নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে গণতন্ত্র’র বদলে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নায়ক তৈমূর

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ বিএনপি থেকে ‘গণতন্ত্র’ উধাও করে ‘পরিবারতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার জন্য জেলা বিএনপি’র সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকারকে দায়ী করেছে বিএনপি’র তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তারা তৈমূরমুক্ত নতুন কমিটি ঘোষনার দাবী জানিয়েছে। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ণ না করে নিজের পরিবারের লোকদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করার রীতি চালু করা তৈমূরের কারনে দীর্ঘদিনেও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কোন কমিটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি বলে অভিমত তাদের। আর তাই নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র ‘বিষফোড়া’ তৈমূরকে বাদ দিয়েই কমিটি ঘোষনা সময়ের দাবী বলে মনে করেন তারা।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র ৭ জনের কমিটি পার করে দিয়েছে ৮ বছর। এখনও পূর্নাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ দেখেনি। আর এ জন্য জেলা সভাপতি এ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি আর দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ইচ্ছাকৃত কোন্দল ও বিভাজন সৃষ্টি করে রাখাকে দায়ী করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

তারা মনে করেন, এ্যাডভোকেট তৈমূর নিজেকে বড় প্রমাণের স্বার্থে অন্য নেতাদের সাথে একটা দুরত্ব সৃষ্টি করে রেখেছেন। আর এ ফাঁকে নিজের পরিবারের সদস্যদের একের পর এক রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে চলেছেন। তৈমূর গণতন্ত্রের চেয়ে পরিবারতন্ত্রের প্রতি বেশী মনোযোগী হওয়ায় এখনও পর্যন্ত জেলার পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা সম্ভব হয়নি বলে অভিমত তাদের। আর অবিলম্বে তৈমূরের এ স্বজনপ্রীতির রাজনীতি বন্ধ করে প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে জেলা কমিটি ঘোষনার জন্য কেন্দ্রের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক বিএনপি কর্মী ক্ষোভের সঙ্গে জানান, বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যারা এ দলের বিপদে আপদে জীবন বাজি রেখে লড়াই করে গেছেন, সে সকল ত্যাগী নেতাদের সাথে তৈমূরের একটা অদৃশ্য বিরোধ চলমান। কারো সাথেই তার সুসম্পর্ক নেই। শুধুমাত্র তার পরিবার ও এলাকার কিছু পোষ্য নেতাকর্মীদের দিয়ে নিজ বাড়িতে বসে দল পরিচালনা করে নিজেকে অনেক বড় নেতা মনে করেন তিনি। বাকীদের করেন তুচ্ছতাচ্ছিল্য। অথচ এদের অনেকে তার আগে থেকেও বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তৈমূরের এই পরিবারতন্ত্রের অবসান না হওয়া পর্যন্ত জেলা বিএনপি’র পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন হবে না। এই ভাঙ্গাচোরা কমিটি দিয়েই চলবে দলীয় কার্যক্রম।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির পর সারাদেশের মত নারায়নগঞ্জ বিএনপি ও শত ধারায় বিভক্ত হয়ে পরে এবং সবাই নিজেদের মূলধারা দাবী করে অন্যদের বিদ্রোহী গ্রুপ হিসেবে আখ্যায়িত করতে থাকে। এমতাবস্থায় ২০০৯ সালের ২৫ শে নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের চুনকা স্মৃতি মিলনায়তনে  এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সমর্থিত গ্রুপের আয়োজনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে  এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে জেলার সভাপতি ও কাজী মনিরকে সাধারন সম্পাদক ঘোষনা করেন এবং এই দুইজনকে দায়িত্ব দেন ৯০ দিনের মধ্যে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দেওয়ার জন্য।

এরপর এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও কাজী মনির মিলে শাহ আলমকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, বদিউজ্জামান খসরুকে সহ সভাপতি, আবু জাফর ও আনোয়ার হোসেন খানকে যুগ্ম সম্পাদক এবং আজাদ বিশ্বাসকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে একটি কমিটি কেন্দ্রে জমা দেন। কিন্তু নারায়লগঞ্জ বিএনপি’র  তৃনমূল নেতাকর্মীরা এই কমিটিকে তৈমূর-কাজী মনিরের পকেট কমিটি আখ্যা দিয়ে এবং এই কমিটিতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র  ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি দাবী করে এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে। বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বও তৃনমূলের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে এই কমিটিকে অনুমোদন দেওয়া থেকে বিরত থাকে। সেই থেকে আজও পর্যন্ত কমিটিবিহিন চলছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি এবং এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার স্বঘোষিত সভাপতি ও কাজী মনির স্বঘোষিত সাধারন সম্পাদক  হিসেবে নিজেকে জাহির করে আসছেন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসা নারায়ণগঞ্জ  বিএনপি ২০০৯ সালের এই ঘটনার পর থেকেই ব্যাকফুটে চলে যায় এবং অদ্যবধি আর কোমর সোজা করে দাড়াতে পারেনি। আর এজন্য এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও কাজী মনিরের স্বেচ্ছাচারিতাকে দায়ী করেন দলের সাধারন নেতাকর্মীরা। তৃনমূল নেতাকর্মীদের দাবী দলকে সংগঠিত করার পরিবর্তে তারা দলের মধ্যে ইচ্ছাকৃত কোন্দল সৃষ্টি করে রেখেছেন  যাতে করে নতুন নেতৃত্ব তৈরী হতে না পারে আর তারা আজীবন দুধের সর খেয়ে পানিটা বিতরন করে যেতে পারেন।

দলের তৃনমূল নেতাকর্মিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে রাজপথে সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে সরকারী দলের হামলা মামলায় জর্জরিত হয়ে সাধারন নেতা কর্মিদের একটা অংশ কারাগারে বাকিরা দেশে বিদেশে পালিয়ে যাযাবর জীবন যাপনে বাধ্য হয়। এতো দীর্ঘ সময় রাজপথে থাকায় সামাজিক, রাজনৈতিক সর্বোপরি অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে  তৈমূর ব্যস্ত ছিলেন পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করায় আর কাজী মনির সরকারী দলের সাথে আঁতাত করে ইত্যবসরে নিজের আখের গুছিয়েছেন- এমনটাই দাবী নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মিদের। আর তাই ২০০৮ সালে বিভক্ত জেলা কমিটির পূনর্গঠন আট বছরেও আলোর মুখ দেখেনি বলে মনে করেন তারা। তাদের দাবী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান অচিরেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র জেলা কমিটির দিকে সুনজর দেবেন এবং প্রকৃত জিয়ার সৈনিকদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিবেন যারা শত ধারায় বিভক্ত নেতাকর্মিদের এক সুতায় গেথে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র  হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবেন।