নরসিংদীর শিবপুর মডেল থানার ওসিসহ ৬ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

নরসিংদী প্রতিনিধিঃ নরসিংদীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শিবপুর মডেল থানার ওসিসহ ৬ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ৫ সেপ্টেম্বর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শিবপুর সি.আর. মামলা নং ৪১০/১৭ । মামলাটি দায়ের করেছেন শিবপুর উপজেলার উত্তর সাধারচর গ্রামের দিনা বেগম।
মামলার বিবরণে জানা গেছে শিবপুর মডেল থানার কতিপয় পুলিশের যোগসাজসে এবং এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তির দ্বারা প্ররোচিত হয়ে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে গ্রেফতার নাটক সাজিয়ে বাদীনির স্বামী আওলাদ হোসেনসহ আরো ৪ জনকে গ্রেফতার ও অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে আওলাদ হোসেনকে হত্যা করে লাশ গুম করার অভিযোগ এনে নরসিংদীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আসামী করা হয়েছে শিবপুর মডেল থানার এ.এস.আই মো. সুমন মিয়া, এস.আই মো. ফরিদ উদ্দিন, এ.এস.আই আব্বাছ আলী, কং শরিফুল ইসলাম, কং ফরিদুজ্জামান ও শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সৈয়দুজ্জামান। বিজ্ঞ আদালত ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নরসিংদীর পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট বাদীনির স্বামী একই গ্রামের প্রতিবেশি আমেরিকা প্রবাসী ফরিদা পারভিনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে রাতের খাবার শেষে প্রতিবেশি টুটুল খানের সাথে শুয়ে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু বাদিনী থানায় গিয়ে তার স্বামীকে না পেয়ে এ.এস.আই মো. সুমন মিয়াকে জিজ্ঞাসা করলে জানায় আওলাদ হোসেন পালিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে শিবপুর মডেল থানা পুলিশের দাবী গত ২৭ আগস্ট কুখ্যাত ডাকাত মো. আওলাদ হোসেন হাতকড়া সহ পালিয়ে গেছে। ডাকাতির উদ্দেশ্যে উপজেলার বীরখুপী গ্রামে আমেরিকা প্রবাসী ফরিদা পারভীনের পরিত্যাক্ত বাড়িতে উত্তর সাধারচর গ্রামের মৃত আলফাজ উদ্দিন ওরফে আফাজ উদ্দিনের ছেলে কুখ্যাত ডাকাত মো. আওলাদ হোসেন গাজীপুরের কালিঘাটের এলাকার মামুন ও টুটুল সহ ১০/১১ জনের সংঘবদ্ধ ডাকাতদল অবস্থান করছে, গোপন সংবাদ পেয়ে শিবপুর মডেল থানার এ এস আই সুমন, আব্বাস, ২ জন কনস্টবলসহ রাত সাড়ে ৭ টায় বাড়ি ঘেরাও করে। উপরোক্ত ৩ জনকে দেশিয় অস্ত্রসহ আটক করে। অপর ডাকাতরা এ সময়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ ও ডাকাত সহ ৭ জন একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সাযোগে ঠাসাঠাসি করে আসতে থাকে এবং স্পেশাল ডিউটিতে থাকা এস আই ফরিদকে বিষয়টি অবগত করেন এ এস আই সুমন। ফরিদ তাদেরকে আনার জন্য এগিয়ে যায় এবং শিবপুর শহিদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের পশ্চিম পার্শে গেলে উভয়ের মধ্যে দেখা হয়। এ সময় আসামী টুটুল ও মামুনকে সিএনজিতে পাঠিয়ে এবং আওলাদ দুর্ধর্ষ হওয়ায় এ এস আই সুমন ও আব্বাস ডবল কেবিন সরকারি গাড়িতে উঠানোর সময় ডাকাত আওলাদ সুমনের গোপনাঙ্গে চেপে ধরলে সুমন জ্ঞান হারায়, অপর এ এস আই আব্বাসকে কিল ঘুষি দিয়ে ধাক্কা মেরে হাতকড়া সহ দক্ষিণ পাশের জঙ্গল দিয়ে ডাকাত আওলাদ পালিয়ে যায়। আব্বাসের ডাকচিৎকারে গাড়িতে থাকা এস আই ফরিদ ও আব্বাস আওলাদকে খোঁজা খুঁজি করে। না পেয়ে সুমনকে নিয়ে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা করায়। এ বিষয়ে শিবপুর মডেল থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি ও হ্যান্ডকাপ সহ পালানোর ঘটনায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-২৬(৮)১৭ ধারা ৩৯৯ পেনালকোড এবং ২৭(৮)১৭ ধারা ২২৪/৩৩২। কুখ্যাত ডাকাত আওলাদের বিরুদ্ধে শিবপুর মডেল থানায় পূর্বেও ৯টি মামলা বিচারাধিন অবস্থায় রয়েছে মামলা নং-৩০(০৩)১৬ ধারা ৩৯৫/৩৯৭/৪১২ পেনাল কোড, ১৮(০৭)১৫ ধারা, ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড, ৩১(০৮)১৪ ধারা ৩২৩/৩৬৪-ক/৩০৭/৩৭৯/৫০৬ পেনাল কোড, ৩৩(০৫)১৪ ধারা ১৪৩/৪৪৭/৪২৭/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩৫৪/৩৭৯/৫০৬ পেনাল কোড, ২৫(০৫)১৪ ধারা ১৪৩/৩২৬/৩৪/৩৬৪-ক, ৫১১ পেনাল কোড, ১০(১১)১০ ধারা-১৯(অ) অস্ত্র আইন, ০৭(০৮)১০ ধারা-১৯(অ) অস্ত্র আইন, ০১(১২)১৫ ধারা ৩৯৫/৩৯৭ পেনেল কোড।

এ বিষয়ে শিবপুর মডেল থানার ওসি মো. সৈয়দুজ্জামানের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন কুখ্যাত ডাকাত আওলাদকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বিমান বন্দরসহ দেশের সকল থানায় বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে।