নরসিংদীতে চাঞ্চ্যলকর হত্যা মামলায় ৭ জনের ফাঁসির রায়

নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীতে  পলাশ উপজেলার গালিমপুর গ্রামের চাঞ্চল্যকর সামসুল হক হত্যা মামলায় আদালত একই পরিবারের ৪ জনসহ ৭ জনেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেছেন। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের রায় দেন।

২২ মে  সোমবার দুপুর আড়াইটায় নরসিংদীতে জনাকীর্ণ এক আদালতে এ রায় দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন । অপরদিকে বিজ্ঞ বিচারক  মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার আদেশ দেন ।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, মইজ উদ্দিনের ছেলে আলেক মিয়া ও তার স্ত্রী রুপবান, তার পুত্র শরীফ মিয়া ও অপর পুত্র আরিফ মিয়া, মহব্বত আলী মুন্সির পুত্র আব্দুল গাফ্ফার, সিরাজ মিয়ার পুত্র মারফত আলী, মুল্লুক চাঁনের পুত্র তোতা মিয়া। খুনী আসামী ৭ জনের বাড়ীই পলাশ উপজেলার গালিমপুর গ্রামে।

এদিকে সামসুল হকের পুত্র জহিরুলকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অপরাধে অপর ৫ জনকে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

চাঞ্চ্যলকর খুনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট না থাকায় অপর ১৩ জনকে বিজ্ঞ বিচারক বেকসুর খালাস প্রদান করেন।

নিহত কাঠমিস্ত্রি সামসুল হক পলাশ উপজেলার গালিমপুর গ্রামের বাসিন্দা।

মামলার বিবরণীতে জানা যায়, জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে নিহত সামসুল হকের সঙ্গে প্রতিবেশী আলেক মিয়া ও গাফফারের দীর্ঘদিন যাবৎ দ্বন্ধ  চলে আসছিল।

এ নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা-পাল্টি মামলা করেন। এরই জের ধরে বিভিন্ন সময় মামলার আসামিরা অব্যাহতভাবে নিহত সামসুল হককে ভয়-ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে আসছিল।

২০০৯ সালের ৩১ আগস্ট রাতে নিহত সামসুল হকের পুত্র জহিরুল ইসলাম বাড়ি ফেরার পথে  আসামি মারফত, শরীফ, আরিফ, জহিরুল তার পথ রোধকরে  মারধোর করতে থাকে। এ সময় তার চিৎকারে বাবা সামসুল হক ঘটনাস্থলে এগিয়ে যায়। ওই সময় আসামিরা বাবা-ছেলেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে।

আসামীরা বাবা ও ছেলেকে কুপিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় পাশের একটি গর্তে ফেলে রেখে চলে যায়। খবর পেয়ে স্বজন ও আশ-পাশের লোকজন ছুটে এসে সামসুলকে মৃত ও জহিরুলকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরবর্তীতে তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার সামসুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নূরজাহান বেগম বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে পলাশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে দায়েরকৃত মামলায় পলাশ থানা পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক ও মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে অভিযুক্ত ৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় নরসিংদীর বিজ্ঞ আদালতের বিচারক এ রায় দেন ।

রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন, এম.এ.এন অলিউল্লাহ। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন, অ্যাডভোকেট শওকত আলী পাঠান।