নরসিংদীর গাবতলীতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আটক সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নেয়া হবে

নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদী শহরতলীর গাবতলী উত্তরপাড়ার এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে  বিকেল ৪টা থেকে একটি বাড়ি ঘিরে রাখে র‌্যাব। দুবাই প্রবাসী মাইনউদ্দিনের নির্মাণাধীন দোতলা বাড়িটি র‌্যাব-১১ বাড়ীটি ঘেরাও করার পর এলাকাসহ সারা নরসিংদীর জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। রোববার সকাল ১০ টায় বাড়ীর ভিতরে থাকা একে একে ৫ জন সদস্যকে বের করে নিয়ে আসে র‌্যাব।

র‌্যারের পরিচালক মিডিয়া উইং লেঃ কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  তিনি জানান, জঙ্গি সন্দেহে ওই বাড়িটি আমরা বিকাল চারটা থেকে ঘিরে রেখেছি। আমরা সন্দেহ করছি, বাড়িটিতে নাসকতা মূলক কর্মকাণ্ড ঘটনোর জন্য ৫-৬ জন জঙ্গি রয়েছে। শনিবার রাত ৮টায়  র‌্যাব ১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান ঘটনা স্থলে এসে পৌছেন।

শহর থেকে কিছু দূরে জামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসার কাছে একটি কবরস্থানের পাশে একতলা ওই বাড়িটি গত ৩ মে তিন অবিবাহিত পুরুষ ভাড়া নেন বলে ঘটনাস্থলে বাড়ির মালিকের ভাই জাকারিয়া সাংবাদিকদের জানান।

তিনি বলেন, “তাদের পরিচয়সম্বলিত ফরম থানায় দেওয়া হয়েছে। আজ আরও দুইজন ওই বাসায় ওঠে। তাদের তথ্য জানানো হয়নি।”
এদিকে, নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, অভিযানটি র‌্যাবের। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমাদের পুলিশ সদস্যরাও সেখানে রয়েছে।
তবে সর্বশেষ রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত র‌্যাব বাড়ীর মালিক প্রবাসী মঈন উদ্দিন আহমেদের ছোট ভাই জাকারিয়াকে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।

এদিকে রাত ১০টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে র‌্যাবের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ঘটনা স্থলে এসে হাজির হয়েছেন। পরক্ষণই সাংবাদিকরা তাদের কাছ থেকে জঙ্গী আস্তানায় অপারেশন কখন কিভাবে চালানো হবে জানতে চাইলে র‌্যারের পরিচালক মিডিয়া উইং লেঃ কমান্ডার মুফতি মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ইতোমধ্যে র‌্যাব দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি জঙ্গী  আস্তানায় অপারেশন পরিচালনা করে জঙ্গী দমনে সাফল্য অর্জন করেছে। তার মধ্যে আতিয়া মহল একটি। গোপন সংবাদের ভিত্তি র‌্যাব-১১ জানাতে আতিয়া মহলের কয়েকজন জঙ্গী সদস্য ঢাকা দিকে অগ্রসর হচ্ছেন এবং ঢাকার আশে পাশেই তারা অবস্থান নিচ্ছে। পরে র‌্যাব-১১ জানতে পারে নরসিংদী গাবতলীর জামেয়া কাশেমিয়া মাদ্রাসা এলাকায় দুবাই প্রবাসী মাইন উদ্দিনের বাড়ীতে কয়েকজন জঙ্গী অবস্থান করছে। তার ভিত্তিতেই শনিবার বিকাল ৪টায় র‌্যাব-১১ বাড়ীটি ঘিরে ফেলে। আমরা ধারনা করছি যে, বাড়ীর ভিতরে ৪/৫জন স্বশস্ত্র জঙ্গী রয়েছে। এখনো পর্যন্ত আমরা বাড়ীটি ঘিরে রেখেছি জঙ্গীদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। যোগাযোগ করতে পারলে আমরা তাদেরকে আত্মসমর্পণের আহবান জানাবো।

অপরদিকে বাড়ীর ভিতরে থাকা জামিয়া কাশেমিয়া মাদ্রাসার ১০ম শ্রেণীর ছাত্র মাসুদুর রহমানের ভগ্নীপতি আজহার ইবনে মাসুদ সাংবাদিকদের জানান, তার শ্যালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একজন ছাত্র আবু জাফরের কাছে প্রাইভেট পড়তে শনিবার বিকেলে ওই বাড়ীতে যায়। পরবর্তীতে সে এখানে আটকা পড়ে। তিনি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মাসুদুর রহমানের মোবাইলে ফোন করে যোগাযোগ স্থাপন করলে তার মারফতে জানা যায় বাড়ী ভিতরে সে ছাড়াও তার শিক্ষক আবু জাফর সহ আরও ৪জন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়–য়া ছাত্র রয়েছে। তারা হলেন নরসিংদী সরকারী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র মশিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সালাউদ্দিন ও নরসিংদী সরকারী কলেজের মাস্টার্স এর ছাত্র বাশিরুল। মাসুদুর রহমান জানায় ভিতরের সকলেই ছাত্র তারা কেউ জঙ্গী তৎপরতার সাথে জড়িত নহে। তাদের কাছে কোন আগ্নেয়াস্ত্র বা গোলাবারুদ নেই। তারা সকলে আত্ম সমর্পণ করতে প্রস্তুত।

নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ, কে এম ফয়জুল হক জানান, এখনো পর্যন্ত পরিস্থিতি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা সাপেক্ষে নির্দিষ্ট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারী করা হতে পারে।

রবিবার সকাল ৯টায় র‌্যারের পরিচালক মিডিয়া উইং লেঃ কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের জানান, বাড়ীর ভিতরে থাকা সদস্যরা আত্মসমর্থন করতে রাজি হয়েছেন। আত্মসমর্থনের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। বাড়ী ভিতরে থাকা সদস্যদের বের করে আনার পর র‌্যাব সদস্যরা পুরোবাড়ী তল্লাসী চালাবে বলে তিনি জানান। এর আগে তাদেরকে শনাক্ত করার জন্য তাদের স্বজনদের ঢেকে আনা হয়েছে।
পরে ১০ টায় বাড়ীর ভিতরে থাকা একে একে ৫জন সদস্যকে বের করে নিয়ে আসে র‌্যাব।

বাড়ীর ভিতরে থাকা সদস্যদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আবু জাফর নরসিংদী সরকারী কলেজ’র গনিত বিভাগ থেকে পাশ করে বের হয়েছেন। সে ওই এলাকায় অংকের মাস্টার হিসেবে পরিচিত। মশিউর রহমান নরসিংদী সরকারী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। বাশিরুল নরসিংদী সরকারী কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যায়ণরত।  সালাউদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়ণরত। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাদ্রাসায় গ্রেস্ট টিচার হিসাবে শিক্ষকতা করেছে। গত ৩ মাস যাবৎ তিনি ওই এলাকায় বসবাস করছেন বলে স্বজনরা জানায়। বাড়ীর অপর সদস্য মাসুদুর রহমান গাজিপুরের বোর্ড বাজার এলাকার বাসিন্দা। সে নরসিংদীর গাবতলী এলাকার জামিয়া কাশেমিয়া মাদ্রাসার ১০ম শ্রেণীর ছাত্র।

এর আগে গতরাত ১১টার পরপর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই বাড়ীর আশপাশে ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।