নরসিংদীতে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে দৃষ্টিনন্দন রাম্বুটান ফল

নরসিংদীতে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে দৃষ্টিনন্দন রাম্বুটান ফল

এম এ সালাম রানা, নরসিংদী প্রতিনিধিঃ  রাম্বুটান বিদেশি ফল। ফলটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ ও পাকলে লাল বা গোলাপি রং ধারণ করে। ফলের ওপরের খোসা ফেলে দিলে ভেতরের অংশটা দেখতে লিচুর মতো, স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। রসালো ও সুস্বাদু। গায়ে কাটাযুক্ত এই ফল দেখতে অনেকটা কদম ফুলের মতো। এই ফলটির জন্মস্থল মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলে। এখন নরসিংদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় খ্যাতনামা লটকন ফলের পাশাপাশি রাম্বুটান নতুন করে কৃষকদের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

নরসিংদীর শিবপুরের অষ্টআনী গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন রাম্বুটান চাষ করে সফল হয়েছেন। ২০০৬ সালে চাকরি শেষে  ব্রুনাই থেকে ফেরার সময় তিনি সঙ্গে নিয়ে আসেন ১ কেজি রাম্বুটান ফল। খাওয়ার পর নিজ বাড়ির আঙ্গিনায়  বীজ বপন করেন। এই বীজ থেকে চারা গজিয়ে উঠলে আশার আলো দেখতে পান তিনি।
পরীক্ষামূলক বাড়ির আঙ্গিনায় লটকন বাগানে ১৭টি চারা রোপনের পর বেড়ে উঠে ৭টি গাছ। ৬ বছর পর ২০১২ সালে প্রথমবারের মত তার ১টি গাছে ফলন আসে রাম্বুটানের। প্রথমবার পরিবারের সদস্যরাই ফলগুলো খেয়ে ফেলেন। দ্বিতীয় বছর ১টি গাছ থেকে রাম্বুটান বিক্রি করেন ১০ হাজার টাকার। তৃতীয় বছর মোট ৩টি গাছে ফলন ধরলে বিক্রি করেন ৫০ হাজার টাকার। চতুর্থ বছর ৩টি গাছ থেকে বিক্রি করেন ৬০ হাজার টাকার ফল। চলতি বছর তার ৫টি গাছ থেকে লক্ষাধিক টাকার রাম্বুটান বিক্রি করছেন জামাল উদ্দিন।

নরসিংদীতে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে দৃষ্টিনন্দন রাম্বুটান ফলজামাল উদ্দিন জানান, দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষনীয় রাম্বুটান ফলটি ধীরে ধীরে পরিচিত হয়ে ওঠায় ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। ফলটি কিনতে ঢাকা থেকে পাইকাররাও আসছেন শিবপুরের বাজারে। স্থানীয় বাজারে রাম্বুটান এখন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করছেন।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের নরসিংদীর শিবপুর আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ কে এম আরিফুল হক জানান, রাম্বুটান ফলটি লিচু পরিবারের। আদি নিবাস মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায়। ফলটির খোসায় হালকা চুলের মতো আবরণে ঢাকা। মালয় ভাষায় ‘রামবুট’ শব্দের অর্থ চুল। তাই অনেকে একে হেয়ারি লিচু, কেউ কেউ ফলের রানিও বলে থাকেন। ফলটির ভেতরে লিচুর মতো শ্বাস থাকে। খেতে সুস্বাদু ও মুখরোচক, রয়েছে ঔষধি গুণও।
আরিফুল হক জানান, রাম্বুটান ফলের শত্রু বাদুড়, ইঁদুর ও পাখি। এ জন্য গাছে জাল দিয়ে পেঁচিয়ে দিতে হয়। আষাঢ়ের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ফল গাছে থাকে। গাছভেদে ৫০ থেকে ১০০ কেজি ফল পাওয়া যায়।

এদিকে জামাল উদ্দিনের উদ্যোগের ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে উৎসাহ। অনেকে এই ফলের গাছ দেখতে এবং এর চাষ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে জামালের বাড়িতে আসেন। লাভজনক বিদায় এলাকার অনেক চাষিই  এ ফল চাষে  দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এরই মধ্যে স্থানীয় নার্সারিগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছে রাম্বুটানের চারা। সেখান থেকেও চারা সংগ্রহ করছেন আগ্রহী কৃষকরা। রাম্বুটান চাষ করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন জামাল উদ্দিনসহ এলাকার অন্যান্য চাষীরা।
অষ্টআনী গ্রামের কৃষক রজব আলী জানান, তিনিও বেশকিছু রাম্বুটান চারা রোপন করেছেন। আরেক কৃষক মজনু মিয়া জানান, তিনিও রাম্বুটান চাষ শুরু করেছেন। তিনি চলতি বছর ১০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেন তিনি।

কৃষি বিভাগ বলছে, নরসিংদীর উঁচু বা টিলা এলাকায় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে রাম্বুটান। নরসিংদীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. লতাফত হোসেন জানান, এতে নতুন সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। রাম্বুটান চাষ সম্প্রসারণের জন্য জেলাব্যাপি কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘জামাল উদ্দিনের সফলতা দেখে এখানকার অনেক কৃষক রাম্বুটানে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাচ্ছি রাম্বুটান ফলটি যাতে নরসিংদীতে ব্যাপক ভাবে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যায় এবং সবাই যেন জামাল উদ্দিনের মতোই সফলতা অর্জন করতে পারে।’