক শামীম আহাম্মদ ১৪ জন স্বাক্ষীর জবান বন্দী গ্রহন শেষে উল্লেখিত ৫ জন আসামীকে দোষী সাবস্ত্য করে ফাঁসির রশিতে জুলিয়ে মৃত্যু দন্ডের আদেশ প্রদান করেন। হত্যাকান্ডের পর থেকে  হযরত আলীর পুত্র ঘাতক ইমরান মিয়া গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। ঘাতক ইমরান আইনকে উপেক্ষাকরে গাজীপুর উপজেলার শ্রীপুর মাওনা তুলা গবেষনা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন মাষ্টার বাড়ী এলাকার ইসরাত স্পিনিং মিলে র্দীঘ প্রায় ৩ বছর যাবৎ গোপনে চাকরি নিয়ে বসবাস করে আসছিল। বিগত ২ মাস যাবত ফেরারী আসামী ইমরান রাজশাহী জেলার এক নারী কর্মীকে বিয়ে করে বিবাহিত জীবন যাপন করে আসছিল। অবশেষে ঘটনার প্রায় ৪ বছর পর  ১৮ জানুয়ারী ২০১৭ নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বিপিএম’র সহায়তায় নরসিংদীর সদর মডেল থানা পুলিশ ও শ্রীপুর থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে ফেরারী আসামী ঘাতক ইমরানকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০(সংশোধনী-২০০৩) এর ৮ ধারা তৎসহ দন্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় বিজ্ঞ বিচারক ৪২ পৃষ্ঠার উপরোক্ত আদেশ প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, বিজ্ঞ আইনজীবী রিনা দেবনাথ। অপরদিকে আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, এড. শওকত আলী পাঠান, এড, আতিকুল বারী চৌধুরী, এড. নিগার সুলতানা ও এড. মনিরা বেগম।